কুশলাদি বিনিময়ের পর বই ও বইমেলা নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলাপের এক পযায়ে তাম্রলিপি প্রকাশনীর স্টলে চোখ আটকে গেল! না, তেমন কিছু নয়। কোনো এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫/৬ জন ছাত্রী নেড়ে চেড়ে বই দেখছে।
কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর ইত্যাদি প্রকাশনীর সামনে গিয়ে ফের দেখা ওই তাদের সঙ্গে। এবারও তারা উল্টে-পাল্টে বই দেখছে। পরনের ইউনিফর্ম দেখে নিশ্চত হওয়া গেল, ওরা সবাই বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
কিশোরী বয়সের এই মেয়েগুলোর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া মাত্র একজন ভোঁ-দৌড়! কথা বলা যাবে না, বাসায় না বলে কলেজ থেকে সোজা মেলায় আসছি!
কিন্তু একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিফা আক্তার দাঁড়িয়ে গেল। ছুটির পর পুরান ঢাকার নিমতলার বাসায় না গিয়ে বিজিবি হেডকোয়ার্টার থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সোজা মেলায় এসছে সে। সঙ্গে আরও চার বান্ধবী।
কী বই কিনবে-? হুমায়ূন আহমেদের দেয়াল। এটা তো রাজনৈতিক উপন্যাস। পাল্টা প্রশ্ন, তাই বলে কি পড়বো না? পাশ থেকে বন্ধু তালমা আক্তার শোভা জানালো, সেও হুমায়ুন আহমেদের বই কিনবে। তবে বইয়ের নাম এখনো ঠিক করা হয়।
এখনো হুমায়ুন? শোভার পাল্টা প্রশ্ন, লেখক মরে গেলে তার লেখাও মরে যায় নাকি? তা ঠিক, লেখক মরলে লেখা মরে না। পাঠকও কমে না, লেখকের লেখা কালোত্তীর্ণ হলে পাঠকের অভাব হয় না।
শোভা ও শিফা আক্তারের সঙ্গে কথা শেষ করে শিশু চত্বরের দিকে যেতেই আরও পাঁচজনের সঙ্গে দেখা। ওদের পরনেও ইউনিফর্ম। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অর্ধেকবেলা ক্লাস শেষ করে ওরাও মেলায় এসেছে। ওদের বয়সও পনেরো/ষোলোর মধ্যে হবে।
কিশোরদের এই ছোট্ট দলে রয়েছেন তরিকুল ইসলাম খান, রাশেদুল হাসান, কামরুজ্জামান, সুরুজ্জামান ও তুষার খান। ওরা সবাই ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দুইটা পযর্ন্ত ক্লাস শেষ করে মেলায় এসছে ওরা।
এদের মধ্যে রাশেদুল হাসান ‘টো টা কোম্পানি ও বীর প্রতীকের মেডেল’ বইটি কিনেছেন। পলাশ মাহবুবের লেখা বইটি কী ধরনের বই জানতে চাইলে রাশেদুল হাসান বললেন, এটি সায়েন্স ফিকশন। হ্যাঁ কিশোর উপন্যাস ক্যাটাগরির এ বইটি সায়েন্স ফিকশন প্যাটার্নেই লেখা!
বই কেনার টাকা কই পেলে? প্রতিদিনের হাত খরচ, গাড়ি ভাড়া ও টিফিনের টাকা থেকে বাঁচানো অর্থ দিয়ে বই কিনেছি। বাবা মায়ের কাছে টাকা চাইলে দিতেন না? অবশ্যই দিতেন। কিন্তু বাসায় তো বলে আসিনি। ২টায় ক্লাস শেষ হওয়ার পর মেলায় চলে এসেছি।
মেলার নমব দিন শুরু থেকেই কিশোর-কিশোরীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদের সবাই প্রায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া। সপ্তাহর শেষদিন বৃহস্পতিবার আগে-ভাগে ছুটি হয়ে যাওয়ায় সবাই মিলে মেলায় এসেছে ওরা। সবাই কিশোর বয়সী।
সুতরাং, শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত শিশুপ্রহর যেমন ঘোষণা করা হয়েছে তেমন বৃহস্পতিবার ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কিশোর প্রহর ঘোষণা করলে মন্দ হয় না!
অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও বিকেল ঠিক ৩টায় মেলার দরজা খোলা হয়েছে। মেলা চলবে রাত সাড়ে ৮টা পযর্ন্ত। মূল মঞ্চে চলছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
এজেড/এএ