ফেভারিট। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ফেভারিট! চারদিকে চলছে এই কোরাস গান।
আমরা তাতে কিছু মনেও করছি না।
কেন কিছু মনে করছেন না তার ব্যাখ্যাটাও দিলেন খুব সহজভাবে, ‘গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে। বিশ্বকাপেও তারা ভালো ক্রিকেট খেলে এসেছে। অভিজ্ঞতার দিক থেকেও তারা তারুণ্যনির্ভর এই পাকিস্তান দলটার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। সুতরাং, ফেভারিট তারা ভাবতেই পারে। ’ সিরিজ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রায় নির্লিপ্তভাবে বলছিলেন ওয়াকার ইউনিস !
এই নির্লিপ্তিতার আড়ালে অন্য এক ওয়াকার ইউনিসও হয়তো আছেন। যিনি তার দলের ক্রিকেটারদের তাঁতিয়ে দেবেন এই বলে; দেখো, বাংলাদেশ নিজেদের ফেভারিট বলছে! পারফরম করে দেখিয়ে দাও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে ফেভারিট নামক যে মুকুট তোমরা মাথায় পরেছো, তাতে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণাও রয়েছে। ফেভারিট তোমরা। কিন্তু সিরিজটা জিতবো আমরা।
বাংলাদেশের জন্য ভয় এরকম নিলিপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলে যাওয়া ওয়াকার এবং তার দল। বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে অকল্যান্ডে মাঠে নামার আগে সবাই এবি ডি ভিলিয়ার্সের সাউথ আফ্রিকাকে এগিয়ে রেখেছিলেন। সে সময়ও ওয়াকার ইউনিস বলেছিলেন, ‘হয়তো তাই। কিন্তু পাকিস্তান মাঠে নামবে জয়ের জন্য। ’ ম্যাচটা কিন্তু জিতেছিল পাকিস্তান। এবং জিতিয়েছিল তার বোলাররা। আরো স্পস্ট বললে বলতে হবে তার দলের বা হাতি পেসাররা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও পাকিস্তানের পেসাররা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও ম্যাচ শুরুর আগে ছোট করে একটা ফুটনোটও দিতে হচ্ছেÑ পাকিস্তান দলে ফিরেছেন সাঈদ আজমল নামের একজন স্পিনার। এক সময় যাকে বিশ্বের সেরা অফ স্পিনার বলা হচ্ছিলো। কিন্তু অ্যাকশন শুধরে ফিরে আসা আজমল তার বোলিংয়ের বিস্ময়টা হারিয়ে ফেলেছেন কি-না সেটাই দেখার বিষয় হতে পারে। তবে প্রত্যার্বতন ঘটানো সাঈদ আজমলের কাছে বাড়তি কিছু চান না তাঁর কোচ। ওয়াকারের চাওয়া খুব ছোট। ‘ওর কাছে আমরা তার পারফরম্যান্সটাই চাই!’ তাহলে চাইতে আর বাকি থাকলো কি?
ওয়াকার ইউনিস আরও একটা জিনিস চান তার দলের কাছে। জয়। আর তার জন্য তরুণ ক্রিকেটারদের পারফরম করতে হবে। এবং সেই সামর্থ্য তাদের আছে। সেটা বিশ্বাস করেন পাকিস্তান কোচ। এরকম একটা তরুণ দল নিয়ে কাজ করা যে কোনো কোচের জন্যই একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটাই নিতে পছন্দ ওয়াকারের। শুধু পাকিস্তান কোচের কথাই বলছি কেন, পাকিস্তান দলকে যিনি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই আজহার আলী নিজেও অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টস করতে নামছেন। এবং সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। তাহলে মাঠের লড়াইটা কি অভিজ্ঞ বাংলাদেশের বিপক্ষে তারুণ্য নির্ভর পাকিস্তানের? চারদিকের আওয়াজ শুনে তাই মনে হবে। কিন্তু পাকিস্তান আসলে এমন একটা দল যাদের ফেভারিট বললেও বিপদ। আবার আন্ডারডগ ভাবলেও বিপদ! কারণ, পাকিস্তানিরা নিজেরাও জানেন না তারা কখন কি করবেন!
ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে যান ১৬ বছর আগে নর্দাম্পটনের মাঠে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল কেউ কি ভেবেছিলেন, পাকিস্তানকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ? দেশপ্রেমে অন্ধ কোনো বাংলাদেশিও বোধহয় সেদিন ভাবতে পারেননি বাংলাদেশ জিতবে। কিন্তু জিতেছিল। তারপর পদ্মা, সিন্ধু দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। অনেক কথা হয়েছে।
অনেকে ওই ম্যাচের মধ্যে অনেক কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিংবা এখনো করছেন! ষোল বছর আগে বাংলাদেশের সেই জয়ে পরাজিত দলের সদস্য ছিলেন ওয়াকার ইউনিস। এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওটাই একমাত্র জয়।
আর সেই জয়ের প্রসঙ্গ উঠে পড়তেই ওয়াকার বললেন, ‘ওই দিনে বাংলাদেশ প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে পাকিস্তানের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছিল। বলতে পারেন ওটা বাংলাদেশেরই দিন ছিল। সেবার বিশ্বকাপে ওই ম্যাচটা আমি খেলেছিলাম। সেই ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্ত আমার মনে আছে। বোলিং-ফিল্ডিং-ব্যাটিং সব জায়গায় বাংলাদেশ আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল।
কিন্তু এবার যে মাঠে কোনো বল গড়ানোর আগে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ! বিপদটা সেখানেই। ফেভারিট ‘চাপটা’ বাংলাদেশ নিতে পারবে তো?
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এএ