অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: মিষ্টি বাতাস বসন্তের আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে যেন। বাংলা একাডেমির পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে সে বার্তায় কান পেতেছেন রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে আসা জয়া, সুমাইয়া, মিতুয়া ও মাহফুজ।
বাংলানিউজকে বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার এবারের আয়োজনটা খুব বড়। অন্যবারের তুলনায় অনেক খোলামেলা, সব কিছু কেমন যেন পরিপাটি। এবার ঘুরে মজা পাচ্ছি।
তারা মূলত বই দেখতে এসেছেন। পছন্দ হলে নিয়েও নেবেন কয়েকটা। জয়ার বক্তব্য, ধাপে ধাপেই বই কেনা ভালো। বহনের সুবিধা যেমন হয়, বেছে বেছেও নেওয়া যায়।
যদিও বসন্তের ফাগুন এখনও আসেনি। বয়ে চলা বাতাস আসন্ন ফাগুন হাওয়ার মিষ্টি ধ্বনি হয়ে দোলা দিচ্ছে। মিষ্টি-মধুর বাতাস এদিন (বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি) মেলায় আগতদের ঘুরে বেড়াতে আরও উৎসাহ জোগাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্রী সাদিয়া। তার সঙ্গে দেখা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
বাংলানিউজকে জানালেন, সেবা প্রকাশনীর অনুবাদগুলো তার পছন্দ। সাধারণ উপন্যাসেও আগ্রহ রয়েছে। সারা বছরে নতুন-পুরনো বিভিন্ন বই সংগ্রহ করেন তিনি। আর মেলা মানেইতো নতুন বই পাওয়ার ভালো সুযোগ। সঙ্গে তার বন্ধুরা- নাজমুল, রেজাউল, হাসান, নাজিয়া।
আরও অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে উদ্যানে, সে প্রসঙ্গ পরে। আগে বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী যাওয়ার একটি ঘটনা আছে।
যেতে পথে কথা হয় লেখক, গবেষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক উপ-পরিচালক মুহম্মদ মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবারের মেলায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে- বোঝা যাচ্ছে। পরিসর বড় হওয়াটাও ভালো। ঘুরেফিরে দেখতে মেলার পরিবেশটা বেশ ভালো আজ। আশা করছি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়বে।
তার একটি দাবিও রয়েছে, বলেন, সাহিত্য কার্যক্রম যেন মেলাকেন্দ্রিক না হয়ে পড়ে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে। নতুন বই যারা বের করছেন, তারা সারাবছর লেখা চালিয়ে নিলে উৎকর্ষ সাধিত হবে।
এপারে বাংলা একাডেমি আর ওইপারে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, দু‘য়ে মিলে গ্রন্থমেলা-২০১৬। মাঝখানে পিচঢালা রাস্তা। মেলা চলাকালীন সময়ে তা মেলার আওতাধীন। বিশাল এক মেলাবেষ্টনী, ঘোরার দারুণ স্থান। সঙ্গে বাংলা ভাষা এবং অমর একুশের হার না মানা চেতনা, বইপ্রেমের মোহ সবই রয়েছে প্রাঙ্গণজুড়ে।
যদিও সংখ্যাটি প্রকাশকদের ‘বই তালিকা-নাম’ জমা দেওয়ার ওপর সে হিসেবকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি জানাচ্ছে, গতদিন (বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি) মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৩টি।
যার মধ্যে গল্প ১৩, উপন্যাস ১২, প্রবন্ধ ৪, কবিতা ১০, গবেষণা ২, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ৬, জীবনী ১, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ২, ভ্রমণকাহিনী ১,
ইতিহাস ১ ও অন্যান্য বিষয়ের ৮টি বই রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মেলার চতুর্থ দিনে বই আসার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন প্রকাশক ও একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, চতুর্থ দিন মেলায় দেড়শ’র কাছাকাছি নতুন বই আসতে পারে। রাতে যার পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এছাড়া আগামীকাল মেলার প্রথম শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আরও বেশি নতুন বই আসবে বলে আশা করছেন তারা। দর্শনার্থী বা আগতদের সংখ্যাও গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে ছুটির দিনে।
এখনও আসেনি বসন্ত, তবে প্রকৃতিতে থেকে থেকে তার দোলা যেন বাজছে। একি ফাগুন হাওয়ার মিষ্টি ধ্বনি নয়! ফাগুনের জন্য অপেক্ষা আরও সপ্তাহ খানেকের।
তাতে কী বা আসে যায়- কারণ মাঘের শেষেও নব পত্রপল্লবে সেজে উঠতে শুরু করেছে বৃক্ষরাজি। সঙ্গে দখিনা হাওয়ায় উতলা হয় নাগরিক মন।
বইমেলায় এ মন আরও উতলা হয় যখন বাতাসে ভেসে আসে সদ্য ছেপে আনা নতুন বইয়ের মিষ্টি সুবাস। স্টলে স্টলে সাজানো নিত্য-নতুন প্রচ্ছদের বই। তা ঘুরে ঘুরে দেখা। হুট করে কিনে ফেলা- সবই শুরু হয়ে গেছে।
হেঁটে হেঁটে বহু মেলাপথ পাড়ি দেওয়া। তার মধ্যভাগে অল্পস্বল্প আড্ডা এবং বসে বিশ্রামও চলছে। কেউ প্রিয় লেখকের পাশে দাঁড়িয়ে দু’টা মনের অনুভূতি প্রকাশ করছেন, লেখকও সেই নিবেদিত পাঠককে বিনিময় করছেন ভাব।
একাডেমির মূল মঞ্চে চলছে অনুষ্ঠান- অর্থাৎ আলোচনা (‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী: গবেষণা কার্যক্রম, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক)। সঙ্গে আছে গানের (সাংস্কৃতিক) আয়োজনও।
এছাড়া নজরুল মঞ্চে দাঁড়িয়ে টুকটাক মোড়ক উন্মোচন। সার্বিকভাবে আগতরা যে যার মতো মনের খোরাক পূরণে ব্যস্ত, এই না হলে বইমেলা! দিন যত যাবে এমন আনন্দঘন পরিবেশ আরও বিস্তৃত হবে- আরও আসবে নতুন বই, টানবে কাছে আরও পাশে। বন্ধন হবে দৃঢ়, ভালোবাসা হবে প্রগাঢ়...।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
আইএ/এসকেএস/এএ