তামিম এবং মুশফিকের ব্যাটিংয়ে চাপা পড়ে গেল একটা নাম। কে তিনি? ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ, নাকি বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি? অনেকেই হয়তো এই দুই বোলারের পারফরম্যান্স কাঁটাছেড়া করে একটা নাম বসিয়ে দেবেন।
টস জিতলেন। আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করলেন তামিম-মুশফিক-সৌম্য সরকার তাদের ব্যাটিং দিয়ে। তিনশ’র উপরে রান করলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে ইতিহাসে তাদের সবচেয়ে বড় স্কোরটা গড়লো বাংলাদেশ ঐ ম্যাচে। ৩২৯ রানের আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের স্কোর ছিল এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই মিরপুরে ৩২৬। এবার এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি! তা-ও বাংলাদেশ প্রথম দেখলো সেই পাকিস্তানেরই বিপক্ষে। সিরিজ শুরুর আগে অনেকেই বাংলাদেশকে ফেভারিট বলেছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি সেই দাবিটা প্রথম করেছিলেন যিনি তাঁর নাম সাকিব আল হাসান। ম্যাচের আগের দিন তিনি বলেছিলেন; `পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরাই ফেভারিট। ওদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার এটাই আমাদের সেরা সুযোগ। ’ কেন? সেই প্রশ্নের জবাব সাকিব আল হাসান এবং তাঁর দল দিয়েছে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে।
আর সেই জয়ের পেছনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ভূমিকাকে মোটেও খাটো করে দেখার উপায় নেই। ব্যাটিং অর্ডার সাপলিং। বোলিং চেঞ্জ। ফ্লিড প্লেসমেন্ট। সব কিছুই প্রায় নিখুঁতভাবে করেছেন তিনি। আর এসব কিছুর নিটফল- দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অধিনায়ক মাশরাফির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। মাশরাফি বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ভাল নেতা। নিজেকে উজাড় করে দেয়া পারফরমার। এসব কিছু মাথায় রেখেও বলতে হচ্ছে, সত্যিই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটা এখন মাশরাফির জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো। তার উপর বাড়তি চাপও তৈরি হয়ে গেল। কারণ, এ ম্যাচটা জিতলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। আর সেটা করতে পারলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর বিশ্বকাপজয়ী আরেকটা দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। প্রত্যাশার চাপটা তাই দলের অন্য ক্রিকেটাররাও নিশ্চয় টের পাচ্ছেন।
মাশরাফি অবশ্য শনিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়ে দিলেন; হোয়াট ওয়াশ! সেটা অনেক পরের কথা। আপাতত আমাদের চিন্তায় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। আর ঐ ম্যাচটা জিততে চাই আমরা। জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চাই। ’
সিরিজ জয়ের জন্য শুধু একজন অধিনায়ক মাশরাফিই যথেষ্ট এমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। পারফরম করতে হবে তাঁর দলের বাকি ক্রিকেটারদেরও। আর পাকিস্তান নামক দলটার বিপক্ষে প্রতিদিন টস জিতবেন আর আগে ব্যাট করে তিনশ’র বেশি রান দাঁড় করবেন, তারপর ওদের অলআউট করবেন। ম্যাচ জিতবেন। এতো সহজভাবে ক্রিকেটীয় সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা না করাই ভাল। তবে সব সময় সব কিছু আপনার পক্ষে থাকবে না, এটা মাথায় রেখে পরিস্থিতি অনুযায়ী দলকে যিনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন, হাজার রকম প্রতিকূলতার মধ্যেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলকে জেতাতে পারবেন তিনি-ই ভাল অধিনায়ক। সেটা বোঝার জন্য মাইক বিয়ারলির ‘আর্ট অব ক্যাপ্টেন্সি’ না পড়লেও চলে।
তবে বাঙালির ক্রিকেটবোধে যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাবল্য অনেক বেশি। তাই নিজেদের অবস্থান থেকে একশ আশি ডিগ্রি ঘুরে যেতেও আমাদের সময় লাগে না! পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ হারালেই হয়তো বলা শুরু হয়ে যেতে পারে; ‘এই ক্যাপ্টেনের চেয়ে সাকিবই ভাল ছিল!’তখন হয়তো সবাই ভুলেই যাবেন, এই মাশরাফির নেতৃত্বে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভাল ক্রিকেট খেলেছে। পারফরম্যান্স দিয়ে ক্রিকেট বোদ্ধাদের নজর কেড়েছে। ‘তোমাদের পাশে ছিলাম। আছি। থাকবো। ’ এই কথাগুলো যে শুধু বিজ্ঞাপনের ভাষা নয়; বাংলাদেশ দল আর বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে এটাই বাঙালির বিশ্বাস। সেটা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জও আমাদের সামনে। এবং সেই চ্যালেঞ্জটা সাকিব-মাশরাফিদের চ্যালেঞ্জের চেয়ে অনেক বড়।
মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এগিয়েছে। কিন্তু মাঠের বাইরে আমাদের ক্রিকেটবোধেও অনেক পরিবর্তন এসেছে, উন্নতি হয়েছে মানসিকতায় সেটা প্রমাণ করার আপাতত ভাল মঞ্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজটা। সেটা ভুলে গেলে, অন্যায় করা হবে মাশরাফি-মুশফিক-সাকিব-তাসকিন-রুবেলদের প্রতি। তবে তামিমের মতো বড় ক্রিকেটারেরও মনে রাখা উচিৎ একটা সেঞ্চুরি করে সেটা উদযাপানের সময় গ্যালারির দিকে মুখ বন্ধ রাখার সংকেত পাঠানো ঠিক উন্নত ক্রিকেটবোধের পরিচায়ক নয়। ঐ দর্শকরা তো আপনাদের পারফরম্যান্স দেখতেই মাঠে আসেন। আর তারা আছেন বলেই আপনাদের নিয়ে এতো মাতামাতি। আপনার হাতের সাংকেতিক ভাষা নয়, আপনার ব্যাটের ভাষাটা দর্শকদের কাছে একটা বার্তা যাক; আপনাদের আনন্দ দেওয়াই আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৫
জেএম