কেন এই ‘দশা’ কক্সবাজারে জন্ম নেওয়া ‘বাংলার ব্র্যাডম্যান’ মুমিনুল হকের? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে মুমিনুলের ‘অযোগ্যতা’ অনুসন্ধান করা যাক।
বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গড় মুমিনুল হকের।
ক্রিকেট মহলে মুমিনুল হকের ভাবমূর্তি টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবেই; অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কিংবদন্তি জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ভারতের ভিভিএস লক্ষ্মণ, ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টায়ার কুক, পাকিস্তানের ইউনিস খানের মতো। টেস্টের ব্যাটিং লাইনআপের খুঁটি বলে পরিচিতি গড়ে ওঠে তাদের।
বাংলাদেশের টপঅর্ডারে ব্যাটসম্যান মুমিনুল হকেরও পরিচিতিটা এমনই হয়ে উঠেছিল। তিনি নামছেন মানে একটা ঝলমলে ইনিংস খেলে দলের স্কোরটাকে সম্মানজনক পর্যায়ে পৌঁছে দেবেন।
দলের নির্বাচক আর কোচের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরে মুমিনুল ‘ভালো খেলছেন না’ বিধায় তার বিকল্প দলে নেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন সামনে আসে, কেমন ‘ভালো’ খেলছেন না মুমিনুল? তার বিগত ছয় টেস্ট ইনিংস হলো- ৫, ৭, ২৭, ১২, ২৩ ও ৬৪। যে কোনো ধরনের ক্রিকেটে ইনিংস- ১৫, ৪৬, ৬, ০ ও ৭৯ (মুমিনুল প্রধানত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন)। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়া সিরিজকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭৩ রানের একটি ইনিংসও আছে। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে হালের বিরাট কোহলি বা স্টিভেন স্মিথ— প্রায় সব ব্যাটসম্যানকে ব্যাটিং খরায় যেতে হয়েছে, যেতে হয়। মুমিনুলের পুরো ক্যারিয়ারের সঙ্গে তুলনায় যদি ওপরে বর্ণিত তার সংগ্রহের তালিকা ব্যাটিং খরার পরিচয় দেয়, তাহলে এবার সামনে আসে মুমিনুলের বিকল্প হিসেবে টপঅর্ডারে খেলার সুযোগ পাওয়া ব্যাটসম্যানদের পরিসংখ্যানের প্রসঙ্গটি।
দুর্দান্ত ধারাবাহিক তামিম ইকবাল ছাড়া টেস্টের টপঅর্ডারে সবসময়ই অদল-বদল করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কারণ এই টপঅর্ডারের তিন নম্বর পজিশন পর্যন্ত ব্যাট করতে নামা বাকি দুই ব্যাটসম্যানের কারোরই সংগ্রহ মুমিনুলের ‘ভালো না খেলার বিকল্প’ হিসেবে মনে হয়নি খোদ নির্বাচকদেরই।
টি টোয়েন্টি-ওয়ানডে-টেস্ট মিলিয়ে কখনো ওপেনিংয়ে, কখনো ওয়ানডাউনে খেলছেন দলের অন্যতম দুই প্রতিভাবান ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান। এদের মধ্যে আবার সাব্বির টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে স্পেশালিস্ট হিসেবেই পরিচিত। ইমরুলের টেস্টে গড় ২৭.৬৬। আর সাব্বিরের গড় ৩০.০০। প্রথমজনের শেষ ছয় ইনিংসের হিসাবটা এমন— ০, ০, ৩৪, ৩৬, ১ ও ৭৮। ওয়ানডে-টি টোয়েন্টি মেজাজী সাব্বিরের সংগ্রহটা— ০, ৪১, ৪৩, ২২, ১৬ ও ০। প্রথম শ্রেণি বা যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রথমজনের সংগ্রহ—০, ৩৬, ৮, ৭ ও ৬৭; অপরজনের ০, ১, ৩৫, ৬৫ ও ০। দু’জনের কেউই আবার প্রস্তুতি ম্যাচে মুমিনুলের তুলনায় রান পাননি।
তুলনার এই কথিত ‘ফারাক’ সামনে এলে যদি বলা হয়ও, মুমিনুল বিগত ভারত ও শ্রীলঙ্কা সিরিজে দুই টেস্টের চার ইনিংসে রান পাননি। তাহলে কেন রান পাচ্ছেন না তিনি? মুমিনুল কি সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না? এই ব্যর্থতা কি শুধুই মুমিনুলের? নাকি দলের অন্যতম প্রতিভাবান একজন ব্যাটসম্যানের ফর্মহীনতার দায় পরামর্শক পর্যায়ের কারও ওপরও বর্তায় না?
একটি হিসাব মতে, চন্ডিকা হাতুরুসিংহে টাইগার দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে মুমিনুল সাত টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরে ১৫ টেস্টে মাত্র একটি সেঞ্চুরি। সপ্তম টেস্ট পর্যন্তও যার গড় ছিল ৭৫.৫০, তার গড় হাতুরুসিংহে আসার পর নামতে নামতে ঠেকেছে ৪৬.৮৮-এ।
কেন এই ‘নক্ষত্র পতন’ ঘটছে? সেই প্রথম প্রশ্ন, কেন এই ‘দশা’ ‘বাংলার ব্র্যাডম্যানের’? তার প্রতিভা কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? অনিচ্ছায় কিংবা ইচ্ছায়, উপেক্ষায় কিংবা আক্রোশে? দীর্ঘদিন পর টেস্ট খেলতে নেমে রান সংগ্রহের তাগাদার মানসিক চাপে?
সব প্রশ্নবাণে একসঙ্গে বিদ্ধ হওয়ার আগে টিম ম্যানেজমেন্ট বা সংশ্লিষ্ট পর্যায় আপাতত বিবেচনায় নিতে পারে মুমিনুলের দেশের মাটিতে সাফল্যকে। তার সর্বোপরি গড় ৪৬.৮৮ হলেও দেশের মাটিতে গড় ৫৮ এর ওপরে। আর দেশের মাটিতেই এখন টাইগাররা টেস্ট খেলছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে টপঅর্ডারের ব্যর্থতা এই ভাবনায় ‘ফলদায়ক’ ঝড় তুললে লাল-সবুজ দলের জন্যেই মঙ্গল!
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
এইচএ/