ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

গল্পগুলো অ-সিরিয়াস : মেহেদী উল্লাহ

তানিম কবির, ফিচার সম্পাদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
গল্পগুলো অ-সিরিয়াস : মেহেদী উল্লাহ

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শুক্রবার চৈতন্য থেকে প্রকাশিত হলো প্রতিশ্রুতিশীল গল্পকার মেহেদী উল্লাহর তৃতীয় গল্পের বই ‘ফারিয়া মুরগির বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে’। এর আগে ২০১৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্পের বই ‘তিরোধানের মুসাবিদা’ ও ২০১৫ সালের বইমেলায় দ্বিতীয় গল্পের বই ‘রিসতা’।



এরমধ্যে তিরোধানের মুসাবিদা সেরা পাণ্ডুলিপি হিসেবে ২০১৩ সালে জিতে নেয় জেমকন তরুণ সাহিত্য পুরস্কার। পুরস্কারপ্রাপ্ত বই হিসেবে জেমকন গ্রুপের কাগজ প্রকাশনী থেকেই বইটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া এ বছরই বেহুলা বাংলা প্রকাশ করেছে তার প্রথম প্রবন্ধের বই ‘ফোকলোরের প্রথম পাঠ’।

শুক্রবার নিজের তৃতীয় গল্পের বই প্রকাশের পরপর বইমেলা প্রাঙ্গণে চৈতন্যের স্টলের সামনে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় মেহেদী উল্লাহর।

বাংলানিউজ: আপনার তো পরপর তিন বছর তিনটা গল্পের বই বের হলো?
মেহেদী: হ্যাঁ।

বাংলানিউজ: একটা বই থেকে আরেকটা বইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী? মানে কোনো নির্দিষ্ট থিম ধরে কাজ করেছেন কিনা একেকটা বইয়ে।
মেহেদী: আমার প্র্রথম বইটার নাম তিরোধানের মুসাবিদা। নামের মধ্যেই একটা মৃত্যুমৃত্যু গন্ধ আছে, গল্পগুলোর ক্ষেত্রেও তাই। আমার তিরোধানের মুসাবিদা বইটি ছিল আমার মৃত্যুচিন্তা বিষয়ক গল্পের সংকলন। দ্বিতীয় বই রিসতা, নামের মতো এখানকার গল্পগুলোও নানা ধরনের সম্পর্ক বিষয়ক।

বাংলানিউজ: সেক্ষেত্রে এবারের ‘ফারিয়া মুরগির বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে’, এই নামটা পুরো বইয়ের গল্পগুলো সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয় কি?
মেহেদী: দেয়। যদিও বইয়ের নামটি হুবহু ভেতরের একটি গল্পের নামে। তবু এই নামের মধ্যেও সামগ্রিক বইটি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। যেমন, এই গল্পে কী হয়। স্বভাবতই, ফারিয়া মুরগির বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে। কিন্তু কেন মারে? তার প্রেমিক তার কাছে এই প্রশ্ন করার সাহস পায় না। সেও নিজে থেকে বলে না। কিন্তু মারে। এ বইয়ের গল্পগুলোও এরকম, এই সমাজের, বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদেরকেও যেমন কেউ গলা টিপে টিপে মারে, কিন্তু আমরা জানতে চাইতে পারি না কেন মারে। আর যে মারে, সেও বলে না কেন মারে। এরকমই জবাবদিহিতাহীন একটা সময় না?

বাংলানিউজ: বইয়ে মোট কয়টা গল্প? গল্পগুলোর নাম মনে আছে?
মেহেদী: বইয়ে মোট ১০টা গল্প। নামগুলো হলো—সূচীপত্র দেখেই বলি: ব্রেক-আপের ব্যাক-আপ, ভূতের বাড়ির নির্মাণ কৌশল, জি মৌটুসী আমি আপনাকে শুনতে পাচ্ছি, যুদ্ধোত্তর মুক্তি, ফ্ল্যাটে শিশু ও বৃদ্ধ নিদারুণ, সাবস্ক্রাইবার অব সালমন দ্য ব্রাউনফিশ, হিজরত, শুষ্ক ঠোঁট তোমার, অফ দ্য রেকর্ড, ফারিয়া মুরগির বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে।

বাংলানিউজ: এককথায় গল্পগুলো সম্পর্কে কী মন্তব্য করবেন?
মেহেদী: গল্পগুলো অ-সিরিয়াস।

বাংলানিউজ: কী রকম?
মেহেদী: আমার ভাবতে অবাক লাগে, আগের দুইটা বইয়ের সময় কেন আমি এত সিরিয়াস ছিলাম! ২০১৫ আমার ধকলের বছর ছিল। যে যা দিয়েছে তারচেয়ে বেশি কেড়ে নেয়ার বছর ছিল। অসংখ্য হারাতে হারাতে সিরিয়াসনেস খোয়াতে খোয়াতে কখন যে ১০টা গল্প লেখা হয়ে গেছে টেরই পাই নি। হয়তো কোনো সাহিত্য সম্পাদকের অনুরোধে, কখনো নিজের তাগিদে—লেখা হয়ে গেছে। সিরিয়াসনেস না থাকলেও অভ্যাস এমন জিনিস কাউকে ছাড়ে না। সে-ই মূলত লিখিয়ে নিল। আমি বিভিন্ন কারণে এ বছরটায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি..

বাংলানিউজ: গত বছর, ২০১৫?
মেহেদী: জ্বী। তো, তার প্রভাব এই গল্পগুলোতে পড়েছে। এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। এটা আমার সাহিত্যের গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনা। এ বইয়ে যে গল্পগুলো লিখেছি, সেগুলো হয়তো এ ধরনের সময় না আসলে কখনোই লিখতে পারতাম না। কিছু লেখা নিজে থেকে লেখকের দুঃসময়ের অপেক্ষা করে, সে সময়ই তারা জন্ম নিতে চায়, এতেই তাদের সার্থকতা।

বাংলানিউজ: এখন কী লিখছেন? আগামী বছর নতুন কোনো বই হবার সম্ভাবনা আছে?
মেহেদী: অনেকদিন থেকেই একটা উপন্যাস লেখার প্ল্যান নিয়ে ঘুরছি। আশা করছি এবার লিখে ফেলতে পারব। সেক্ষেত্রে আগামী বছর উপন্যাসটা হতে পারে। আর এরমধ্যে গল্পও লিখব।

বাংলানিউজ: উপন্যাস কী নিয়ে? কী ভেবেছেন।
মেহেদী: আমি ’৯৮-এর বন্যা খুব ভালোভাবে দেখেছি। আমার মনে ভালোরকমভাবে দাগ কেটে আছে ওই বন্যার বছরটা। আমার উপন্যাসের প্রেক্ষাপটও ’৯৮-এর বন্যা।

বাংলানিউজ: সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ মেহেদী।
মেহেদী: বাংলানিউজ ও বাংলানিউজের পাঠকদের ধন্যবাদ। এখানে যুক্ত করার আছে, আমার এ বইয়ের কয়েকটি গল্পই প্রকাশিত হয়েছে বাংলানিউজের সাহিত্য পাতায়।

শিল্পী শিবু কুমার শীলের প্রচ্ছদে ৬৮ পৃষ্ঠার এ বইটির বিনিময় মূল্য ১৩৫ টাকা। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চৈতন্যের ১৫৬ নাম্বার স্টল থেকে এবং অনলাইন বুকশপ রকমারি.কমে অর্ডার দিয়ে বইটি সংগ্রহ করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
টিকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।