ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ‘নতুন মোড়কে পুরনো বিষয়াদি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ‘নতুন মোড়কে পুরনো বিষয়াদি’ মেলায় বই দেখছেন বইপ্রেমীরা-ছবি-বাংলানিউজ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘুরে: অদ্ভুত এক টান প্রতিদিন রাজধানীবাসীকে নিয়ে যায় বাংলা একাডেমি-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্দেশে। নগরীর সব পথ যেনো মিশেছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলায়! আর মাত্র একটি দিন, দেখতে দেখতে চলে গেলো মাসব্যাপী বইমেলা। তাই অনেক পাওয়ার মধ্যে কিছুটা না পাওয়ার হিসাবও কষছেন লেখক-পাঠক-প্রকাশক-দর্শনার্থীরা।

এ বৈষম্য কাম্য নয়
সুজন হালদার, বাড়ি মানিকগঞ্জ। শেষ সপ্তাহে কিছু বই কেনার উদ্দেশ্যে মেলায় আসা তার।

বাংলা সাহিত্যের স্নাতক পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীর কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে এক বাক্যে বলেন, এ বৈষম্য কাম্য নয়। বাংলাদেশ এখন আর সেই আগের দেশ নেই! আমরা অনেক এগিয়েছি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ কোনো সংকীর্ণ জায়গায় আটকে থাকেনি, ইতিহাস তা বলে না। এই দেশে যদি মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হতে পারে তবে আমি মনে করি, সময় এসেছে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলা আয়োজন করার। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার একটি অংশ নিয়ে আসা হয়েছে। প্রয়োজনে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা হবে।
তার সুরে সুর মেলালেন সুজনের বন্ধু তুষার চৌধুরী। পুরান ঢাকায় বাড়ি হওয়ায় একটি দিনও মেলায় আসা বাদ যায়নি তার।

একটু পিছিয়ে বাংলা একাডেমি
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নকিব রায়হান আবীর তখন সেলফি তোলায় ব্যস্ত। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বলেন, অনলাইন পত্রিকার পাশাপাশি বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইট ফলো করি। সেখানে বইয়ের তালিকা পাওয়া যায় কিন্তু আগামীকাল কী কী আয়োজন থাকছে তা পাওয়া যায় না। একাডেমির ওয়েবসাইট আরেকটু আপডেট হওয়া উচিৎ।
এ প্রসঙ্গে একাডেমির সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা ঠিক ওয়েবসাইট যতোটা ভিজিটর ফ্রেন্ডলি হওয়া উচিৎ ছিলো ফর টেকনিক্যাল রিজন, আমরা তckfটা করতে পারিনি। তবে আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মানুষ অনেক বেশি অভ্যস্ত, তাই আমরা একাডেমির পেইজে প্রতিদিন আপডেট দিচ্ছি।

মেলায় বই দেখছেন বইপ্রেমীরা-ছবি-বাংলানিউজচেনা চেনা লাগে
এবারে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত লিটিলম্যাগ চত্বর- এ মন্তব্য মুখে মুখে! কথা হয় খনন লিটিলম্যাগের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য রঘু অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বইমেলা আর বহেরা তলা একটি অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। লেখক মেলায় আসবেন আর লিটিলম্যাগ চত্বরে আসবেন না, এটা হতেই পারে না। কিন্তু এবার লেখকদের জন্য বসার জায়গা পর্যন্ত রাখা হয়নি। এখানে নতুন লেখকরা অগ্রজদের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ পেতো, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।

লিটিলম্যাগ চত্বরেই কথা হয় কবি মনির ইউসুফ ও নাজমুল আজাদের সঙ্গে। তারা বলেন, মহকুমা শহরে হালখাতা হলে দোকানিদের ভেতরেও অনেক আন্তরিকতা দেখবেন। প্রতি সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা হয়। শ্রোতাদের অংশ নেওয়া এখানে জরুরি। আলোচনায় তাদেরও সুযোগ দেওয়া দরকার।

উন্নত মম শির
কতো শত বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সাক্ষী নজরুল মঞ্চ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অস্থায়ী মঞ্চে চলছে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। তবে পুরনো স্মৃতি এখনো মনকে নাড়া দিয়ে যায়। বাংলানিউজের সঙ্গে অল্প আলাপে স্মৃতিচারণ করেন বেগম পত্রিকার আলোকচিত্রী সাইদা খানম। রোববারই (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রথম মেলায় এসেছিলেন তিনি। গেলোবার প্রকাশ হয়েছে তার ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’। তবে এবারও পাঠক আগ্রহ বেশি। আরও জানালেন, আগামীতে তার জীবনের সব ছবি নিয়ে এক্সিবিশন করার কথা ভাবছেন- জানালেন।

মেলার সাজ, একটু আপত্তি পাঠকদের
এবারের বইমেলার সজ্জা এই প্রাণের মেলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি- এমন মন্তব্য অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুরু থেকেই করে আসছেন পাঠকরা।
এ প্রসঙ্গে শিল্পী আবুল বারক আলভী বাংলানিউজকে বলেন, এটা ঠিক বইমেলার সজ্জায় বড় ধরনের বৈচিত্র্য আসছে না সেভাবে। গতানুগতিকের মধ্যে কোনোবার ভালো হয়, কোনোবার খারাপ। বইমেলার সাজসজ্জা খুব জমকালো হওয়ার দরকার হয় না। একটু আকর্ষণীয় হলেই হয়, বইমেলার ভাবগাম্ভীর্য থাকে।

তবে মুশকিল হলো চাইলেও খুব ভালো করার সুযোগ থাকে না, কারণ এটা একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। যারা অংশ নিচ্ছে তাদের কাছে থেকে ডিজাইন নিতে হচ্ছে। সময় এতো অল্প থাকে যে, পছন্দ না হলে নতুন করে করার সুযোগ থাকে না।

লো বাজেটে টেন্ডার হওয়ায় যারা অংশ নিচ্ছে তারা লো স্ট্যান্ডার্ড ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করছেন, তাদেরও তো ব্যবসার চিন্তাটা মাথায় রাখতে হয়। বাজার সাপেক্ষে স্ট্যান্ডার্ড বাজেট করা উচিৎ। কিছু লোকের কাছে থেকে যদি ডিজাইন নেওয়া যেতো যারা ভালো কাজ করে- তাহলে অনেক ভালো হতে পারতো।

প্রকাশকরা তাদের স্টল নিজেরাই সাজান, ফলে তাদের রুচি মাফিক হয়ে থাকে। স্টল সজ্জার উপর পুরস্কার দেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতায় আরও জোর দেওয়া হলে আরও ভালো হতে পারে।

মেলায় বই দেখছেন বইপ্রেমীরা-ছবি-বাংলানিউজএখনো ঘ-র-র-ঘ-র-র শব্দ নীলক্ষেতে
নাবিল বুক বাইন্ডিংয়ে রাব্বি ব্যস্ত বই বাঁধাইয়ে। শেষ দু’দিনে মেলা ধরতেই হবে। হলি আর্টিজানে হামলা ঘিরে লেখা শেখ এম. এস. হকের লেখা বইটি তারা হাতে পেয়েছে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।  

কবি অনি বলেন, বইমেলায় বই বের করা একজন লেখকের কাছে আলাদা ভালো লাগার বিষয়- অনেক বইয়ের ভিড়ে আমার বইটাও থাকছে। হ্যাঁ, প্রকাশের উদ্দেশ্য কখনও কখনও বই বিক্রি। এটা দুঃখজনক, তার বই হিতৈষীরা দেখবে এমন চাওয়াই থাকে লেখকের। মেলার শেষ দিকে বই এলে তা হয় না।

বইমেলার বাইরে মেলা
পুরনোরা ফিরে যাবে, নতুনরা জায়গা পাবে। বর্ধমান হাউস, বহেরা তলা, নজরুল মঞ্চের মতোই ছিলো ব্যাচেলর স্টাফ কোয়ার্টার। গরম তেলে ভাজা পুরি, পেঁয়াজি, পাকোড়া, রসালো জিলাপি, সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা গরম চা। যথাক্রমে সে চিত্রও পাল্টেছে। কাঠ, বেঁত, মাটির তৈরি ঘর-দোর সাজানোর জিনিসও কেনার আদর্শ জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে দোয়েল চত্বর।  

এদিকে, নতুন যোগ হয়েছে আরেক মেলা! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলা একাডেমির সহয়তায় মাসব্যাপী একুশে নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে নানা পরিবেশনা। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ছিলো মাইম শো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
এটি/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।