ঢাকা: বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ এ বছর সম্প্রসারণ করে বাংলা একাডেমির বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেওয়ায় পাঠক, প্রকাশক, বিক্রেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
মেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের অভিযোগ, এবারের মেলা সম্প্রাসরণ করা হলেও মেলা এবার বেশ অগোছালো।
তবে পাঠক, দর্শনার্থী, প্রকাশকদের সকলেই আশা করছেন, মেলায় এখন পর্যন্ত যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা অতি দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা থেকে মেলা প্রাঙ্গণের প্রবেশমুখে রমনা কালী মন্দিরের একটি বড় বাশের গেট ভাঙা হচ্ছে। ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মূল রাস্তা থেকে একটু পাশের পথ দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তাছাড়া সেখানে মেলার কোনো গেটও করা হয়নি। ফলে বোঝা কষ্টকর যে ভেতরে মেলা হচ্ছে।
রোববার মেলার দ্বিতীয় দিন চললেও এখনও অনেক প্রকাশনার স্টল তৈরি এবং সাজানোর কাজ শেষ হয়নি। মেলার প্রবেশমুখের বাম পাশে তথ্যকেন্দ্রের জন্য স্থান বরাদ্দ থাকলেও তা এখনো চালু করা হয়নি। সন্ধ্যার পর মেলার প্রবেশ মুখে আলো না থাকায় বেশ অন্ধকার মনে হচ্ছিল।
প্রকাশক ও বিক্রেতারা বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে পাবলিক টয়লেট না থাকায় আমাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত এখানে ভালো পানির ব্যবস্থাও করা হয়নি।
বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া মেলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠক-দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে পাঠক-দর্শনার্থীদের পদচারণা বাড়তে থাকে। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠে যেখানে মূলত প্রকাশকদের জন্য স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেখানে ভিড় কিছুটা কম। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সংস্থার স্টলের সামনে পাঠক-দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
মুনিরুদ্দীন শামিম নামে মেলায় আসা একজন দর্শনার্থী বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় স্টলগুলোতে স্টল নম্বর না থাকায় নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। তবে এবার যেহেতু মেলা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাই কিছুটা সীমাবদ্ধতা তো থাকবেই। আশা করি অতি দ্রুত এই দুর্বলতাটুকু কাটিয়ে ওঠা যাবে।
বাবু আহমেদ নামে আরেকজন দর্শনার্থী বলেন, এবারের মেলা বেশ অগোছালো। প্রতি বছর আগে থেকেই মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে এবার মনে হয় প্রস্তুতি কিছুটা দেরিতে নেওয়া হয়েছে। মেলায় তেমন শৃঙ্খলা নেই। গেট দিয়ে ঢোকার সময় মেলার আবহ পাওয়া যায় না। তাছাড়া মেলামুখে কোনো ম্যাপ রাখা হয়নি। ফলে স্টল খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে।
ইত্যাদি প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী আদিত্য অন্তর বাংলানিউজকে বলেন, মেলার পরিসর বাড়ানো হলেও স্টলের সাইজ বাড়ানো হয়নি। আর দুই জায়গায় মেলা রাখার ফলে পাঠক কিছুটা বিভ্রান্ত হতে পারে। মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সন্তোষজনক নয়।
আহমদ পাবলিশিং হাউজের নির্বাহী পরিচালক মুনতাসির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণের দূরুত্ব কিছুটা বেশি হয়ে গেছে। আর মেলা দুই জায়গায় রেখে প্রকাশকদের সাথে কিছুটা বৈষম্য করা হয়েছে। মেলা এক জায়গায় থাকলে ভালো হতো।
তবে অনুপম প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতার ৪২ বছরে প্রকাশকদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি হচ্ছে মেলার সম্প্রসারণ। এটা আমাদের অনেক দিনের দাবি ছিল। বাঙালির সবচেয়ে দীর্ঘ উৎসব হচ্ছে অমর একুশের বইমেলা। আর এর জন্য একটি স্থায়ী জায়গা থাকবে না তা হতে পারে না। আমি মনে করি, যারা প্রকৃত বইপ্রেমী, মেলা যেখানেই হোক না কেন বই কেনার জন্য তারা মেলা প্রাঙ্গণে আসবে।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বাংলানিউজকে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তো থাকবেই। তবে আশা করছি এখনো যেসব সমস্যা রয়েছে আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই তার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি প্রকাশকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের উচিত আরও কিছুটা উদার হওয়া। বাংলা একাডেমি একা সব আয়োজন করবে আর তারা শুধু এখান থেকে লাভ করে যাবে তা হতে পারে না।
এদিকে আজ মেলায় এসেছে বরেণ্য লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা প্রথম কবিতার বই ‘ভয় কিংবা ভালোবাসা’। বইটি প্রকাশ করেছে অনুপম প্রকাশনী। বইটিতে মোট ২১টি কবিতা রয়েছে।
তবে তথ্যকেন্দ্র এখনো সম্পূর্ণভাবে চালু না হওয়ায় প্রকাশিত বইয়ের তালিকা পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪