ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বইমেলা

সবার হাতেই বই

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪
সবার হাতেই বই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: বসন্তের হাত ধরে ঘুরে গেল শ্রাবণের মেঘ। অবেলায় জানান দিয়ে গেল ঋতুচক্রে তার অবস্থান।

হিম বাতাসে জানান দিয়েছিল টানা বৃষ্টির।

মেঘাচ্ছন্ন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বাংলা সাহিত্যের সর্ববৃহৎ উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলার জৌলুস কিছুটা অসার হয়ে এলেও সোমবার মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্য উঁকি দিতেই ঝলমলে কিরণে প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে বইমেলা প্রাঙ্গণ।

শনিবার রাত থেকে হিম বাতাস আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও শত শত বই প্রেমী বৃষ্টি মাথায় ঠাণ্ডা বাতাস উপেক্ষা করেই চলে আসেন মেলা প্রাঙ্গণে। রোববার মেলার প্রথমভাগে বৃষ্টির প্রভাব তেমন একটা না পরলেও, সন্ধ্যা নাগাদ বৃষ্টি বাড়লে পণ্ড হয়ে যায় প্রাণের মেলা।

তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মন্দাভাব চলার পর সোমবার হাসি ফুটেছে বিক্রেতা ও প্রকাশকদের মুখে। বইমেলার প্রাণ যে পাঠক-দর্শনার্থী, তাদের সমাগমে মুখরিত ছিল সোমবারের বইমেলা।

এবারের মেলার পরিবেশ ভালো হওয়ায় শুরু থেকেই পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড় ছিল মেলায়। আর এখন যারা মেলায় আসছেন তাদের প্রায় সবাই বই দেখছেন, কিনছেন। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় প্রায় সবার হাতেই দেখা যাচ্ছে বই।
 
প্রকাশক ও বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছরই সাধারণত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন পার হওয়ার পর জমে ওঠে মেলা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মেলার প্রথম ১০ দিন পেরোতেই পুরোদমে জমে উঠেছে এবারের বইমেলা। আর এখন যারা মেলায় আসছেন তারা প্রকৃত বইপ্রেমী। তারা সবাই বই কিনছেন।

বিভাস প্রকাশনীর প্রকাশক রামশংকর দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, মেলার ১৫ দিন পার হওয়ার পর যারা মেলায় আসেন তারা প্রকৃতপক্ষে বই কিনতে মেলায় আসেন। গতকালের খারাপ আবহাওয়ার কারণে মেলায় মানুষ কম থাকলেও আজ পাঠক-দর্শনার্থীর সমাগম বেশি এবং বিক্রিও ভালো।

আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় এবার জায়গা বেশি হওয়ায় মনে হচ্ছে লোক কম। কিন্তু আসলে তা নয়। এবার মেলায় প্রচুর পাঠক-দর্শনার্থী আসছেন এবং বই কিনছেন।

অবসর প্রকাশনীর ম্যানেজার মাসুদ রানা বলেন, গতকাল খারাপ আবহাওয়া থাকলেও মেলায় যারা এসেছিল তারা সবাই বই কিনেছে। আজও মেলায় প্রচুর মানুষ এসেছে তবে সে তুলনায় বিক্রি কম।

সোমবারে মেলায় ৫৮টি বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭তম দিনে সোমবার নতুন বই এসেছে ৫৮টি এবং ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আজকের বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মধ্যে রেয়েছে গল্প-৬টি, উপন্যাস-৮টি, প্রবন্ধ-২টি, কবিতা-২১টি, গবেষণা-৩টি, ছড়া-২টি, শিশুতোষ-৭টি, জীবনী-১টি, রচনাবলী-১টি, মুক্তিযুদ্ধ-১টি, চিকিৎসা-১টি, রম্য/ধাঁধা-১টি এবং অন্যান্য-৩টি।

মেলায় গোলাম রাব্বানীর ‘হুদাই (২)’
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭ তম দিনে আজ প্রকাশিত হয়েছে গোলাম রাব্বানীর কবিতার বই ‘হুদাই (২)’। সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। লেখক গোলাম রাব্বানী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর সাংবাদিক।

মেলা মঞ্চের আয়োজন
মেলায় আজ বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মাহমুদুল হকের কথাসাহিত্যে গদ্যশাসন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু হেনা মোস্তাফা এনাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আনিসুল হক এবং আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন রফিক কায়সার।

প্রাবন্ধিক বলেন, মাহমুদুল হক অত্যন্ত সচেতন অভিনিবেশে একটি রুচিশীল সাহিত্যিক গদ্য নির্মাণে অন্বেষী হয়েছিলেন, বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে গদ্যের এই নতুন অন্বেষণ সূচিত হয়েছিল চল্লিশের দশকের শেষ প্রান্তে। মাহমুদুল হক বাংলা গদ্যভাষার সেই অন্বেষাতে সংযোজন করেন নতুন সৃজনশীলতা। যে গদ্য নিছক কলাকৈবল্যবাদের বিচ্ছিন্নতাসন্ধানী চোরাবালিতে পথভ্রান্ত নয়, বরং শিল্পের ভেতর দিয়ে নতুন রাষ্ট্রের নতুন সাহিত্যভাষা নির্মাণে বৈপ্লবিক প্রেরণাসঞ্চারী। এভাবেই তিনি স্বতন্ত্র এবং বাঙালি জাতিসত্তার অন্তর্নিহিত স্নিগ্ধতা, শক্তি ও সম্ভাবনাময় সৃষ্টিশীল ভাষা পুননির্মাণের অন্যতম পুরোধা।  

আলোচকবৃন্দ বলেন, ভাষার অসাধারণ কারুকর্মে মাহমুদুল হক মানুষের অজেয় আখ্যান রচনা করেছেন। তার চরিত্রগুলো বিরূপ বিশ্বে নিজস্বতায় দীপ্যমান। অপূর্ব শিল্পকুশলতায় প্রকাশিত হয়েছে তার বিষয়ভুবন।

তারা বলেন, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় ফুটে উঠেছে মাহমুদুল হকের উপন্যাস ও গল্পে যা বাংলা কথাসাহিত্যের ভাণ্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ।

সভাপতির বক্তব্যে রফিক কায়সার বলেন, রসময় বৈদগ্ধ্যে অনুনকরণীয় গদ্যশৈলীতে মাহমুদুল হক কথাসাহিত্য বয়ন করেছেন। ব্যক্তি-অভিজ্ঞতার নিগূঢ় অঙ্গন থেকে জাতিসত্তার বৃহত্তর পরিসরকে ধারণ করে তার সৃজনকর্ম আমাদের অনিঃশেষ উজ্জীবনের উৎসাহ হয়ে আছে।

এছাড়া সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

মঙ্গলবারের আয়োজন
আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কবি মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্, কবি দিলওয়ার এবং কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে হাসান হাফিজ, মোস্তাক আহমদ দীন এবং অনু হোসেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র শেখর, সাহেদা আখতার এবং তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করবেন অ্যামিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।    

সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।