ঢাকা, শনিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৪ রমজান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মনু-মালকা বানুর স্মৃতির মসজিদ

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৫
মনু-মালকা বানুর স্মৃতির মসজিদ

চট্টগ্রাম: ‘মালকা বানুর দেশেরে, বিয়ার বাইদ্য আল্লা বাজেরে/মালকা বানুর সাতও ভাই, অভাইগ্যা মনু মিয়ার কেহ নাই। মালকা বানুর বিয়া হইবো, মনু মিয়ার সাথে রে…’ লোকগানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মনু মিয়া ও মালকা বানুর জীবনের ইতিহাস।

তাঁদের নামে তৈরি করা মসজিদ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলায়।

বাংলার সুবেদার মুঘল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহজাদা সুজা’র সেনাপতি ছিলেন শেরমস্ত খাঁ।

এই শেরমস্ত খাঁর পুত্র জবরদস্ত খাঁ (মনু মিয়া)। তিনি কাট্টলীর জমিদার দেওয়ান বদিউজ্জমানের বোন খোরসা বানুকে বিয়ে করেন। নিঃসন্তান হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাঁশখালীর মালকা বানুকে।

আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামে মনু মিয়ার বাড়ি। তিনি এই গ্রামে মুঘল আমলের শেষদিকে নির্মাণ করেন একটি মসজিদ, যেটি ‘মনু মিয়া মসজিদ’ নামে পরিচিত। তবে তিনি প্রথম স্ত্রী খোরসা বানুর নামে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।  

ইতিহাস বলছে, নির্মাণের পর থেকে মসজিদটি দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন অবস্থায় ছিল। ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বাড়াতে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ২০১০ সালে মসজিদটিতে টালি সংযোজন ও সংস্কার করে। ২০ ও ৪০ ফুট আয়তনের মসজিদের দেওয়ালজুড়ে এবং ভেতরে-বাইরে ফুটিয়ে তোলা হয় সুন্দর কারুকাজ, মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ ও দুইপাশে রয়েছে ছোট আকৃতির কয়েকটি গম্বুজ। বর্তমানে ফরিদুল হক চৌধুরীর বংশধররা মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করছেন।

মনু মিয়া মৃত্যুবরণ করার পর পাশের কাজীর পাহাড় এলাকায় তাঁকে কবর দেওয়া হয়। মনু মিয়ার ২য় শ্বশুরবাড়ি বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নে। শ্বশুর আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন জমিদার। তাঁর সাত পুত্র ও একমাত্র কন্যা মালকা বানু চৌধুরী। কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার পর নিঃসঙ্গ পিতা মালকা বানুর নামে খনন করেন দিঘি ও একটি মসজিদ। এটি ‘মালকা বানু মসজিদ’ নামে পরিচিত। দিঘিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তবে দিঘির পশ্চিম পাশে শত বছরের প্রাচীন মসজিদটি টিকে আছে। মসজিদের পূর্বপাশে দেওয়ালে ফরাসী ভাষায় লেখা একটি ফলক ছিল, যেটি ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যায়।

সেখানে লিপিবদ্ধ ছিল-‘মুঘল শাসনামলের শেষদিকে জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন মালকা বানু চৌধুরীর পিতা। মালকা বানু চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের বংশধর মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরী ১৯৭৮ সালে (১৩৮৪ বাংলা) মসজিদটি প্রথম সংস্কার করেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে ২০১০ সালে (১৪১৭ বাংলা) মসজিদটিতে টালি সংযোজন ও সংস্কার করে। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধররা মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করছেন’।  

মালকা বানুও ছিলেন নিঃসন্তান। মনু মিয়ার মৃত্যুর পর তিনি চলে এসেছিলেন বাঁশখালীর সরল গ্রামে বাবার বাড়িতে।  

মনু মিয়ার মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ভেসে আসে কল্যাণের আহ্বান, হাইয়া আলাল ফালাহ- এসো কল্যাণের পথে। কেউ মনু-মালকা বানুর রুহের মাগফেরাত কামনা করে আজও দোয়া চান মহান আল্লাহর দরবারে, দু’হাত তুলে জানান ফরিয়াদ।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৫
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।