ঢাকা: বরাবরের মতো এবারো ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা’২০১৪। প্রতি বছর এ মেলার পরিধি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠা এ মেলা প্রায় চার দশক পর প্রথমবারের মতো একাডেমি প্রাঙ্গণের বাইরে যাচ্ছে। এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত ভাষা সৈনিক, লেখক, গবেষক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানকে।
নতুন ভবন গড়ে ওঠায় স্থান সংকুচিত হয়ে পড়ায়ই বাঙালির এ প্রাণের মেলাকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া স্থানটিকে মেলার আনুষঙ্গিক ব্যবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে ঘিরে ফেলা হয়েছে আট ফুট উচ্চতার টিনের বেড়া দিয়ে। মূলত এখানেই বসতে যাচ্ছে লেখক-পাঠক এবং প্রকাশকদের মূল মেলা।
গত মঙ্গলবার স্টল বরাদ্দ পাওয়ার পরই প্রকাশকরা স্টলের অবকাঠামো নির্মাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তবে বাকি দুই দিনে নান্দনিকভাবে স্টল সাজানো সম্ভব হবে না বলে জানান তারা।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের একুশে মঞ্চ ও স্টলের অবকাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে স্টলের জন্য রাখা হয়েছে ২০০টি ইউনিট।
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সাহিদা খাতুন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মেলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। ২৩০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্প্রসারিত অংশে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর শিশু কর্নার, লিটলম্যাগ চত্বর, তথ্যকেন্দ্র, মিডিয়া, সেবামূলক সংস্থা, শিল্প-সংস্কৃতি-প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বরাবরের মতো বটতলার নজরুল মঞ্চেই হবে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন।
তিনি জানান, সম্প্রসারিত উদ্যানের অংশে ৪২৯টি ইউনিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি প্রকাশনী পেয়েছে চার ইউনিটের স্টল, তিন ইউনিটের স্টল পেয়েছে ৪১টি প্রকাশনী, দুই ইউনিটের স্টল পেয়েছে ৮৩টি প্রকাশনী এবং এক ইউনিটের স্টল পেয়েছে ৯৫টি প্রকাশনী।
বইমেলার প্রস্তুতি শুরু হওয়ার পর শেষ সময়ে এসে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত এবং কোনো স্পন্সর না থাকায় দুই জায়গায় মেলা আয়োজন করতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান শাহিদা আক্তার।
গত ২৩ জানুয়ারি স্টল বরাদ্দের লটারি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে গত মঙ্গলবার। সম্প্রসারিত স্থানে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন প্রকাশকরা।
শাহিদা খাতুন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবারের মেলায়। একাডেমি প্রাঙ্গণ ও উদ্যানের মেলায় প্রবেশপথে দুইটি করে চারটি আর্চওয়ে থাকবে। মেলার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য থাকছে ৬৫টি সিসি ক্যামেরা।
এছাড়াও সার্বক্ষণিকভাবে ৩৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মেলা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তার জন্য কাজ করবেন।
শাহিদা খাতুন জানান, নতুন ভবনে বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্র ছাড়াও মেলার দুই অংশে আরো দু’টি বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে। পুরোনো সব প্রকাশনার পাশাপাশি এবারের বইমেলায় ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’সহ বাংলা একাডেমির ৪০টি নতুন প্রকাশনা যুক্ত হচ্ছে।
দুই জায়গায় বসলেও পরমাণু শক্তি কমিশন এবং রমনা কালিমন্দিরের গেটের সামনে মেলার মূল তোরণ করা হবে। এছাড়া একুশে মঞ্চের অনুষ্ঠান উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে বড় পর্দায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
মেলার উদ্বোধনী আয়োজন
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করবেন। এর আগে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন।
বাংলা একাডেমির সভাপতি, অ্যামিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কর।
এ অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ফেলোশিপ প্রদান করা হবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুকাভিনয় শিল্পী পার্থপ্রতিম মজুমদারকে এবার ফেলোশিপ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’ তুলে দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সবশেষে মেলা পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৩