ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

বইপ্রেম মুগ্ধতা ছড়ালো সারাক্ষণ

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
বইপ্রেম মুগ্ধতা ছড়ালো সারাক্ষণ ছবি: রানা / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: সকালের ঝলমলে রোদে শিশুদের দাপাদাপি ছিলো দেখার মতো। বাবা-মায়ের হাতছুটে একটু সুযোগ পেলেই ভোঁ-দৌড়! সন্তানকে ধরতে পেছন পেছন অভিভাকদেরও কম ছুটতে হয়নি! আরও আছে বায়না, খুনসুঁটি ও বই কেনার গল্প।



এভাবেই কেটে যায় শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দিনের মতো সকালের শিশুপ্রহর।

পরে ভরদুপুরে বড়দের জমায়েত শুরু হতে থাকে। হেলে পড়া সূর্য যখন কাত হয়ে আলো বিলাচ্ছে, তখন দীর্ঘ হতে থাকে মেলায় ঢোকা বইপ্রেমীদের লাইন। নিজস্ব প্রহর পেরিয়ে তখন ছোটরাও যে আসেনি তা কিন্তু নয়। বাবা-মায়ের কোলে-পিঠে কিংবা হাত ধরে নানা বয়সী শিশুরাও উপস্থিত সেসময়। সঙ্গে বন্ধু-বান্ধবী, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আসাদের সংখ্যা তো অগুনতিই। রাত পর্যন্ত থাকে তার রেশ। এ যেনো আবালবৃদ্ধবনিতার বইপ্রেম। যা শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়। সারাক্ষণই বলে যায় বই ও ভাষা নিয়ে ভালোবাসার গল্প।

মেলায় এদিন নাট্যশিল্পী পিযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অসাধারণ অনুভূতি আমার। কারণ, মেলা দারুণ জমেছে। এবার প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বইমেলা যে এতোটা জমে উঠবে তা আগে ভাবিনি। বিক্রি-বাট্টাও অনেক ভালো হচ্ছে দেখলাম।

কথায় কথায় তিনি যোগ করেন নিজের ছড়ার বইটির কথাও। প্রকাশ করেছে ‘বর্ণ বটেশ্বর’, নাম ‘ইটিং বিটিং’।

একে একে ছয় দিন পার করলো এ বছরের একুশে গ্রন্থমেলা। কেমন পরিস্থিতি এবার, মানুষের আগ্রহ কেমন দেখছেন- শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাছে এমন প্রশ্ন ছিলো বাংলানিউজের।

বিস্তর কথার মধ্যে তিনি তুলে ধরেন, মেলার দুই প্রাঙ্গণ- বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুলিশি নিরাপত্তার বিষয়টি।

সৈয়দ মনজরুল বলেন, মানুষ ঘুরে আনন্দ পাচ্ছে, সেটাই বড় সার্থকতা। সবার হাতে হাতে দেখছি প্যাকেট। এতেই বোঝা যায়, বই কিনতে শুরু করেছেন তারা।

তিনি বলেন, এখন যতো দিন যাবে মেলায় আগতদের সংখ্যা শুধু বাড়বেই। প্রাণের টানেই তারা ছুটে আসবেন।

পাঠক সুমাইয়া আক্তার সেই বিকেল থেকে রাত অব্দি পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চষে বেড়ালেন রীতিমতো। স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে কিনেছেন নানারকম বই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের এ শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, উপন্যাস পড়তে বেশি ভালোলাগে আমার। বইমেলা থেকে নতুন নতুন ১০ থেকে ১৫টি উপন্যাস প্রতি বছরই কিনে সারা বছরজুড়ে পড়ি। আজও দু’টি উপন্যাস ও ছোটভাইয়ের জন্য একটি সায়েন্স ফিকশন কিনলাম। সামনে আবার আসবো, আরও কিনবো।

সুদূর বুলগেরিয়া থেকে গ্রন্থমেলায় ঘুরতে আসেন আবদুল মালেক। সঙ্গে তার সেদেশীয় স্ত্রী। হাঁটি হাঁটি পায়ে পায়ে ছোট্ট মেয়ে বানেসা মালেকও তাদের সঙ্গী।

এতো দূর থেকে এসেছেন মেলায় ঘুরতে? এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, মূলত একমাসের ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে আমরা। তবে বইমেলায় ঘুরতে পারবো, শহীদ মিনারে যাবো- এই বিবেচনায় ছুটিটা জানুয়ারির শেষ দিকে নিয়ে চলে এলাম দেশে। আমার মেয়ে বানেসাকে বাংলাদেশ ও ভাষার সঙ্গে পরিচিত করাতে চাই। আর স্ত্রী লিকোনিয়া তো বাংলা প্রায় শিখেই ফেলেছে সংসার করে করে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে তিন মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসেন ওয়াহীদুল ইসলাম। ঊর্মী, মিথিলা ও সাদিয়াকে কিনে দিয়েছেন বেশ কয়েক পদের বই। ছুটির বিকেলটা আনন্দে কাটানো আর শিশুদের বই কেনার বায়না পূরণ করতে ছুটে আসেন মেলায়।

অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে লোপা কায়সারের 'দাড়ি কমা এবং একটি পাখি' উপন্যাস। স্বামী হিসেবে স্ত্রীর এই বইয়ের প্রচারণায় মেলায় আসেন বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব কায়সার হামিদ। লোপা এবং কায়সার হামিদ দু’জনে বাংলানিউজকে বলেন, বই বের হওয়ার আনন্দ আলাদা, আর মেলা ঘোরার আনন্দ আলাদা।

শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) মেলা ঠিক যেমন জমেছিলো, শনিবারও মেলা তেমন জমে ওঠে।

অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি ভারত থেকে ফিরেই সরাসরি বইমেলায় উপস্থিত। এতো ভিড় দেখে বেশ আনন্দিত। বলেন, শুধু ভিড়ই নয়, এবার বিক্রিও হচ্ছে। পাঠকরা মেলার প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বই কিনেছেন, যা বেশ ইতিবাচক আমাদের জন্য। এছাড়া প্রকাশকরা পেয়েছেন চাহিদা অনুযায়ী স্টল, আর বড় পরিসর পেয়েছেন আগতরা। সব মিলিয়ে সুন্দর-সুষ্ঠু পরিবেশে এবারের মেলা কাটুক এটাই চাই।

মাজহার যোগ করেন, এবার নিরাপত্তা বেশ ভালো। যতো দিন যাবে নিরাপত্তায় আরও দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ, শেষের দিকে যেনো ফুটপাতকে ঘিরে বারো রকমের মেলা গড়ে না ওঠে।

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র বলছে, শনিবার মেলায় এসেছে ১৫৫টি নতুন বই। তবে শুক্রবার সবচেয়ে বেশি বই আসে। সে সংখ্যাকে শনিবার ছাড়াতে না পারলেও এদিন আসা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই নজর কেড়েছে পাঠকের।

এর মধ্যে রয়েছে, আবদুল মান্নান সৈয়দের গবেষণা গ্রন্থ ‘নজরুল ইসলাম কবি ও কবিতা’। প্রকাশ করেছে রোদেলা প্রকাশনী। মুনতাসীর মামুনের বই ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাপুরুষের সৃষ্টি করেনি’ (জার্নিম্যান বুকস), আতিউর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু সহজ পাঠ’ (জার্নিম্যান বুকস), সুজন বড়ুয়ার গল্প ‘দেবতার রাজ্যে ছেলেটি’ (রাতুল গ্রন্থ), আলম তালুকদারের ‘জোলার ছানা ভূতের ছানা’ (রাতুল গ্রন্থ), প্রভাষ আমিনের ‘স্পেটিংলি নাও’ (জোনাকী), মহাদেব সাহার কবিতার বই ‘হাতে অমৃতকুম্ভ পান করি বিষ’ (অনন্যা প্রকাশনী), মুহাম্মাদ জাফর ইকবালের বই ‘অন্যজীবন: ভৌতিক কাহিনী’ (অনুপম প্রকাশনী)।

এদিন সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই। সংখ্যা ৩৮টি। যেনো কবিতার একটি দিন পার হলো। এরপর গল্প ৩০টি, উপন্যাস ২৫, প্রবন্ধ ৯টি, ছড়া ও বিজ্ঞান ৮টি, ইতিহাস ৩টি, ভ্রমণ ২টি ও অন্য বই। সর্বমোট ১৫৫।

মেলামঞ্চের আয়োজনে যা ছিলো
শনিবার সকালে মেলায় বাংলা একাডেমি অংশে ছিলো শিশুদের সাধারণ জ্ঞান ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা। এছাড়া বিকেল ৪টায় হয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অসীমানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামনুজ্জামান খান। সন্ধ্যায় ছিলো সাংস্কৃতিক আয়োজন। তখন গানের তালে তালে ঘুরতে আসা বইপ্রেমীরা মেতে ওঠেন এই অনুষ্ঠান দেখে।

রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) মেলামঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় রয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠান। বিষয়, হীরকজয়ন্তী: অনুবাদ কার্যক্রম, অতীত থেকে বর্তমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। পরে সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক আয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
আইএ/এসএস

** সকালের বিপরীত চিত্র বিকেল-সন্ধ্যায়
** ছোট’র চাই ছবির বই, বড়জনের বৈজ্ঞানিক কল্পকথা
** ছোটদের পদচারণায় মুখর মেলার শিশু কর্নার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।