ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বইমেলা

বইমেলায় তসলিমার বই নিয়ে স্টলে উত্তেজনা, যা হয়েছিল 

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
বইমেলায় তসলিমার বই নিয়ে স্টলে উত্তেজনা, যা হয়েছিল 

ঢাকা: একুশে বইমেলায় ভারতে নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ‘চুম্বন’ বই রাখা ও বিক্রির অভিযোগে ‘সব্যসাচী’ নামে একটি স্টলে হট্টগোল ও বাগবিতণ্ডা হয়েছে।  

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২৮ নম্বর স্টলে এ পরিস্থিতি তৈরি হলে সব্যসাচী নামের স্টলটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ স্টলের প্রকাশক শতাব্দী ভবকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
 
বর্তমানে স্টলটিতে একটি কাগজ ফেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

ঘটনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক সব্যসাচী স্টলের সামনে গিয়ে প্রকাশক শতাব্দী ভবের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে দুপক্ষই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এসময় যুবকরা  শতাব্দী ভবকে আওয়ামী লীগের দালাল কি না জিজ্ঞেস করেন। একদিকে তারা ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দেন অন্যদিকে শতাব্দী ভব ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়েছিল। পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ স্টলের সামনে থেকে শতাব্দীকে সরিয়ে নেয়। কিন্তু সেই মুহূর্তে শতাব্দী সেখানে এক যুবককে থাপ্পড় মেরে বসেন।  

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়ার ছাত্র কাজী মাযহরুল ইসলাম বলেন, গতকাল আমরা জানতে পেরেছি, সব্যসাচী নামের স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই পাওয়া যায়। তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগ। প্রতিদিন ফেসবুকে ড. ইউনূস সরকারকে সন্ত্রাসী-জঙ্গি বলে আসছেন। এরপর আমরা ফেসবুকে এ বিষয়ে লিখেছি। পরে প্রশাসনের কথায় সে বই সরিয়ে ফেলা হয়।  

তিনি বলেন, আমরা দেখলাম, তিনি (শতাব্দী ভব) আজ একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেন, ‘উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদে’র চাপে পড়ে বইমেলা থেকে বই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই আমরা কয়েকজন আজ এসে তাকে এ প্রশ্ন করেছি যে কীসের ভিত্তিতে আমাদের উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ বলা হলো।

তিনি বলেন, তিনি (শতাব্দী) নিজেও আওয়ামী লীগ। আমরা যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলাম, তখন তিনি জয় বাংলা, মৌলবাদ নিপাত যাক এসব স্লোগান দেন। তখন প্রশাসন আসে এবং বিস্তারিত দেখেছে, সেখানে যেন কোনো মব সৃষ্টি না হয়। আমরা সেটা থামাতে পেরেছি।

এসময় ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম। তিনি বলেন, এ ঘটনা আমরা যাচাই-বাছাই করছি। শিক্ষার্থীকে চড় মারা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছি। বইমেলায় আতঙ্ক ছড়ানোর সুযোগ নেই। এখানে কোনো ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। এরপর শতাব্দী ভব আবার সবার সামনে আসেন এবং ক্ষমা চান। পরে পুলিশ তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

ঘটনাটির আগেই আজ নিজের 'মাতাল ভব' নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক ভিডিওতে শতাব্দী ভব বলেন, আজ থেকে তসলিমা নাসরিনের বই ‘চুম্বন’ বইমেলা থেকে নিষিদ্ধ হলো এবং তসলিমা নাসরিনও বইমেলা থেকে নিষিদ্ধ হলো।

এছাড়া তাকে আরও উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে শোনা যায়।

এ ঘটনা নিয়ে বইমেলা টাস্কফোর্সের সচিব সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, সেখানে মব থামানোর জন্য সাময়িকভাবে স্টলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হলে আপনারা জানতে পারবেন।

বইমেলায় সব্যসাচী স্টল নিষিদ্ধ করার দাবি
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে এক পোস্টে মাযহারুল ইসলাম বলেন, আজকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করবেন না। আমরা আজ সৎ উদ্দেশে গেলেও সে আমাদের ফাঁদে ফেলতে চেয়েছে! সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা চাই, এটার সুষ্ঠু সমাধান। তারা নিঃসন্দেহে দোষী। সেটা সবাই স্বীকার করছে! আমাদের সামান্য ভুলের কারণে তাদের দোষ এড়িয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই! 

তিনি বলেন, এতোদিন তো জানতেনই না এমন প্রকাশক মেলায় ঘুরে বেড়ায়। প্রকাশক আওয়ামী লীগ। প্রকাশক জয় বাংলার লোক। তার স্টলে তসলিমা নাসরিনসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগপন্থি লেখকদের পুষে রাখছেন! এটা কখনোই কাম্য নয়! তাদের এ দাপট না ভাঙতে পারলে আমাদের দুই হাজার ভাইবোনের জীবন দেওয়া বৃথা!

তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্ষোভ জয় বাংলার স্লোগানের প্রতি। আমাদের ক্ষোভ খুনির সহযোগী সব আওয়ামী লীগের প্রতি! আর কিছুই না! সুতরাং আমাদের ভুল না বুঝে আপনারা আমাদের দাবির পক্ষে থাকবেন!

তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বাম সংগঠনের
এদিকে বইমেলায় প্রকাশকের ওপর ‘মব’ তৈরির অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে মিছিল করেছেন বাম সংগঠনের শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে মেলা প্রদক্ষিণ করে সব্যসাচী স্টলের সামনে বক্তব্য দেন।

এসময় তারা ‘বইমেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’, ‘বইমেলায় হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব দাও’, ‘মবতন্ত্রের আস্তানা, বাংলাদেশে হবে না,’ ‘অভিজিৎ, দীপন, লাগবে আর কতজন’সহ একাধিক স্লোগান দেন।  

এসময় বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আজ একটি নির্লজ্জ ঘটনা ঘটেছে। আমরা শুরু থেকে বলেছি, বইমেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ নাজুক। এ হামলার আগে একটা গোষ্ঠী গতকাল থেকে অনলাইনে হামলার পাঁয়তারা চালিয়েছে। কিন্তু প্রকাশনীর নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু তারা হামলা করে বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি। আজ শাহবাগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর কীভাবে হামলা চালানো হয়েছে। অথচ যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে তারা নির্বিকার থাকে।

তিনি বলেন, আমরা এমন ইন্টেরিম সরকারকে ধিক্কার জানাই। অধ্যাপক আজম বাংলা একাডেমির পরিচালক হওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম, তার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। কিন্তু তার নেতৃত্বে দেখতে পেলাম, নির্লজ্জ ঘটনা ঘটল। তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে মাজার, মন্দিরের মধ্য দিয়ে। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫
এফএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।