ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বাংলা কবিতার বন্দনায় বিশ্বের কবিরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৬
বাংলা কবিতার বন্দনায় বিশ্বের কবিরা ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে/নিয়ে গেছে তারে;/কাল রাতে – ফাল্গুনের রাতের আঁধারে/যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ/মরিবার হলো তার সাধ’।

বাংলা ভালোভাবে বলতে-পড়তে না পারলেও কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা ইংরেজি অক্ষরে ঠিকই পড়তে পারেন ব্রিটিশ কবি জো উইন্টার।

পারতেতো হবেই কারণ আন্তর্জাতিক কবিতার দুনিয়ায় এ ব্রিটিশ কবি জীবনানন্দ গবেষক হিসেবেই যে পরিচিত। অনুষ্ঠানে আলোচনার একপর্যায়ে জীবনানন্দ দাশের আট বছর আগের একদিন কবিতাটির কিছু অংশ পড়লেন এ কবি।

পড়তে পড়তে বিশ্লেষণে গেলেন। জীবনান্দের কবিতার অলি-গলি ঘোরা জো উইন্টার এক পর্যায়ে বললেন, জীবনানন্দের কবিতার বিশ্লেষণ সম্ভব না। তিনি সাধারণ শব্দে অনেক গভীরে গিয়েছেন। সে গভীরের বর্ণনা দেওয়া যায় না। এটা অনুধাবন করতে হবে।

ব্রিটিশ এ কবি বলেন, শিল্প সৃষ্টিতে সফলতা আনতে হলে বিষয়বস্তুর আঙ্গিকের সঙ্গে ভাষা ও শব্দের অপূর্ব নির্মিতি দরকার। এটা জীবনান্দের কবিতায় পাওয়া যায়। এদিক থেকে জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ভাষা বা শব্দ পেয়েছে এক অপূর্ব নির্মাণ।

জীবনান্দকে শব্দ ও ভাবের নির্মাতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গদ্য আমেজে শিথিল শব্দ বিন্যাসের মাধ্যমে তিনি কবিতায় এনেছেন নতুন মাত্রা। তার কবিতা নরম নদীর মতো।

বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শুরু হয় আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব।

বাংলা একাডেমির হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে এ আয়োজনে স্লোভাকিয়া, মরক্কো, সুইডেন, চীন, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, ভারত ও বাংলাদেশের কবিরা অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে আগত কবিরা বাংলাদেশের কবিতার প্রশংসায় মেতে উঠেছেন। কবিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব সাহিত্যের দুয়ারে কড়া নেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিদেশি কবিরা।

অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে থাকা বাংলাদেশের অনেক তরুণ কবি-লেখক এবং সাহিত্যানুরাগী উপস্থিত রয়েছেন। কবিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জো উইন্টারসহ বাংলাদেশের কয়েকজন কবির কাছে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন।

এক তরুণ কবি প্রশ্ন রাখেন জো উইন্টারের কাছে, ‘কবিদের ভবিষ্যত দ্রষ্টা বলা হয়, আপনি একমত কি-না?’ ব্রিটিশ এ কবি বললেন, কবিদের অনেক বিষয় নিয়ে জ্ঞান রাখতে হয়, শুধু শিল্প সাহিত্য নয়; সব বিষয়ে তাদের পড়তে হয়। যারা সামগ্রিক পড়াশোনায় নিজেদের এগিয়ে রাখতে পারেন তাদের ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা বলা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কবি নুরুল হুদার কাছে এক তরুণ প্রশ্ন করেন, বাংলা কবিতায় অস্থিরতা চলছে, এতে আপনি একমত কি-না? এছাড়া অন্ত্যমিল ছাড়া কবিতা হওয়া না হওয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অন্ত্যমিল ছাড়া অনেক কবিতা হলেও একটি পক্ষ বলছে, অন্ত্যমিল না পেরে অনেকে গদ্য কবিতা লিখছে?

এর উত্তরে নুরুল হুদা বলেন, অন্ত্যমিল নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। বহু আগে থেকেই চলে আসছে। অন্ত্যমিল ও অন্ত্যমিল ছাড়া দু’ভাবেই কবিতা লেখা যায়। কবিতায় এ দু’য়ের কোনোটাতে বাধ্য নয়।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিদেশি কবিরা বাংলাদেশের কবিতাকে বিশ্ব সাহিত্যে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হতে বলেন। বাংলা সাহিত্য তারা পড়েন এবং এ নিয়ে আগ্রহ আছে বলেও জানিয়েছেন।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কবি আসাদ চৌধুরী ও নুরুল হুদা।

কবিতা পাঠে অংশ নেন ব্যাংক্ট বার্গ, মিলান রিচার্ড, ড. বেনাইছা বহুমালা, জাকারিয়া বহুমালা, ড. লি ফো আর, লি রো ইয়াং, ড. ফাংইয়াও চিয়েন, তাই চি চৌ, চেন সিউ জেন, আসাদ চৌধুরী, মহাদেব সাহা, রবিউল হুসাইন, আনোয়ারা সৈয়দ হক প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এডিএ/এএ

** চলছে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।