ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

রেকর্ড ভাঙবে এবারের বইমেলা

বাংলানিউজটিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
রেকর্ড ভাঙবে এবারের বইমেলা ছবি: রাজিব/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শেষ হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর। সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণ ও মননের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬।

   গত বছরগুলোর সকল রেকর্ড এবার ভাঙার ঘোষণা দিয়েছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।

মেলার পরিধি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নতুনত্বের কারণেই এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা হবে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বইমেলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এ নির্বাহী।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, এবারের মেলা বিভিন্ন দিক থেকেই রেকর্ডের। কারণ গত বছর দুই প্রান্তে (বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আড়াই লাখ বর্গফুটের জায়গায় মেলা হয়েছে। এবার মেলার আয়তন বেড়ে ৪ লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুট জায়গায় হবে। এছাড়া বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী মেলায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।

বইমেলায় রেকর্ড নিরাপত্তার কথাও জানালেন বাংলা একাডেমির প্রধান এ কর্মকর্তা। বললেন, ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা এবার নিরাপত্তার বিষয়টিকেই অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২ শতাধিক সিসি ক্যামরার মাধ্যমে পুরো বইমেলা পর‌্যবেক্ষণ করা হবে’।
 
তিনি বলেন, এবারের বইমেলায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। টিএসসির পাশে এবং দোয়েল চত্বরে থাকবে র‌্যাবের ক্যাম্প। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মেলার নিরাপত্তায় থাকবেন।

সংবাদ সম্মেলনে মেলায় নতুনত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, মেলা এবার রাত ঠিক ৮টায় বন্ধ হবে। অন্য বছরগুলোতে দেখা যায়, রাত ৮টায় বলা হলেও বন্ধ হতে হতে ৯টা সাড়ে ৯টা বেজে যায়। এজন্য এবার রাত সাড়ে সাতটায় বন্ধ করার জন্য সাইরেন বাজবে। ৮টায় মেলা প্রাঙ্গণের সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হবে।
‘মেলায় শৃঙ্খলা আনার জন্য আমরা এবার এ সিস্টেম করতে যাচ্ছি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গতবারের মেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুজ্জামান খান বলেন, আমরা চাই প্রকাশকরা এমন কিছু বই প্রকাশ না করুন, যেটা উস্কানিমূলক। আর এ ধরনের কিছু করা হলে অঘটন ঘটতে পারে।

গ্রন্থমেলার নানাদিক
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমির সামনের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিটসহ মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫১টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬০০০ বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন, একাডেমি প্রকাশিত অভিধান বিক্রয়কেন্দ্র, একাডেমির শিশু-কিশোর প্রকাশনাভিত্তিক বিক্রয়কেন্দ্র এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে।

১৫টি চত্বর
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১৫টি গুচ্ছে সজ্জিত করা হয়েছে। চত্বরগুলো নামাঙ্কিত থাকবে ভাষাশহীদ আবুল বরকত, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আলতাফ মাহমুদ, সিরাজউদ্দীন হোসেন, ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, শিশুসাহিত্যিক সাজেদুল করিম, হাবীবুর রহমান, ফয়েজ আহমদ এবং রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই-এর নামে।  

শিশুকর্নার
এবার শিশুকর্নার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বইমেলায় ক্রয়-বিক্রয়ের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে সেজন্যই এ ব্যবস্থা। এ কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে।

এছাড়া মেলায় আসা মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগানও নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরা-খবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে মেলার উভয় অংশে।  

মেলার পথ
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দু’টি মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের আটটি  পথ থাকবে। এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে।   

নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে দুই শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। দু’টি স্টল-ওয়ারি একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক কর্মী থাকবেন।

স্বচ্ছন্দে চলা-ফেরার সুবিধার্থে স্টলের সামনের চলাচল-পথে উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভ ও এর পার্শ্ববর্তী স্থানকে নান্দনিকভাবে গ্রন্থমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যাতে স্বাধীনতার স্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে।

গ্রন্থমেলার সময়সূচি                     
গ্রন্থমেলা ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

উদ্বোধনীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন
সোমবার বেলা ৩টায় গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি গ্রন্থমেলা পরিদর্শনে যাবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মানিত বিদেশি অতিথি থাকবেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ) সভাপতি রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন ও সাধারণ সম্পাদক জোসেফ ফেলিক্স বুরঘিনো প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন রয়েছে।

গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ প্রদান করা হবে। উদ্বোধন মঞ্চে সৈয়দ শামসুল হক রচিত এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা বইয়ের ব্রেইল ও অডিও সংস্করণ প্রকাশিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আধুনিক বাংলা অভিধান তুলে দেওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

গ্রন্থমেলার থিম
মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি পূর্ণ করেছে তার ঐতিহ্য ও গৌরবের হীরকজয়ন্তী। এবারের গ্রন্থমেলার মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’।

এবারের ৪০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটি বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী স্মারক হিসেবে ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২০১৬-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ, জনসংযোগ তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী, গ্রন্থমেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারোয়ার, ইভেন্ট সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইভেন্ট টাচ ইন্টারন্যাশনালের সিইও মেজর (অব.) মাইনুল হাসান প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এডিএ/এএসআর

** ২ শতাধিক সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে বইমেলা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।