অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের মোড় থেকে বইমেলার গেট পর্যন্ত মানুষের কমবেশি জটলা দুপুর থেকেই। একটু দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে চলছে কবিতা উৎসব।
অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) নেই কোনো আনুষ্ঠানিকতা, পুরোটা সময় উন্মুক্ত। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুখর হয়ে উঠবে বইপ্রেমীদের পদচারণায়। এমনটাই প্রত্যাশা লেখক-প্রকাশকের।
দুপুর আড়াইটা থেকেই সারি ধরে অপেক্ষা ছিলেন, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা। মেলায় প্রবেশের দুই দ্বার খুলেছে দুপুর ৩টায়। গেট খুলতেই তারা জমাতে শুরু করেছেন মিলনমেলা। কবিতা উৎসব থেকে মেলা, মেলা থেকে উৎসব- দু’টোই উপভোগ করার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না কেউ।
ভাষার এই মাসে বাঙালি তার চেতনায় নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে প্রতিদিনই আসে তাদের প্রাণের মেলায়। তখনই মিলনমেলা হয়ে ওঠে চেতনারও মেলা।
কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় শৃঙ্খলার সঙ্গে পেরিয়েই মেলায় ঢুকছেন দর্শনার্থীরা। কোনো অনুযোগ নেই কারও। এ নিরাপত্তায় খুশি তারা।
মেলায় আসা গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসাবা বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর মোট ২৫ দিন এসেছিলাম। এবার আজই প্রথম, দেখি কত বার আসা যায়। যতবার আসি ততবারই তো ভালো লাগে। একটা আলাদা অনুভূতি-চেতনা কাজ করে।
তিনি বলেন, এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বেশি দেখছি। পুলিশি বলয় ঢের।
আজই কি বই কিনবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে ঘুরি, পরে কেনা! তার সঙ্গে থাকা বান্ধবী মুক্তা পাশ থেকে বলেন, ঘুরবো-ফিরবো- বই দেখবো এটাই তো বই মেলার মজা। আর পছন্দের বই কেনা তো রয়েছেই।
মেলায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নেওয়াজ রচি বলেন, শীতের সুন্দর বিকেল কাটাতে বইমেলার মতো সুন্দর জায়গা আর হয় না।
তার সঙ্গে থাকা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী আজগর হোসেন ও কৌশিক বলেন, বন্ধু ঢাবিতে পড়ে। তাকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছি। ভালো লাগছে ঘুরে। কারণ পরিবেশ খুবই ছিমছাম-শান্ত-সাবলীল।
চারদিকে নতুনের সুবাস। নতুন বইয়ের সুবাস। সেই টানেই হয়তো কারও কারও আনাগোনা। তাই তো প্রবল নিরাপত্তার চাদর পেরিয়ে ঢুকলেও মুখে হাসি।
গেলো বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে ৩৫১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল মেলায়। তবে এবার বেড়ে সাড়ে চারশ’ প্রকাশনা কেন্দ্র ঠাঁই পেয়েছে। বেড়েছে মেলা পরিসরও। ৪ লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে হচ্ছে এবারের মেলা। যার মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিট ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১৫টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
মেলায় ঢুকতে বরাবরের মতো টিএসসি, দোয়েল চত্বর- এই দুই পথ রয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশে গেট তিনটি, আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট আটটি। এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
আইএ/এএ