ব্যতিক্রমী এ বইটি মেলায় এনেছে প্রকাশনা সংস্থা- পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী শহীদ কবির।
এ বইয়ের মূল বক্তব্য জানতে চাইলে ফরিদ কবির বলেন, আমার বিভিন্ন সময়ে রচিত প্রেমের কবিতাগুলো থেকে বাছাই করা ৩১টি কবিতা নিয়েই এ সংকলন। এ বইয়ের মূল উপজীব্য প্রেম। আর প্রেমের সেসব কবিতার চিত্ররূপ কেমন হতে পারে তা তুলে ধরেছেন দেশের ৩১ জন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী।
কবিতা ও ছবি, এমন ভিন্নধারার বই প্রকাশ করে কেমন অনুভূতি হচ্ছে জানতে চাইলে এ কবি বলেন, একজন কবিতাকর্মী হিসেবে সব সময়েই চিত্রকলার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। আমার মতে, কবি ও শিল্পীর মধ্যে মিল সবচাইতে বেশি। উভয়েই নিজেদের ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করেন নানা চিত্রকল্প। একজন শব্দে ও ছন্দে, অন্যজন রঙে ও রেখায়। আমি দেখতে চেয়েছিলাম, আমার ভাবনাগুলি শিল্পীদের রঙে ও রেখায় কীভাবে মূর্ত হয়। যেসব শিল্পীকে আমি আমার কবিতা অবলম্বন করে ছবি আঁকতে বলেছি, তারা প্রায় সকলেই সানন্দে সাড়া দিয়েছেন। এতে আমি খুবই আপ্লুত। তাদের আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই।
‘শিল্পী মনিরুল ইসলাম প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে সামনে বসিয়ে রেখে আমার প্রতিকৃতি এঁকেছেন! এ অভিজ্ঞতার কোনো তুলনা নেই। শিল্পী শহীদ কবির বইটির জন্য দুর্দান্ত একটি প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছেন। তার আঁকা প্রচ্ছদ কেবলই প্রচ্ছদ নয়, একটি শিল্পকর্মই। মনিরুল ইসলামের আঁকা প্রতিকৃতিটিও তাই। শিল্পীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক যে এমন ভালোবাসায় মোড়ানো, এ বই করতে গিয়ে তাও অনুভব করতে পেরেছি। আমার ধারণা, এ বই এ দেশের প্রকাশনা ইতিহাসে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটি বই হিসেবে চিহ্নিত হবে। এর আগে অনেক বইয়েই অনেক শিল্পী কবিতা নিয়ে ইলাস্ট্রেশন বা স্কেচ আঁকলেও পেইন্টিং বা চিত্রকর্মের ব্যবহার সম্ভবত আগে কখনো হয়নি। একটিমাত্র বইয়ের জন্য এতো জন, অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৩৩ জন শিল্পী এর আগে কোনো বইয়েই যুক্ত থাকেননি। ’
ফরিদ কবির আরও বলেন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়ককে এই বইয়ের পরিকল্পনার কথা জানালে তিনি কোনো দ্বিধা না করেই সঙ্গে সঙ্গে এমন ব্যয়বহুল বই প্রকাশে রাজি হন। এমন একটি বই প্রকাশের দুঃসাহস তিনি ছাড়া আর কেউ করতেন বলে মনে হয় না। তার প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। যেসব শিল্পী আমার কবিতা অবলম্বনে ছবি এঁকে দিয়েছেন তাদেরকেও আমার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই।
প্রেমমন্ত্র কবিতার বইয়ে যেসব শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন তারা হলেন- আবুল বারক আলভী, ফরিদা জামান, সৈয়দ ইকবাল, তরুণ ঘোষ, ঢালী আল মামুন, ওয়াকিলুর রহমান, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, শেখ আফজাল হোসেন, দিলারা বেগম জলি, রোকেয়া সুলতানা, মাসুক হেলাল, সমর মজুমদার, পীযুষ দস্তিদার, নাসিমা কুইনি, অশোক কর্মকার, রাকীব হাসান, ধ্রুব এষ, রবিউল ইসলাম, রনি আহম্মেদ, অভিজিৎ চৌধুরী, নাজিব তারেক, সিলভিয়া নাজনীন, নাজিয়া আন্দালীব প্রিমা, মোস্তাফিজ কারিগর, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, নারগীস পলি, এসএম সাইফুল ইসলাম, আমজাদ আকাশ, নিয়াজ চৌধুরী তুলি ও হাবিব পাপ্পু।
এর আগে ফরিদ কবিরের প্রকাশিত বইগুলো হলো- কবিতা: হৃদপিণ্ডে রক্তপাত (প্রকাশক- মুক্তধারা), ওড়ে ঘুম ওড়ে গাঙচিল (পল্লব পাবলিকেশন্স), অনন্ত দরোজাগুচ্ছ (অনন্যা), মন্ত্র (অন্যপ্রকাশ), ওঁ প্রকৃতি ওঁ প্রেম (অাগামী), আমার কবিতা (অনন্যা), ফরিদ কবিরের শ্রেষ্ঠ কবিতা (সূচীপত্র), ফরিদ কবিরের প্রেমের কবিতা (বিদ্যাপ্রকাশ), নির্বাচিত কবিতা (ঐহিক কলকাতা); প্রবন্ধের বই: পুরোনো ও নতুন কবিতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (অন্যপ্রকাশ), আমার গদ্য (অ্যাডর্ন); আত্মজীবনী: আমার গল্প (আগামী); অনুবাদ: এন্থনি মাসকারেনহাসের 'লিগ্যাসি অব বাংলাদেশ'র অনুবাদ- বাংলাদেশ একটি রক্তাক্ত দলিল (হাওলাদার), মুক্তিযুদ্ধের ওপর বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অবলম্বনে- মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক (পল্লব), সম্পাদনা: নির্বাচিত কবিতা (সিনোরিনা), পঞ্চাশ বছরের প্রেমের কবিতা (অন্যপ্রকাশ), কবিদের লেখা প্রেমের গল্প (অন্যপ্রকাশ), দুই বাংলার কবিতা (পল্লব), দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ গল্প (শিখা প্রকাশনী), স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি (মাওলা ব্রাদার্স), একুশের কবিতা (অনন্যা), একুশের গল্প (অনন্যা)।
এছাড়া সম্পাদনা করেছেন ছোটকাগজ- 'বর্ণ এবং শব্দ', 'মন্ত্র' ও শিল্পসাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা- 'নতুনধারা' এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা 'কাগজ'।
কবি ফরিদ কবিরের জন্ম ঢাকায়, ২২ জানুয়ারি ১৯৫৯ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক এ কবি। বর্তমান তিনি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এইচজে