ঢাকা: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির কারণে দুটি স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে।
তবে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো মবের কারণে নয়, বরং একুশে বইমেলার নীতিমালা ভঙ্গের কারণে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির স্টল বন্ধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলার নীতিমালা অনুযায়ী, এখানে বই এবং খাবার ছাড়া অন্য কোনো পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। তারা নিয়মের বাইরে গিয়ে ভিন্ন পণ্য বিক্রি করছিল বিধায় স্টল বন্ধ করা হয়েছে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে বইমেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, ওয়াশরুমের পাশে ওই কোম্পানি কিছু স্যাম্পল বিনামূল্যে দেবে। কিন্তু দেখা গেল, তারা বিক্রি শুরু করেছে। যেটি বাংলা একাডেমির নীতিমালার সঙ্গে যায় না। বইমেলার ঐতিহ্যের সাথে যায় না। ফলে, কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখানে বিক্রি করা যাবে না।
তিনি বলেন, কারও আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বন্ধ করিনি। কে কী বলেছে তা আমাদের কাছে ইস্যু না। আমরা আমলে নেইনি। তবে এটা বইমেলার নীতিমালার লঙ্ঘন।
আবারও বিনামূল্যে বিতরণ করতে চাইলে সে সুযোগ দেওয়া হবে কী না, জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, তাদের আর সুযোগ দেওয়া হবে না। যেহেতু তারা এক ধরনের প্রতারণা করেছে।
বইমেলার শুরু থেকেই নারী ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের ব্র্যান্ড ‘স্টে সেইফ’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দুটি স্টল পরিচালনা করছিল। আজ স্টল দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেলে স্টল দুটির সামনে কালো কাপড় নামিয়ে দেওয়া হয়।
স্টল বন্ধ করে দেওয়ার আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘স্টে সেইফ’ এর মূল প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কাছে একটি চিঠি দেয় বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ ড্রিমার ডংকি প্রাইভেট লিমিটেড। চিঠিতে ওই দুই স্টলে অন্য পণ্য (যেমন শিশুশিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড্রিমার ডংকি প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলায় সাধারণত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত পণ্য থাকে। আগে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ থাকতো। কিন্তু বইমেলায় কখনো স্যানিটারি ন্যাপকিন ছিল না। আমরা একটা জরিপ করে দেখলাম, অনেকের প্রয়োজন হয়। সে জায়গা থেকে আমরা ভাবলাম থাকলে ভালোই হয়। আমাদের মার্কেটিংও হলো। কেউ কিনতে চাইলে কিনতে পারলো। এটা আমাদের একটা ফ্রি স্যাম্পলিং ছিল। কেউ যদি কিনতে চায়, আমরা তো বাধা দিতে পারব না। বইমেলায় ওয়াশরুমের সঙ্গে ছিল স্টল; ভেতরে না।
তিনি বলেন, কিন্তু সারা দেশের যা অবস্থা। আওয়ামী লীগ নানাভাবে ফিরে আসতে চাচ্ছে। কখনো আনসার হয়ে কখনোবা হুজুর হয়ে ফিরে আসতে চায়। কোনো একটা ইস্যু তৈরি করে তারা সংঘাত বাঁধাতে চায়। কিছু মানুষ এই স্টল নিয়ে আপত্তি করেছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারী থাকে। তারা জানিয়েছে। তারা অনেকে আমাকেও বলেছে। আমি তো মাঠে থাকি। তারা আমার পরিচয় জানে না। তারা বলেছে, এটা রাখা কি ঠিক? এটা কেন বিক্রি করছে? যেন এটা নিষিদ্ধ পণ্য, ইজ্জত চলে যাচ্ছে, এরকম কথাবার্তা। তবে তারা কোনো গোষ্ঠী নয়। ইনডিভিজুয়াল মানুষজন।
রাকিব হাসান বলেন, এসবের পর আমরা আমরা বাংলা একাডেমির সঙ্গে বসলাম। ব্যাপারটিতো খুবই সংবেদনশীল। কখন মব ঘটে যায়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, কোনো ঝামেলায় যাব না। তাই আমরা প্রাণকে একটি কনফিডেনশিয়াল (গোপনীয়) চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এই ঘটনা এখন ইস্যু হয়ে গেছে। ধরুন, দুজন লোক যাদের দাড়ি আছে; বলল যে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো যাবে না। পুরো ইসলামী জনগণ কি এটা মনে করে? আপনারা ইনডিভিজুয়াল লোকের দায় তো পুরো ইসলামের ওপর চাপাতে পারেন না। কিন্তু এটাকে এখন এভাবে ইস্যু করা হচ্ছে। আমরা কেবল নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্কতামূলক চিঠি দিয়েছি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে দেওয়া চিঠিতে ‘ইসলামিস্ট’ শব্দ উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলামিস্ট গ্রুপ’ না লিখে কী লিখব? দাড়ি তো আমারও আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
এফএইচ/এইচএ/