ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

আর একদিন বইমেলা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪
আর একদিন বইমেলা

বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: দেখতে দেখতে ফুরিয়ে এলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা সাহিত্যের সর্ববৃহৎ উৎসব এবং বাঙালি লেখকদের সর্ববৃহৎ মিলন মেলা।

১ ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থমেলার মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় ৫২’র ভাষা শহীদদের। শোকাগ্রস্ত বাঙালি প্রাণকে আরো কাতর করে তোলে স্বৈরাচার বিরোধী দিবস। আর ভাইহারা একুশ এসে পূর্ণ করে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। কেবল শোক নয়, সুখ-দুখ মিলিয়ে বাঙালির জীবনে আসে বসন্ত। প্রকৃতির সঙ্গে রঙ্গিন হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণও।

বৃহস্পতিবারের মেলা
বৃহস্পতিবার মেলা বেলা তিনটায় শুরু হয়ে চলে রাত নয়টা পর‌্যন্ত।

বৃহস্পতিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৭তম দিনে ১৩টি গল্প, ১২টি উপন্যাস, পাঁচটি প্রবন্ধ, ২৯টি কবিতা, পাঁচটি গবেষণা, পাঁচটি ছড়া, আটটি শিশুতোষ, পাঁচটি জীবনী, দুইটি মুক্তিযুদ্ধ, একটি বিজ্ঞান বিষয়ক, দুইটি ভ্রমণ কাহিনী, দুইটি ইতিহাস, একটি রাজনীতি, তিনটি চিকিৎসা, একটি রম্য/ধাঁধা, তিনটি ধর্মীয়, একটি অভিধান, দুইটি সায়েন্স ফিকশন এবং ২২টি অন্যান্যসহ মোট ১২২ টি নতুন বই এসেছে মেলায়। এর মধ্যে ১৫টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মূলমঞ্চের আয়োজন 
বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের নবজাগৃতি ও তরুণ প্রজন্ম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ড. সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, শাহবাগের সাম্প্রতিক গণজাগরণ ছিল বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির সংগ্রাম। ভ্রান্ত ইতিহাসের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পুনর্জাগরণের লড়াই। এই আন্দোলনের একটি বিশ্ব-চারিত্র্য আছে। সারা বিশ্বের মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের ক্ষেত্রে শাহবাগের যুদ্ধাপরাধবিরোধী আন্দোলন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করবে।

আলোচকরা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। শাহবাগের আন্দোলন তাদের মূল ধরে টান দিয়েছে। সাম্প্রতিক গণজাগরণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অধিকার ও জয়বাংলা ধ্বনি ফিরিয়ে দিয়েছে। তারুণ্যের এই উত্থান সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।  

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, শাহবাগের সাম্প্রতিক নবজাগৃতির চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ-মানবতাবাদীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নুজহাত চৌধুরী এবং আলম তালুকদার।

মেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ
বিকেল সাড়ে চারটায় গ্রন্থমেলায় বহুমাত্রিক লেখক ড. হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে তাকে স্মরণ করা হয়।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলা একাডেমির ‘মোদের গরব’ ভাস্কর্যের সামনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক ভাবনার সংকলন বাংলাদেশ নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।

প্রবাসী লেখক পুরস্কার ২০১৩ প্রদান অনুষ্ঠান
সন্ধ্যা ৬টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার ২০১৩ প্রদান অনুষ্ঠান।

প্রবাসে বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইসহাক কাজল, ড. গোলাম আবু জাকারিয়া এবং ফারুক আহমদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার প্রবাসে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের নতুন মাত্রার শিল্পসৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পুরস্কার লেখকদের দেশের প্রতি আরো দায়বদ্ধ শিল্প সৃষ্টিতে অবদান রাখবে।

স্বাগত বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার বাংলা সাহিত্যের বৈশ্বিক অভিযাত্রাকে শক্তিশালী করবে। প্রবাসী লেখকরা তাদের শ্রম ও মেধায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে যেভাবে তুলে ধরছেন তা আমাদের সাহিত্যের পরিসরকে বৃদ্ধি করার পাশাপাশি যোগ করছে নতুন মাত্রা।

পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, বাংলা একাডেমির এ পুরস্কার সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের আরো অনুপ্রাণিত করবে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর এমেরিটাস আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।  

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভারত থেকে আগত আবৃত্তিশিল্পী শোভন সুন্দর বসু। সংগীত পরিবেশন করেন লিলি ইসলাম এবং মনীষা বসু।

যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিত সরকার (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (দোতারা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড), এস এম রেজা বাবু (ঢোলক) এবং শাহাদাৎ হোসেন (মন্দিরা)।  

শুক্রবারের আয়োজন
শুক্রবার শেষ দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং শেষ হবে যথারীতি রাত নয়টায়।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কণ, সঙ্গীত এবং সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিশুসাহিত্যিক এখলাসউদ্দীন আহ্‌মদ এবং সভাপতি হিসেবে মোহিত কামালের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিস্ময়কর সাফল্যের উৎস এবং এর সাম্প্রতিক সমস্যা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপনে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, আলোচনায় খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, মেসবাহ কামাল এবং জিয়া রহমান এবং সভাপতিত্বে কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।

গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান
সন্ধ্যা ছয়টায় অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৪‘র সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপনে মেলার সদস্য-সচিব ও একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুনের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এনডিসি’র বক্তব্য প্রদানের কথা রয়েছে।

সভাপতি হিসেবে বাংলা একাডেমির সভাপতি অ্যামিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

সন্ধ্যায় যথারীতি পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।