ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বিশ্বকাপের স্মরণীয় আপসেটগুলো

তৌহিদুল আলম, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫
বিশ্বকাপের স্মরণীয় আপসেটগুলো ছবি: (ফাইল ফটো)

ঢাকা: পাঠক ভারতীয় হিন্দি সিনেমা ‘লগন’ দেখেছেন নিশ্চয়ই! ক্রিকেটকে পুঁজি করেই একদল গ্রামবাসীর ইংরেজদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর গল্প নিয়েই সিনেমাটি নির্মিত হয়। ওই চলচ্চিত্রে আন্ডারডগ গ্রামবাসীরা ইংরেজ সেনাদলকে এক উইকেটে হারিয়ে চমক জাগায়।



সিনেমার মতোই বিশ্বকাপ আসরেও বড় বড় দলগুলোকে এভাবেই চমকে দিয়ে জয় তুলে নিয়েছে ক্রিকেটের পুচকে দলগুলো। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আসর থেকেই ছোট দলগুলো ফেভারিট দলগুলোকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে আসছে। আন্ডারডগ দলগুলোকে নিয়ে বড় দলের তাচ্ছিল্যের উচিত জবাব দেওয়ার ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো।

আইরিশ রূপকথা
ইংল্যান্ডের সঙ্গে আইরিশদের রয়েছে দীর্ঘ বৈরীতার ইতিহাস। ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় ইংল্যান্ড যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে আয়ারল্যান্ডের চেয়ে। কিন্তু সেই ইংল্যান্ডকেই ২০১১ সালের বিশ্বকাপ মঞ্চে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। কেভিন ও ব্রায়ানের ব্যাট যেন কথা বলছিল আইরিশ বিদ্রোহীদের হয়ে।

ব্যাঙ্গালোরে সেদিন আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ড করেছিল ৩২৭ রান। বিরতির সময় ক্রিকেট বোদ্ধারা ধারণা করেছিলে হেসে-খেলে জিতবে ইংরেজরা। ১০৬ রানের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের ৪ উইকেট পড়ে গেলে সে ধারণাই সত্য হতে যাচ্ছিলো।

কিন্তু কেভিন ও’ব্রায়ান পাল্টে দিলেন সব হিসেব নিকেশ। ৪৯ বলে সেঞ্চুরি করে গড়লেন বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত তার ৬৩ বলে ১১৩ রানের ইনিংসটিই আয়ারল্যান্ডকে এনে দেয় তিন উইকেটের ঐতিহাসিক জয়।

পাকিস্তানকে বিদায় করে দিল আয়ারল্যান্ড
২০০৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আইসিসির ক্রিকেট বাণিজ্য। কারণ আসরের অন্যতম দুই শিরোপা প্রত্যাশী ভারত এবং পাকিস্তানকে বিদায় নিতে হয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই।  

২০০৭ সালের ১৬ মার্চ পাকিস্তানকে ১৩২ রানেই গুটিয়ে দিয়েছিল আইরিশরা। পরে বৃষ্টির কারণে খেলা দেরিতে শুরু হলে আয়ারল্যান্ডকে জয়ের জন্যে ৪৭  ওভারে ১২৮ রানের টার্গেট  দেওয়া হয়। তিন উইকেট হাতে রেখেই সুপার এইটে জায়গা করে নেয় আয়ারল্যান্ড

বাংলাদেশ ‘জায়ান্ট কিলার’ 
২০০৭ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ভারতকে বলে কয়েই হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ পোর্ট অব স্পেনে মাশরাফির বোলিং তোপে রাহুল দাব্রিড়ের ভারত গুটিয়ে যায় ১৯১ রানে। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসানের হাফ সেঞ্চুরিতে পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় টাইগাররা।

টাইগারদের প্রোটিয়া বধ
২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ৭ এপ্রিল গায়ানাতে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২৫২ রান জমা করে স্কোরবোর্ডে। আশরাফুলের ৮৭ রানের ইনিংসটিই পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। ২৫৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের ত্রয়ী স্পিনারের (রফিক, রাজ্জাক ও সাকিব) বোলিং ঘূর্ণিতে ১৮৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।

টাইগারদের পাকিস্তান বধ
পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রতাপশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে বাঘের গর্জন শুনিয়েছিল আমিনুল ইসলামের বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে প্রথম কোনো দলের বিপক্ষে সেটিই ছিল টাইগারদের প্রথম জয়।

৩১ মে নর্দহ্যাম্পটনে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ তাদের স্কোর বোর্ডে জমা করেছিল ২২৩ রান। পাকিস্তান অপ্রত্যাশিতভাবে গুটিয়ে যায় ১৬১ রানে।

চমকে দিয়ে সেমিফাইনালে কেনিয়া
২০০৩ বিশ্বকাপে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেমিফাইনাল পৌঁছে যায় আইসিসির সহযোগী দেশ কেনিয়া। এখনও পর্যন্ত আইসিসির কোনো সহযোগী দেশের বিশ্বকাপে এটাই সেরা সাফল্য।   সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে ৫৩ রানে হারিয়ে।

নাইরোবিতে আগে ব্যাট করে ২১০ রান করেছিলে কেনিয়া। ২১১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৬৭ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। লেগ স্পিনার কলিন্স ওবুয়া ২৪ রানে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট।

কেনিয়ার ওয়েস্টইন্ডিজ বধ
উপমহাদেশে বসেছিল ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপ আসর। সে আসরের বড় অঘটনটির জন্ম দিয়েছিল কেনিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭৩ রানে হারিয়েছিল আইসিসির সহযোগী দেশটি।

আগে ব্যাট করে ১৬৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল কেনিয়া। কিন্তু ১৬৭ রান তাড়া করতে নেমেই ৩৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে বসে ক্যারিবীয়রা।   শেষ পর্যন্ত ৯৩ রানেই অল আউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মরিস ওদুম্বে ১৫ রানে নেন তিন উইকেট।

প্রথম ওয়ানডেতেই বাজিমাত করেছিল জিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ১৩ রানে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল বিশ্বকে। ১৯৮৩ এর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ৯ জুন বি গ্রুপের ম্যাচে অজিদের মুখোমুখি হয় ডানকান ফ্লেচারের জিম্বাবুয়ে।

ম্যাচ শুরুর আগেই আলোচনা হচ্ছিল ডেনিস লিলি, থমসনদের মতো অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের কিভাবে সামলাবে পুঁচকে জিম্বাবুয়ানরা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডানকান ফ্লেচার ৬৯ রানের ইনিংস খেললে ৬০ ওভারে জিম্বাবুয়ে ২৬৯ রানের স্কোর দাঁড় করায়।

ফ্লেচার বোলিংয়েও ৪২ রানে চার উইকেট নিলে ২২৬ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

ইংলিশ আভিজাত্যে আঘাত
১৯৯২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ৯ রানে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।   ১৮ মার্চ অস্ট্রলিয়ার অ্যালবুরিতে গ্রাহাম গুচ, ইয়ান বোথাম, গ্রাহাম হিক, অ্যালান ল্যাম্বদের নিয়ে গড়া ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ ১৩৪ রান তাড়া করতে গিয়ে গুটিয়ে যায় ১২৫ রানে। অ্যাডো ব্র্যান্ডেজ ২১ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন।

ওলোঙ্গায় কূপোকাত ভারত
১৯৯৯ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পথেই এগুচ্ছিল ভারত। কিন্তু ১৯ মে লেস্টারে ভারতের পাকা ধানে মই  দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের পেসার হেনরি ওলোঙ্গা। ৬ বলে ৩ উইকেট নিয়ে দলকে এনে দেন তিন রানের অবিশ্বাস্য এক জয়।

সেদিন আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২৫২ রান। ভারত শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওভার বাকি থাকতেই ২৪৯ রানে অলআউট হয়ে যায়।

নেইল জনসন একাই হারান দক্ষিণ আফ্রিকাকে
নেইল জনসনের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়ে আরেকটি ঐতিহাসিক জয় পায় জিম্বাবুয়ে।   ৯৯ সালের ২৯ মে  ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে আগে ব্যাট করে নেইল জনসনের ৭৬ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে জিম্বাবুয়ে ৬ উইকেটে ২৩৩ রান জমা করে স্কোরবোর্ডে।

২৩৪ রান তাড়া করতে নেমে ২৫ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়ারা ১৮৫ রানে অলআউট হলে ৫১ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জিম্বাবুয়ে। নেইল জনসন ২৭ রানে নিয়েছিলেন তিন উইকেট।

১৯৭৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারে ভারত
আইসিসির প্রথম সহযোগী দেশ হিসেবে ১৯৭৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশ নেয় শ্রীলঙ্কা। সেই আসরেই ভারতকে ৪৭ রানে চমক দেখিয়েছিল লঙ্কানরা।  

আগে ব্যাট করে সুনীল ভিতামুনে, রয় ডায়াস এবং দিলীপ মেন্ডিসের হাফ সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কা জমা করে ২৩৮ রান। ২৩৯ রান তাড়া করতে নেমে লঙ্কান লেগ স্পিনার সোমচন্দ্র ডি সিলভা ২৯ রানে তিন উইকেট নিলে ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।