ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মেলার জন্য বইয়ের প্রস্তুতি

ধুম পড়েছে কাগজ বিক্রিতে!

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
ধুম পড়েছে কাগজ বিক্রিতে! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকার নয়াবাজার-বাংলাবাজার ঘুরে: গেলো বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের শুরু থেকেই দেশে হরতাল-অবরোধ। রাজনৈতিক মন্দা! অন্যদিকে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যার কর্মযজ্ঞ।

সব মিলে জনমনে ছিল না স্বস্তি। যার প্রভাব দেখা দেয় সমাজের স্তরে স্তরে। সে সময় বই মেলার আগে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) মন্দাভাব বাদ যায়নি কাগজের বাজারেও।

মেলার আগে আগে— বই তৈরির প্রধান উপকরণ কাগজ বিক্রি ও এ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা সে সময় কোথায় জমে উঠবে তা না, উল্টো দোকানপাট এক প্রকার বন্ধই রাখতে হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। কিছু চেনা-জানা পাইকারি কাগজ/পেপার বিক্রেতা-প্রকাশকের মধ্যে লেনদেন থাকলেও সামগ্রিকভাবে কমতির দিকে ছিল বিক্রি-বাট্টা। তবে এবার দিন খুলেছে, মৌসুম শেষে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন- এমনটাই আশাবাদ পাইকারদের। তাদের বক্তব্য, দেশে পরিস্থিতি ভালো, তাই বইমেলার বইয়ের কাগজ বিক্রিতেও ধুম এখন!

হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন পরই অমর একুশে গ্রন্থমেলা, প্রাণের মেলা, মিলন মেলা। বাঙালির প্রাণ এই মেলা এবং মেলার প্রাণ বই। গত বছর জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়ে সারা ফেব্রুয়ারিজুড়েই ছিল অবরোধের কালিমা। স্বাভাবিক ছিল না জীবন-প্রবাহ। তাই তো বইয়ের মূল নিয়ামক কাগজ বিক্রি হয়নি আশানুরূপ।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় একাধিক পাইকার কাগজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে। রাজধানী ঢাকার বংশাল নয়াবাজার এবং বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা শুক্র ও শনিবার (২২ ও ২৩ জানুয়ারি) দিনব্যাপী ঘুরে পাইকারি কাগজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বর্তমান হালহকিকত। স্থানীয় জিন্দাবাহার মার্কেট, নবাব ইউসূফ, বসুন্ধরা মার্কেট, প্রথম লেন, মান্নান মার্কেট, চৌধুরী মার্কেটসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবনে পাইকারিভাবে গড়ে ওঠা কাগজের গুদাম-ব্যবসাকেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড়। এছাড়া কিছু সংখ্যক কাগজ বাংলাবাজার থেকেও সাপ্লাই হয়, রয়েছে সেখানেও দোকান।

এ বছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশকদের কাগজের চাহিদা কেমন, এই প্রশ্ন ছিল ঢাকা কাগজ ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি (নোয়াখালী ব্যবসায়ী পরিষদ) আলহাজ মোহাম্মদ নূরুল আমিনের কাছে। বাংলানিউজকে তিনি জানান, এবার আগের চেয়ে ব্যবসা ভালো। প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে অনেক।

নূরুল আমিন নয়াবাজারের মোহাম্মাদীয়া পেপার স্টোরের কর্ণধারও বটে। তিনি বলেন, গত বছর তো ব্যবসা বেশ খারাপ গেছে, কারণ ছিল হরতাল-অবরোধ। তার আগের বছরও ঠিক মতো ব্যাটে-বলে ছিল না ব্যবসা। তবে এ মৌসুমে সব মিলিয়ে আমাদের প্রতিটি ব্যবসায়ীরই কেনাবেচায় এসেছে নতুন হাওয়া।

এ সমিতির সহ-সভাপতি ও নয়াবাজারে জান্নাত ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী আলহাজ মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই ছাপাতে কাগজের চাহিদা মূলত শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাস থেকে। জানুয়ারিতে যার চাপ থাকে তুঙ্গে। আর এ বছর এমনিতেই কাজের বেশ চাপ, আগের বারের চেয়ে। সার্বিক দিক দিয়ে ব্যবসা ভালো আমাদের। প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতি সকাল থেকে রাত— আমার নিজের দোকান ছাড়াও আশপাশের বহু দোকান থেকে যাচ্ছে কাগজ প্রেসে কিংবা বাংলাবাজারে প্রকাশনীর অফিসে।

কাগজ বিক্রেতা হিসেবে তারা মনে করেন, পরিস্থিতি ভালো, তাই এবছর বইমেলাও জমবে দারুণ। তারা জানালেন, ভালো মানের বই করতে বসুন্ধরা পেপার, পারটেক্স, সোনালী, আম্বার, ক্রিয়েটিভ, ক্যাপিটাল এবং টিকে ব্র্যান্ডের কাগজের বিক্রি বেশি হয়। তবে এর মধ্যে বসুন্ধরা পেপারের আইটেম অনেক, অন্যদের চেয়ে মানও খুব ভালো। ফলে ভালো মানের বই করতে প্রকাশকদের প্রথম পছন্দ বসুন্ধরা পেপার।

মার্কেট ঘুরে জানা যায়, ১ প্যাকেটে ১ রিম কাগজ থাকে। যাতে মোট ৫০০ পিস ধরে। তবে সাইজ বিভিন্ন হতে পারে। আর একটি কাগজে মূলত করা যায় ৮টি পাতা। ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম রাইটিং পেপার লাগে বই করতে। দাম বিষয়ে জানা যায়, ৬৫ গ্রাম (২৩ গুণ ৩৬) দাম রিম ১৪৬০ টাকা। ৬৫ গ্রাম (২০ গুণ ৩০) দাম ১০৭০ টাকা। ৮০ গ্রাম (২৩ গুণ ৩৬) দাম রিম ১৮৬০ এবং ৮০ গ্রাম (২০ গুণ ৩০) দাম ১৩৫০ টাকা। তবে কোম্পানি ভেদে দামে রয়েছে পার্থক্য।

এদিকে বাংলাবাজারের আরশী পেপারের মালিক রিপন বাংলানিউজকে বলেন, এবার বই করার কাগজের বিক্রি অন্তত গত বছরের তুলনায় ভালো। প্রকাশকরাও স্বাচ্ছন্দ্যে কিনছেন।

বই মেলার বই প্রকাশের কাগজ কিনতে আসা ছাপাখানার এক কর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নয়াবাজারে। বাদল নামের ওই ব্যক্তি ছিলেন বেশ তাড়ায়। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই, এরই মধ্যে প্রশ্ন করায় হন্তদন্ত হয়ে উত্তর দিলেন, কাগজ কিনেছি, যা আরামবাগ প্রেসে নিয়ে যাবো। সেখানে বইয়ের কাজ চলছে। প্রকাশকের এক কথা বইমেলার প্রথম দিনই যেন অধিকাংশ বই বাজারে থাকে।

আরেক শ্রমিক জাহিদ বলেন, প্রায় ৩০ রিম নিয়ে এক ঠেলাগাড়িতে মাল যাচ্ছে। যা দিয়ে বড় গল্পের বই (হয়ত উপন্যাস) ছাপানো হবে বলে শুনেছি।

নয়াবাজারের গলিতে প্রায় জ্যাম লাগিয়ে দিয়েছিলেন মাসিরুল। ঠেলাগাড়ি এলোপাতাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে বাংলানিউজের সাড়ায় তিনি বলেন, নয়াবাজারের পাইকার প্রতিষ্ঠান কাগজঘর থেকে তিনি কাগজ নিয়ে বাংলাবাজারে প্রকাশনীর অফিসে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে প্রকাশক কাগজ পাঠিয়ে দেবেন প্রেসে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে তাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে কাকলী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী এ কে নাসির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বই মেলার জন্য বই ছাপানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আমাদের। ইতোমধ্যে ৫০০ রিম কেনা হয়েছে। আরও কেনা হবে, যা চলবে ফেব্রুয়ারির অন্তত ১৫ তারিখ পর্যন্ত।

তিনি হিসেব দেখিয়ে বলেন, জানুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত ৫০০ রিম কাগজ নয়াবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, আরও ৪০০ রিম লাগবে।

ভালো মানের বই করতে বসুন্ধরা কাগজের জুড়ি নেই মন্তব্য করে তিনি এও বলেন, কাগজের মান উন্নয়নের সুযোগ আছে কোম্পনিগুলোর। তারা যদি এটি করেন এবং বই মেলাকে কেন্দ্র করে মূলধারার প্রকাশকদের কিছু ছাড় দেন তাহলে সামগ্রিক শিল্পই আরও এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।