ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অনবদ্য বোলিংয়েই ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
অনবদ্য বোলিংয়েই ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর থেকে: ব্যাটিং নয়, বোলিং দিয়েই এশিয়া কাপে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগারদের বোলিং তোপে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৫১ রানে হারিয়ে দাপুটে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।

মাশরাফিদের দেয়া ১৩৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৪ বল বাকি থাকতে ৮২ রানে অলআউট হয় আরব আমিরাত।

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুযারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আরব আমিরাতের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা বেশ আশা জাগানিয়া করেছিলেন দুই টাইগার ওপেনার সৌম্য ও মিথুন। দু’জনের ধাঁরালো ব্যাটিং একরকম খাপ খোলা তরবারির মতোই কচু-কাটা করছিল আরব আমিরাতের বোলারদের।

প্রথম চার ওভার কোন রকম ঝক্কি ছাড়া পার করলেও পঞ্ম ওভারে আমজাদ জাভেদের প্রথম ডেলিভারিটি মিথুন খেলতে গিয়ে একরকম বিপত্তিই ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলটি টেনে পুল করে মিডউইকেট দিয়ে উঠিয়ে মারলে ক্যাচের সম্ভাবনা জাগে। কিন্তু ক্যাচ ড্রপ হলে এই যাত্রায় বেঁচে যান মিথুন। এরপর অবশ্য আর ফিরে তাকাতে হয়নি দুই টাইগার ওপেনারকে।

বেশ জোরালো এক একটি শট খেলে দলকে যখন বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ষষ্ঠ ওভারের মো: শাহজাদের দ্বিতীয় ডেলিভারিটি সৌম্য ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে খেলতে গেলে সোজা ক্যাচ উঠিয়ে দেন মিডঅনে। সেখান থেকে বলটি তালুবন্দি করেন আমজাদ জাভেদ। ফলে ব্যক্তিগত ২১ রানেই ফিরতে হয় সৌম্যেকে। ফিরে যাবার আগে মিথুনের সঙ্গে ৪৬ রানের দারুণ এক জুটি গড়েছেন এই টাইগার ওপেনার।

সৌম্যর ফিরে যাবার পর আক্ষরিক অর্থেই দলের হাল একাই ধরে রাখেন মিথুন। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির এলেও প্রথম ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। দশম ওভারে রোহান মুস্তফার তৃতীয় বলটি খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৬ রানে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন ফাহাদ তারিকের হাতে। টাইগারদের দলীয় সংগ্রহ তখন ৭২ রান।

এরপর দলের সঙ্গে ৯ রান যোগ করে মিথুন ফিরে যান ব্যক্তিগত ৪৭ রানে। রান আউটের ফাঁদে পড়া মিথুনের পর ব্যাট হাতে দলের হয়ে একমাত্র লড়ে গেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তার লড়াকু অপরাজিত ২৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১৩৩ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

পরিতাপের বিষয় হলো সৌম্য, মিথুন ও রিয়াদ ছাড়া দলের অন্যকোন ব্যাটসম্যানই ২০ রানের কোঠা পার করতে পারেননি। মুশফিকুর রহিম ৪, সাকিব আল হাসান ১৩ ও নুরুল হাসান সোহান খেলেন ০ রানের হতাশাজনক ইনিংস।

আরব আমিরাতের হয়ে বল হাতে মো: নাভেদ, আমজাদ জাভেদ ২টি এবং মো: শাহজাদ ও রোহান মুস্তফা নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।

জবাবে, জয়ের জন্য ১৩৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তাসকিনের প্রথম ওভারেই পা হরকান রোহান মুস্তফা। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্যর হাতে, কিন্তু মিস! এই যাত্রায় রোহান বেঁচে গেলেও পরের ওভারে আল আমিনের হাত থেকে রেহাই পাননি আরেক ওপেনার মো: কলিম। দ্বিতীয় ওভারে আল আমিনের তৃতীয় বলটি কলিম মিডঅনের উপর দিয়ে খেলতে গেলে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রানের খাতা না খুলেই।

এরপর দ্বিতীয় উইকেটে মো: শাহজাদের সঙ্গে ২৩ রানের জুটি গড়ে মাশরাফির শিকার হয়ে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৮ রানে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন রোহান। আরব আমিরাতে দলীয় সংগ্রহ তখন ২৫ রান।  

এরপর আবার মাশরাফির আঘাত। আর তাতেই ব্যক্তিগত ১ রানে সাজঘরের পথ ধরেন সাইমান আনোয়ার।

বল হাতে আরব আমিরাতকে ধ্বংসের নেশায় মেতে উঠেন মুস্তাফিজ। ৮ম ওভারের পর পর দুই বলে মো: শাহজাদ ও    স্বপ্নিল পাতিলকে ফিরিয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন। কিন্তু আমজাদ জাভেদ তৃতীয় বলটি সতর্কতার সঙ্গে খেললে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হন মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজের পর আরব আমিরাতকে গুটিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন দুই টাইগার স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। ১১তম ওভারে রিয়াদের পঞ্চম কৌশলি বলটি আমজাদ জাভেদ খেলতে গেলে নিজের উইকেট নিজেই ভেঙে হিট আউট হয়ে প্যাভিলনের পথে হাঁটা শুরু করেন। পরের ওভারে সাকিবের দ্বিতীয় বলটি ফাহাদ তারিককে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক সোহানের হাতে। আর সোহান বেশ আরামেই তারিককে স্ট্যাম্পড করে আরব আমিরাতের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটান।

সাকিবের পর আবর আমিরাত শিবিরে আঘাত হানেন রিয়াদ। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলটি সাকলাইন হায়দার ডাউন দ্য উইকেটে এসে সোজা কাভার অঞ্চলের দিকে উঠিয়ে মারলে তা তালুবন্দি করেন মাশরাফি মর্তুজা।

তবে, আরব আমিরাতের হয়ে এদিন একাই লড়েছেন মো: ওসমান। টাইগারদের ধাঁরালো বোলিংয়ের সামনে লড়াইটি তিনি  শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬তম ওভারে তাসকিন আহমেদের তৃতীয় ডেলিভারিটি তার অফস্ট্যাম্পে আঘাত করলে ব্যক্তিগত ৩০ রানেই ফিরে যেতে হয় সাজঘরে।

তাসকিনের পর বল হাতে টাইগারদের হয়ে শেষ আঘাতটি হানেন সাকিব। ১৮তম ওভারে তার চতুর্থ বলটি আহমেদ রাজা ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে খেলতে গেলে সোহান তাকে স্ট্যাম্পড করলে ১৪ বল বাকি থাকতেই ৮২ রানে অলআউট হয় আরব আমিরাত। আর বাংলাদেশ পায় এবারের টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম এবং টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। এর আগে টাইগাররা সর্বোচ্চ ৭১ রানে জয় পেয়েছিল আয়ার‌ল্যান্ডের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে মাশরাফি, সাকিব, রিয়াদ, মুস্তাফিজ নিয়েছেন ২টি করেউইকেট। আর আল আমিন ও তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।

ব্যক্তিগত অপরাজিত ৩৬ রান ও ২ উইকেট নিয়ে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
এইচএল/এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।