ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মেলা প্রাঙ্গণ যেন একটুকরো ভিন্ন মানচিত্র!

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫
মেলা প্রাঙ্গণ যেন একটুকরো ভিন্ন মানচিত্র! ছবি : শোয়েব মিথুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ছে দেশের মানুষ। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তেই জ্বলছে নাশকতার আগুন।

হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধদের সারি। শিশু থেকে বৃদ্ধ—কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। দেশের কোনো প্রান্তই যেন এখন নিরাপদ নয়! ব্যতিক্রম কেবল অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ।
 
এখানে নেই কোনো আহাজারি। নেই বিভৎসতা। আছে নান্দনিক প্রচ্ছদ। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণে ছুটে আসেন লেখক-পাঠক-প্রকাশক। বইপ্রেমীদের কাছে তাই এইমেলা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠছে একটুকরো ভিন্ন এক মানচিত্র। যেখানে নেই সহিংসতা। আছে কেবল বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। আর যাদের বইয়ের সঙ্গে প্রেম তাদের মাঝে কেবলই বাস করে মহানুভবতা।
 
শনিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এমন বইপ্রেমীদের দেখা গেছে। যারা স্টলে স্টলে ঘুরে বই দেখছেন। নতুন বইয়ের গন্ধ নিচ্ছেন। পছন্দ করে কিনেছেন।
 
বলাকা প্রকাশনের কর্ণধার শরিফা বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, দেশজুড়ে এমন নৈরাজ্যের পরিস্থিতিতেও জমে উঠছে বাঙালির প্রাণের এ মেলা। মেলার শুরুতে আমাদের যে আশঙ্কা ছিলে লোকসমাগম হবে কি-না এখন সেই শঙ্কা কেটে যাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠছে শান্তির এক স্থান। এখানে স্বস্তিতেই থাকেন লেখক-পাঠক-প্রকাশকরা।
 
সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মিত শিশু চত্বরটি শিশুদের পদচারণায় মুখর ছিল। তবে সকালের দিকে মেলার অন্য প্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল না ততটা ভিড়। শিশু চত্বরের স্টলগুলোতেই ছিল ছোটদের পদচারণা। বাবা মায়ের তর্জনি ধরে তারা পছন্দের বই নিযেছেন।
 
শিশুপ্রহরের এক পাশে এক ইউনিটের স্টল নিয়েছে বাচ্চাদের প্রিয় অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’। ‘পৃথিবীটা দেখছি প্রতিদিন শিখছি’ স্লোগানে সিসিমপুরের এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেখান থেকে বইও প্রকাশ হয়েছে বেশ কয়েকটি।
 
সিসিমপুর থেকে প্রকাশিত হওয়া বড় বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সবখানেই শিখতে পারি’, ‘পানি’, ‘বর্গরাজা আর ত্রিভুজ রাণি’ ও ‘আলুর খোঁজে’। এছাড়া ‘হালুম যাবে অনেক দূর’, ‘নিতু একদিন সিসিমপুরে’, ‘যেখানে সবাই শেখে’, ‘হালুমের গ্রামে যাওয়া’, ‘দাদাভাই আর আমি টুকটুকি’, ‘ইকরির ফুল’ বইগুলোতেও রয়েছে ছোট ক্রেতাদের নজর।

শিশুদের প্রিয় চরিত্র হালুম, টুকটকি, ইকরির দেখা মেলাতে না মিললেও তাদের ছবি সংযুক্ত বিলবোর্ডগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ভুলছে না খুদে পাঠকরা।
 
সিসিমপুরের নির্বাহী পরিচালক যাকারিয়া মো. পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিসিমপুর সব সময়ই বাচ্চাদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কাজ করি। সে লক্ষেই মেলায় স্টল নিয়েছি। বাচ্চারা এখানে আসছে বই কিনছে। বিক্রিও ভালো। বাচ্চারা হালুম-টুকটুকির সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছে, আমরাও চেষ্টা করছি ওদেরকে আনার। ’

সপ্তম দিনে ১৯৮টি বই
শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সর্বমোট ১৯৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উপন্যাস ৪০টি, গল্প ৩৯টি, কবিতা ৪১টি, প্রবন্ধ ৮টি, গবেষণামূলক ৭টি, ছড়া ৭টি, শিশুসাহিত্য ২টি, জীবনী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৬টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৩টি, ভ্রমণকাহিনী ৩টি, রাজনীতি বিষয়ক ৩টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক ২টি, রম্য ৪টি, ধর্মীয় ৩টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য বিষয়ক বই ৩৬টি।
 
উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে—অন্যপ্রকাশ থেকে নূহ-উল-আলম লেলিনের ‘নির্বাচিত ১০০ কবিতা’, আগামী প্রকাশনী থেকে অমর সাহার ‘কলকাতায় বাংলাদেশ’, রোকেয়া লিটার ‘সমকামিতা’, চারুলিপি থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘তিন সমুদ্রের দেশে’, ঝিঙেফুল থেকে শরীফ খানের ‘দোয়েলের বাসা’, মুক্তধারা প্রকাশনী থেকে উম্মে মুসলিমার ‘তুচ্ছ প্রেম তুচ্ছ প্রতারণা’, শব্দশৈলী থেকে অনন্য আজাদের ‘সতীত্ব বনাম বহুগামিতা’, অনিন্দ্যপ্রকাশ থেকে আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’, কথা প্রকাশন থেকে সেলিনা হোসেনের ‘নুন পান্তা গড়াগড়ি’, প্লাটফর্ম থেকে জাকির তালুকদারের ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’, ভাষাচিত্র থেকে অদ্বয় দত্তের ‘পাশা খেললেন ঈশ্বর’, ভাষাচিত্র থেকে রুদ্র আরিফের ‘সিনেঅলা-২’, ঐতিহ্য থেকে মিছিল খন্দকারের ‘মেঘ সামান্য হাসো’, সন্দেশ থেকে নাসরিন জাহানের ‘চন্দ্রের প্রথম কলা’, রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্যের ‘বঙ্গে সুফি প্রভাব ও সুফিতত্ত্বের ক্রমবিকাশ’, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাহিত্যের অন্তর্জগৎ’, বোধি প্রকাশন থেকে মিহির সেনগুপ্তের ‘সুবর্ণ উত্তরণ’, ন্যাশনাল পাবলিকেশন্স থেকে সাহিদা বেগমের ‘নারী অধিকার ও বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা’ ও ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ’ প্রভৃতি।
 
মোড়ক উন্মোচন
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নজরুল মঞ্চে শনিবার মোট ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: শব্দশৈলী থেকে প্রকাশিত প্রয়াত প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদপুত্র অনন্য আজাদের প্রবন্ধের বই ‘সতীত্ব বনাম বহুগামিতা’, সাবরিনা খান ছন্দার কবিতার বই ‘রুপাকে নিয়ে’, জিনাত আরার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবন ও স্বাধীনতা’, ড. গোলাম মোস্তফার ‘আমার দেশ ভাবনা’, মাহমুদ জাহিদের ‘সৎ সাহসের ধান’।

** জনপ্রিয় লেখকে আগ্রহ পাঠকের
** মেলায় শিশুদের যত বই
** প্রথম সপ্তাহের নতুন বই
 
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।