ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

প্রাণ ফিরেছে প্রাণের মেলায়

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৮
প্রাণ ফিরেছে প্রাণের মেলায় বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়/ছবি: সুমন শেখ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: দুপুর একটা থেকে বিকেল তিনটা। ছুটির দিনে এটুকু বিরতি দিয়েই শুরু হলো বিকেলের বইমেলা পর্ব। ততক্ষণে অবশ্য মেলা প্রাঙ্গণে বেশ পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে ধূলিওড়া বন্ধ করতে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টার ঘরে পৌঁছাতে না পৌঁছতেই মেলা প্রাঙ্গণে উড়তে শুরু করলো ধূলি। ছুটির দিনের বিকেলটা ঠিক এতটাই লোকারণ্য হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ।

মেলার বিন্যাস ও আয়োজনে এবার নান্দনিকতা খুঁজে পাচ্ছেন জনগণ। সে আকর্ষণেও মেলার মাঠে ঢু মারছেন অনেকেই।

আবার অনেকেই এসেছেন ছুটির দিনে নিজের প্রিয় লেখককে খুঁজে ফিরতে। অনেকেই পেয়েছেন, আবার অনেকেই হতাশ হয়েছেন। তবে যারা পেয়েছেন, তাদের আনন্দটা একটু বেশিই।

এদিন বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা মিলেছে বিভিন্ন নামি-দামী লেখকদের। এদের মধ্যে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, গুলতেকিন খান, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, রকিব হাসান ছিলেন অন্যতম। এসময় প্রিয় লেখকদের ঘিরে ধরে পাঠকদের অটোগ্রাফ নেওয়ার দৃশ্য ছিল চেখে পড়ার মতো।

রাজধানীর বনানী থেকে সপরিবারে মেলায় ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক। কথা হলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য ভেবেছিলাম আজ মেলায় আসা হবে না। তবে সকাল থেকে তেমন কোনো আশঙ্কাজনক খবর না পাওয়ায় বিকেলে চলে এলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে। মেলায় এসে নিজের প্রিয় লেখকদের পেয়ে এবং তাদের বইয়ের সঙ্গে অটোগ্রাফ নিতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।

সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী। গ্রন্থমেলায় উৎস প্রকাশন থেকে এসেছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ১০ খণ্ডের রচনাসমগ্র। মুক্তিযুদ্ধ, ভ্রমণকাহিনী, স্মৃতি রোমান্থন, দেশ-সরকারের রূপরেখা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর মৌলিক রচনাবলীর সমগ্র এবার একসঙ্গে পাওয়া যাবে।

শুক্রবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থমেলায় পাঠকের ভিড় দেখে ‘সন্তুষ্ট’ অর্থমন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, এত কিছুর পরে মেলায় এতো পাঠক আসছে, তার মানে প্রমাণিত হয়েছে দেশে এখন স্থিতিশীল অবস্থাই বিরাজ করছে। দেশের মানুষ যার যার কাজ নিয়ে এতোই ব্যস্ত যে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আর সময় নষ্ট করতে চায় না। তার মতে, প্রকাশনা ক্ষেত্রে ভালো লেখকের সংখ্যাও ‘বাড়ছে’।

বইমেলার দ্বিতীয় সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে মোট বই এসেছে ৩৪৪টি। এর মধ্যে ফিরোজ এহতেশামের ‘সাধুকথা: ১৩ বাউল-ফকিরের সঙ্গে কথাবার্তা’ (মেঘ), সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘অগ্রগতির শর্তপূরণ’ (বিদ্যাপ্রকাশ), মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘অনলাইন জীবন ও অন্যান্য’ (বিদ্যাপ্রকাশ), ওমর ফারুকের ‘বাবার চোখ’ (অ্যার্ডন), সেলিনা হোসেনের ‘পদশব্দ’ (এশিয়া পাবলিকেশন্স), শামসুজ্জামান খানের ‘বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্র: পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’ (রয়্যাল পাবলিশার্স), অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর ‘ক্যান্সার’ (মুক্তধারা), কায়কোবাদ মিলনের ‘মোসাদ ২’ (আবিষ্কার), জাহিদ নেওয়াজ খানের ‘মূর্তি কারিগর’ (আবিষ্কার), আনিসুজ্জামানের ‘দুইটি নাটক’ (আবিষ্কার), আহমদ রফিকের ‘জীবনানন্দ কবি, প্রেমিক ও গৃহী’ (অন্যপ্রকাশ), সুমন্ত আসলামের ‘মুখোশধারী ভয়ংকর’ (কাকলী), আনিসুল হকের ‘দেশ সেরা দশ গোয়েন্দা’ (কাকলী), সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার ‘গণমাধ্যমের লড়াই’ (অন্যপ্রকাশ), ইমদাদুল হক মিলনের ‘আধিভৌতিক’ (কথাপ্রকাশ), হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘একা এবং একসঙ্গে নির্বাচিত আশি’ (পাঠক সমাবেশ) উল্লেখযোগ্য।

বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'রশীদ উদ্দিন ॥ উকিল মুন্সী॥ বারী সিদ্দিকী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি ও গবেষক সুমনকুমার দাশ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন কবির এবং নাট্যকার, গবেষক ও বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা সাইমন জাকারিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি ও অধ্যাপক নূরুল হক।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলার গ্রামীণ সমাজ-সংস্কৃতিতে, বিশেষত হাওরাঞ্চলে যেসব সাধক লোকায়ত ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হিসেবে আসীন, তাদের মধ্যে উকিল মুন্সী ও রশিদ উদ্দিন অন্যতম। তাদের রচিত গান নাগরিক সমাজে সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন যে কয়েকজন হাতে-গোনা ব্যক্তি, এদের মধ্যে শিল্পী বারী সিদ্দিকীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক অঞ্চলের এই তিন লোকমনীষার গান রচনা ও সুর সংযোজনা ক্ষুরধার এবং তৃণমূললগ্ন। লোকায়ত বাংলার এই তিন সাধক প্রকৃতই বাঙালির ঐতিহ্যিক মননবিশ্বের উজ্জ্বল প্রতিনিধি।

আলোচকরা বলেন, কেবল নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি ও জনজীবনই নয়, সেখানকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের ধারক ও বাহক ছিলেন উকিল মুন্সী ও রশীদ উদ্দিনের মতো বাউল সাধকেরা। রূপকতার আশ্রয়ে তারা বলে গেছেন বিশ্বজগৎ ও জীবনের নানা নিগূঢ় ও অক্ষয় সত্য। মানবজীবনের প্রেম, ভালোবাসা, বিচ্ছেদ-বেদনা ছাড়াও তাত্ত্বিক দিক থেকেও তাদের গান ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। মানবীয় চেতনা ও মানব-আবেগের মর্মস্পর্শী প্রকাশ তাদের গানকে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল হক বলেন, এই তিন গুণী বাউল সাধক ও শিল্পীদের মতো বাংলার পথে-প্রান্তরে আরো অনেক বাউলরত্ন লুকিয়ে আছেন। তাদের জীবনবোধ ও জীবনচেতনা অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও জাতিসত্তার উৎসের সন্ধান করতে হবে।

সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস লি. (বাফা)’ শিল্পীবৃন্দ নৃত্য পরিবেশন করেন। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মীনা বড়ুয়া, আবুবকর সিদ্দিক, মো. মুরাদ হোসেন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), মো. হোসেন আলী (বাঁশি) এবং ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড)।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।