ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মেলায় উমবের্তো একোর ‘গোলাপের নাম’ নিয়ে জি এইচ হাবীব

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
মেলায় উমবের্তো একোর ‘গোলাপের নাম’ নিয়ে জি এইচ হাবীব

ঢাকা: অমর একুশে বইমেলা-২০২০-এ প্রকাশ পেয়েছে জি এইচ হাবীবের অনুবাদে বিশ্বনন্দিত ইতালিয়ান উপন্যাসিক, সমালোচক, দার্শনিক উমবের্তো একোর কালজয়ী উপন্যাস ‘দ্য নেম অব দ্য রোজ’র বাংলা ভাষান্তর ‘গোলাপের নাম’। 

অনুবাদ গ্রন্থটি বইমেলায় এনেছে প্রকাশনা সংস্থা- বাতিঘর। প্রচ্ছদ করেছেন সোমনাথ ঘোষ।

বইটির গায়ের দাম রাখা হয়েছে ১৩৩৪ টাকা। মেলায় বাতিঘরের ৪৪৩, ৪৪৪, ৪৪৫ নম্বর স্টলে মিলছে স্টলে মিলছে  ‘গোলাপের নাম’।  

উমবের্তো একোর এ উপন্যাস ও এটি অনুবাদের কারণ জানতে চাইলে জি এইচ হাবীব বলেন, মধ্যযুগের অন্তিম পর্ব। ১৩২৭ খৃষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ইতালির একটি সম্পন্ন বেনেডিক্টীয় মঠে মধ্যবয়স্ক ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাসী বাস্কারভিলের উইলিয়াম তার সঙ্গী বেনেডিক্টীয় শিক্ষানবিশ আসোকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন, যীশুখৃষ্টের দারিদ্র্য বিষয়ক একটি বিতর্কে অংশ নেয়ার জন্য। তারা মঠে পৌঁছে দেখেন সেখানে এক সন্ন্যাসীর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। উইলিয়ামের ওপর এই মৃত্যু-রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব পড়ে। দেখতে দেখতে, সাত দিনের মধ্যে, বীভৎস এবং আশ্চর্যজনকভাবে খুন হয় ছয় সন্ন্যাসী। উইলিয়াম যেভাবে এসব হত্যার রহস্য উন্মোচন করেন তা একদিকে যেমন অত্যন্ত আকর্ষণীয়, অন্যদিকে অনুপম চিন্তা-উদ্রেককারী।  

‘কিন্তু উপন্যাসটি নেহাত একটি গোয়েন্দা কাহিনী নয়; হুডানিট-এর কাঠামোতে লেখক বাইবেলের বিশ্লেষণ, মধ্যযুগীয় দর্শন, সাহিত্য, নন্দনতত্ত্ব এবং সাহিত্যতত্ত্বের সঙ্গে প্রতীকতত্ত্ব তথা সেমিওটিক্সের সমন্বয় ঘটিয়ে গ্রন্থটিকে এক অসামান্য স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন। যে-কারণে একটি রহস্য কাহিনী হওয়ার পরেও এটি বারবার পড়া যায়, এবং প্রতিবারই পাঠক নতুন চিন্তার খোরাক পান, উপলব্ধি করেন যে চল্লিশ বছর আগে লেখা বইটি আমাদের এই সময়েও খুবই প্রাসঙ্গিক। এবং বেশ জোরের সঙ্গেই বলা যায় এই প্রাসঙ্গিকতা সহজে ক্ষুণ্ণ হবার নয়। ইতালীয় ভাষায় লেখা, উমবের্তো একোর ইতিহাস আশ্রিত এই বিপুলায়তন রহস্যকাহিনী’ Il nome della rosa(১৯৮০), সেটার উইলিয়াম উইভারকৃত ইংরেজি অনুবাদ The Name of the Rose (১৯৮৩)। উপন্যাসটিকে ভিত্তি করে জাঁ-জাক আনু পরিচালিত, প্রখ্যাত অভিনেতা শন কনারি অভিনীত, ও ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি লেখককে অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিপুল খ্যাতি আর জনপ্রিয়তা এনে দেয়। Il nome della rosa তথা গোলাপের নাম ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর নানান ভাষায় অনুবাদসহ পাঁচ কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। ’

বিশাল এ অনুবাদকর্ম প্রকাশ করতে পেরে কেমন অনুভুতি হচ্ছে জানতে চাইলে জি এইচ হাবীব বলেন, ১৬ বছর আগে এটির অনুবাদ শুরু হয়েছিল। ফাঁকে ফাঁকে অনুবাদের কাজ চলতো। এর মাঝে আমার আরও ১০টা বই প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু এটা করা হয়ে ওঠেনি। প্রথমবার দ্য নেম অব রোজ পড়ে খুবই ভালো লেগেছিল। প্রায় সাথে সাথেই অনুবাদ করতে বসে যাই। কিন্তু দেখি যে নানান বিষয়ে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়, বর্ণনা, বাক্যের দৈর্ঘ্য। সেসব জটিলতা কাটাতে কাটাতে অনেক সময় লেগে গেল। যেহেতু ‘গোলাপ’ টানা করে যেতে পারছিলাম না, মাঝে ‘গোলাপ’র সাথে সংশ্লিষ্ট ‘লাতিন ভাষার কথা’টা করলাম। ভেতরে ভেতরে একটা চ্যালেঞ্জ আর অস্থিরতা অনুভব করছিলাম, সব মিলে একটা কার্নিভাল পরিস্থিতি বইটাকে নিয়ে। এই করতে করতে ১৬ বছর কেটে গেল। মনে হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন সময় নিয়ে করতে পারলে ভালো হতো। যাই হোক, কিছু জায়গায় অসন্তুষ্টি থাকলেও মোটামুটি পারা গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণের সময় আবার এডিট করতে হবে।  

‘ভয় হচ্ছে যে কতটুক কি করতে পারলাম। কি রকম গালিটালি খাই। আসলে পরিস্থিতি তো জটিল। সব বইয়ের সহজ অনুবাদ চায় লোকে। মূল বই জটিল হলেও সেটার সরল অনুবাদ চাই তাদের। এমনিতে মার্ডার মিস্ট্রি। তার সাথে নানান ঐতিহাসিক ধর্মতাত্ত্বিক দার্শনিক, ভাষিক, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার আছে। পটভূমিকাও আমাদের কাছ থেকে একটু দূরের। পুরো টেক্সটে নানান ভাষার শব্দ/ফ্রেজ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু অনুবাদ দেয়া হয় নাই। তাতে জটিল হয়ে গেছে। ইংরেজি অনুবাদে তো একটা ফুটনোট বা কোনো ভূমিকা নাই। ’

জি এইচ হাবীবের অনুবাদে উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে আছে- গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের উপন্যাস নিঃসঙ্গতার একশ' বছর, নরওয়েজীয় লেখক ইয়েস্তান গার্ডারের দর্শনবিষয়ক বই সোফির জগৎ, আইজ্যাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন ফাউন্ডেশন, আমোস তুতুওলার উপন্যাস তাড়িখোর, ইতালো কালভিনোর অদৃশ্য নগর ইত্যাদি।  

জি এইচ হাবীবের জন্ম ১৯৬৭ সালের ১০ মার্চ, ঢাকায়। পেশা শিক্ষকতা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০  
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।