মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: হালকা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হিম হিম আবহাওয়ায় নির্ধারিত সময় থেকে বেশ জমে ওঠে অমর একুশে বইমেলা। গরম কাপড় গায়ে জড়িয়ে পাঠক, বইপ্রেমীরা ছাতা নিয়ে আসেন মেলা প্রাঙ্গণে।
রোববার হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে প্রথমে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিই বাধ সাধে। বিকেল গড়াতেই বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ক্রেতা-পাঠক, দর্শনার্থীরা নিরাপদ আশ্রয় নেয়।
সারাদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দুই অংশের মেলা প্রাঙ্গণেই কাদা জমে ওঠে। ফলে মেলা প্রাঙ্গণে নির্বিঘ্নে হাঁটতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। তাছাড়া মেলা শুরুর পর থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সমস্যায় পড়ে স্টলগুলো। সন্ধ্যার পরেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় অনেক প্রকাশনী মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোকিত করে রাখার চেষ্টা করে নিজেদের স্টল।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মেলা প্রাঙ্গণে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও স্টলগুলো বিদ্যুৎসংযোগহীনভাবেই থাকে। তাছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ ফাঁকা হয়ে পড়ায় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সাড়ে ৬টার মধ্যেই অনেক প্রকাশনী স্টল বন্ধ কয়ে দেয়। ফলে একরকম ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয় দুই অংশের মেলা প্রাঙ্গণেই।
সারাদিনের বৃষ্টিতে ভিজে কিছুটা ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় ৩০টি প্রকাশনীর স্টল। এসব প্রকাশনীর মধ্যে রয়েছে অনন্যা, ঐতিহ্য, শ্রাবণ, প্রতিভাষ, আহম্মদ পাবলিকেশনস, বর্ণ বিচিত্রা, ইত্যাদি, ঐক্য, দিব্য প্রকাশ, খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি, অবসর, শোভা।
যোগাযোগ করা হলে ঐতিহ্য প্রকাশনীর নির্বাহী আমজাদ হোসেন কাজল বাংলানিউজকে জানান, আগে থেকে প্রস্তুতি থাকার কারণে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠ স্যাঁতস্যাঁতে থাকায় ক্রেতারা এ অংশে খুব একট আসেনি। তাছাড়া বিকেলের পর কাদা জমে যায়। আর সন্ধ্যায় স্টলে বিদ্যুৎ না থাকায় এক রকম পণ্ডই হয়ে যায় মেলা।
ইত্যাদি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জহিরুল আবেদীন জুয়েল বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে দিনের বেলায় আলো ছিল না। বৃষ্টিতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পাঠক-ক্রেতাদের আমরা বই দেখাতে পারিনি আলোর স্বল্পতার কারণে। শেষ পর্যন্ত মোমবাতি জ্বালাতে হয়েছে।
স্টলগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, বিদ্যুতের তার বেয়ে প্রত্যেকটি স্টলে পানি চুইয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থেকেই যায়। তাই সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী গতকাল শনিবার থেকে আকাশ সারাদিনই ছিল মেঘলা। তবে রাজধানীর কোনো এলাকায় হালকা বৃষ্টি হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয় বইমেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে। বইমেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে আগেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল স্টলগুলোকে।
সারারাত হালকা বৃষ্টি পর রোববার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি ঝড়ছিল। তবে গতকালের চেয়ে শীত অনুভূত হচ্ছিল অপেক্ষাকৃত কম। বসন্তের শুরুতেই অকাল বৃষ্টি, ধূলামুক্ত শীত শীত আবহে প্রথমে ১৬তম দিনের মেলা বেশ জমে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেলা পণ্ডও হয় বৃষ্টির কারণে।
রোববারের মেলায় ৫৯ বই
একুশে গ্রন্থমেলার ১৬তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৫৯টি। এরমধ্যে ১৩টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এদিন মেলায় আসা নতুন বইগুলোর মধ্যে রয়েছে, গল্প-১১টি, উপন্যাস-৮টি, প্রবন্ধ-৫টি, কবিতা-১৭টি, গবেষণা-১টি, ছড়া-৩টি, শিশুতোষ-১টি, মুক্তিযুদ্ধ-২টি, বিজ্ঞান-১টি, ইতিহাস-৩টি এবং অন্যান্য-৬টি।
মূল মঞ্চের আয়োজন
এদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে তথ্য-প্রযুক্তি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান। আলোচনায় অংশ নেন মোস্তফা জাব্বার, তারিক সুজাত, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহবুব জামান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক নজরুল ইসলাম খান বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশিদারিত্বে সুলভে জনসেবা প্রদান নিশ্চিত করা এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে ৯ম সংসদে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল তার অনেকখানি বাস্তবায়িত হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, সমাজের সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশকে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত বিপুল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবচেয়ে বেশি জরুরি তথ্যপ্রযুক্তিমনস্ক সমাজ গঠন। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নাগরিকদের তথ্যপ্রযুক্তি-সাক্ষরতা নিশ্চিতের পাশাপাশি এর বহুমুখি ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
তারা আরো বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ই-বুকের প্রচলনও অত্যন্ত জরুরি। বইয়ের প্রচলিত কাঠামোর পাশাপাশি ই-ভার্সনেও পাঠকদের অভ্যস্ততা তৈরি করা প্রয়োজন যাতে দ্রুতবর্ধিষ্ণু পাঠক সমাজকে চাহিদামতো জ্ঞান-রাজ্যের সন্ধান দেয়া যায়। তবে এর সঙ্গে কপিরাইটের স্বচ্ছতার বিষয়টিও নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তারা।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সোমবারের আয়োজন
আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘মাহমুদুল হকের কথাসাহিত্যে গদ্যশাসন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবু হেনা মোস্তাফা এনাম। এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে রফিক কায়সার, আনিসুল হক এবং আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করবেন হাসান আজিজুল হক।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪