বইমেলা ঘুরে: বই মেলায় এবার শিশু চত্বরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে বাংলা একাডেমী। ঐহিত্যবাহী বর্ধমান হাউসের সামনে নজরুল মঞ্চের দক্ষিণ পাশ থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে সীমান্ত দেওয়াল ঘেঁষে একাডেমির অধুনালুপ্ত বিক্রয়কেন্দ্র পর্যন্ত সারি দিয়ে শিশুতোষ বইয়ের স্টল।
বাংলানিউজের প্রশ্নের জবাবে তাই সপরিবারে মেলায় ঘুরতে আসা ফারহানা মনসুরের আক্ষেপ, নতুন বই নেই। ছোটদের বইয়ের ছন্দটাই যেন হারিয়ে গেছে।
এ মন্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার বোন টিনা রহমানের মন্তব্য, ছোটদের জন্য আরো বই থাকা উচিত। ছোটরা এখন আরো বেশি বইমুখী।
ফারহানা মনসুর শিক্ষকতা করেন মিরপুর চেতনা মডেল একাডেমিতে। তার আরলি থ্রি ক্লাসে পড়ুয়া মেয়ে লুবাবা তাফাননুনের হাতে মাছ কুমার ও মুগলি নামে দু’টি বই। ফারহানা মনসুরের বোন নারী উদ্যোক্তা টিনা রহমানের মেয়ে নাহিয়ান রহমান পড়ে কেজি-১এ। তার হাতেও দু’টি বই। সবগুলোই সহজ পাঠ প্রকাশনীর। সবার ছোট বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারহিন মনসুরও আছেন তাদের সঙ্গে। সঙ্গে আছেন তাদের মা, এক বোনের বর। বড় দুই বোনের কোলে আরো দুই ছোট্ট শিশু বই মেলার কোলাহলেও অনেকটাই শান্ত। কৌতুহলী চোখে যেন মানুষ আর পরিবেশ মাপছে।
বেসরকারি চাকুরে আব্দুল মালেক মেলায় এসেছেন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা লামিয়া ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া বন্ধুর মেয়ে সাবিনাকে নিয়ে। এ দুই শিশুর হাতে পিপিএমসি’র কথার মালা ও গল্পে গল্পে যায় বেলা নামক বই। আরো আছে শিশু প্রকাশের আলী ইমাম রচিত ছোটদের হুমায়ূন।
ছোটদের হুয়ামূন এবারের বইমেলায় নতুন সংযোগন হলেও মোটের ওপরে ছোটদের উপযোগী খুব বেশি বই আসেনি এবারের মেলায়। এই যেমন, বই মেলায় ঢুকতেই শিশু চত্বরের শুরুতেই জায়গা করে নেওয়া মুক্তধারার স্টলে এবার বইমেলা উপলক্ষে নতুন কোন শিশুতোষ বইই আসেনি। আসবে কি না জানতে চাইলে সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন মুক্তধারার বিক্রেতারা।
এরপর টইটুম্বুর, শিশু প্রকাশ, প্র্রগতি পাবলিশার্স, কিশোর ভূবন, চলন্তিকা বইঘর, নলেজ ভিউ, আরো প্রকাশন, হলি পাবলিকেশন্স, ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেন্স বুক, রঙিন ফুল, শিলা প্রকাশনী, আদিগন্ত প্রকাশনী, পিপিএমসি, প্রিয়প্রকাশ। এরপর বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।
এরপর টোনাটুনি, ফুলকি, ছোটদের মেলা, ডাক, ঝিঙে ফুল, শিশু ঘর, ছোটদের বই, মুক্তিযুদ্ধের বই, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, দিনরাত্রী প্রকাশনী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, শুধুই মুক্তিযুদ্ধের বই আর কলতা প্রকাশনী।
তারপর আরো কিছুটা গ্যাপ দিয়ে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর স্টলে উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস বিক্রিই যেন মুখ্য। তবে এ সারিতে শিশুকিশোর প্রকাশনার আলাদা স্টল সাজিয়েছে বাংলা একাডেমী।
আর মাঝের সারির ঠিক মাঝখানে ড্যাফোডিল ও মাইক্রোস ডিজিটাল নামে দু’টি সিডি/ভিসিডির দোকান।
মাইক্রোস ডিজিটালের প্রোপাইটার নূরে আলম জানালেন, ডিজিটাল মিডিয়াকে মেলায় জায়গা দিতে চায় না। কিন্তু কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর সিডি কম খরচে পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই ছড়া, বর্ণমালা, রাইসম, ইসলামী রাইমস, মুঘল ইতিহাস ও ঐতিহ্য, টু ডি বর্ণমালা, পাঠ্য বই, কম্পিউটার শিক্ষা, ভিডিও টিওটোরিয়াল রপ্ত করা যায়।
এর পাশেই মুক্তিযুদ্ধের বই নামে স্টল সাজিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাদ। স্টল সারি ও নজরুল মঞ্চের মধ্যবর্তী স্থানে চেয়ার পেতে বসেছেন ৯ নম্বর সেক্টরের এই মুক্তিযোদ্ধা। জানালেন, আগে তিনি স্টল চালাতেন মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ নামে। এবার নিজের নামেই স্টল দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা আহাদ আরো জানান, তিনি প্রকাশক নন। অন্য প্রকাশনীর বই এনে ডিসপ্লে করেন। এবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর জীবনী বেশি কিনছে শিশুরা।
শিশু চত্বরের একপ্রান্তে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্টল। তবে শিশুদের জন্য বিশেষ কোন প্যাকেজ নেই তাদের। এখানকার ভলান্টিয়ার অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটির বিবিএ ছাত্র রলিন জানান, দেশের আইকন কনটেস্ট আয়োজন করছে ট্যুরিজম বোর্ড। তারা মূলত সেটারই প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ট্যুরিজম বোর্ডের স্টলের সামনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদ্যোগে ই তথ্য কেন্দ্র, নজরুল ইনস্টিটিউট, ফ্রি ওয়াইয়াই যেন জোন মুড়ে দিয়েছে শিশু চত্বরের প্রান্ত। পুরো চত্বর জুড়েই গিজগিজে ভিড়। কিন্তু বই খুব কম মানুষের হাতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪