বইমেলা থেকে: বইমেলা যে কেবলই বই বিক্রি আর লেখক-পাঠকদের মেলা তা নয়। মেলাকে ঘিরে জমে ওঠে আড্ডা।
তবে এবারের মেলার চিত্র বিভিন্ন দিক থেকেই বেশ ভিন্ন। করোনার দীর্ঘ বন্ধের পর মেলা হওয়ায় এ আয়োজনে দর্শনার্থী হয়ে আসছেন অনেকেই। আসছেন পাঠকও। তবে কোনো একটা অপূর্ণতা যেন রয়েই গেছে সবার হৃদয়ে। বিশেষ করে লেখকদের দেখা না পাওয়া এ আক্ষেপের অন্যতম কারণ বলেই মন্তব্য পাঠকদের।
অন্যান্যবার মেলায় যেখানে লেখদের সঙ্গে পাঠকরা যুতসই আড্ডা দেন এবার সেখানে করোনার কারণে মেলায় আসছেন না লেখকরা। বইপ্রেমীদের ভিড় থাকলেও তারাও উপলব্ধি করছেন লেখদের উপস্থিতির। ফলে পরিবার বা বন্ধু নিয়ে বসে গল্প হলেও হচ্ছে সৃজনশীলতার চর্চা এমনটাই মন্তব্য পাঠক শ্রেণির।
এ বিষয়ে কথা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ঈশিকা রওণক বলেন, এ বইমেলাতো স্রেফ মেলা নয়, আমাদের জন্য একটা উৎসবও। প্রতিদিন বিকেল হলেই বন্ধুরা মিলে এখানে চলে আসি। মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে যেন একটা উৎসবের আমেজ থাকে। সবার সঙ্গে দেখাও হয়ে যায় আবার মাঝে মধ্যে লেখকদের সঙ্গেও জমে ওঠে গল্প। তখন তাদের চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হতে পারি আমরা। এতে নিজেদের চিন্তাশক্তিরও বিকাশ ঘটে। বই পড়ে তো অবশ্যই, তবে সরাসরি গল্প-আড্ডা খুব বেশিই ইফেক্ট ফেলে এ উন্নয়নে। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। মেলার অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো লেখকের দেখা নেই।
বাংলা একাডেমির নতুন ভবনের সামনে পুকুর পাড়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন মঞ্চের আশপাশ, লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন স্টল বা প্যাভিলিয়নের পাশে আড্ডা জমা বইমেলার নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, লেখার ধরণসহ নানা বিষয় ওঠে আসে সেসব আড্ডায়। তবে এবার সেভাবে নেই তার কিছুই। তাইতো ছুটির দিনেও শুধুমাত্র একটু ঘোরাঘুরি আর বই কেনার মধ্য দিয়েই কেটে যাচ্ছে বইমেলার দিনগুলো।
এদিকে শুক্রবার (২ এপ্রিল) পুরো মেলা ঘুরে দেখা যায়, থেমে নেই বিক্রি। মেলাতে এখন যারা আসছেন তারা বেশির ভাগই বইয়ের ক্রেতা। মেলার শুরু থেকেই এবার বিক্রি কম এমনটা শোনা গেলেও এ সময়ে এসে কিছু বই বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে বইমেলার সময় কমিয়ে দেওয়ার ফলে প্রত্যেকেই এখন দেরি না করে বা আড্ডার পরিবর্তে বই কেনাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সাইদুল ইসলাম নামে এক পাঠক বলেন, ছুটির দিন দেখে আজ মেলায় এলাম। কিন্তু মেলার যা সময় তাতে ঘুরে ঘুরে বই দেখে কেনার অবস্থা তো নেই। তাই যতটুকু পেরেছি লিস্ট থেকে কিনেছি কিছু।
আর মেলার সময় পরিবর্তনের কারণে বিক্রি কমেছে বলে মন্তব্য প্রকাশকদের। বিশেষ করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরিবর্তে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। কেননা সন্ধ্যার পরেই বইয়ের বিক্রিটা হয় বলে মন্তব্য তাদের।
এছাড়া বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ পাঠকের সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি বই বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে অল্প কিছু। আর এখন পর্যন্ত গল্প, উপন্যাসের চাহিদাই পাঠকদের কাছে বেশি রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২১
এইচএমএস/আরবি