চট্টগ্রাম: বিএনপির আর্ন্তজাতিক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধরী বলেছেন, নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে মনে করি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হবে নির্বাচন দিয়ে।
‘এই ডেমোক্রেটিক অর্ডার আসতে হলে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে আসতে হবে। ৫ আগস্টের পর রাজনীতি উন্মুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হবে নির্বাচনের মাধ্যমে-এটা বিএনপি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। যা সংস্কার করা প্রয়োজন, তা করতে এই সরকারকে বিএনপি শুরু থেকে বলে এসেছে- সেই সহযোগিতা করবে। এখন উন্মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ আছে, কিন্তু এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু না। তাই জাতীয় নির্বাচনটা বিএনপির প্রধান দাবি। এটা নিয়ে সবার মতের পার্থক্য থাকতে পারে, থাকাটাও স্বাভাবিক। কারণ আমরা এখন সবাই সবার বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি, যে যার কথা বলতে পারছে।
‘আমরা আমাদের কথা বলছি, অন্য দল তাদের কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। এ মতের পার্থক্য থাকবে, এটা সহজে অনৈক্য ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু নির্বাচন হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শুরু- এটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে এবং মানতে হবে। এখানে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। বিএনপি বলছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা শুরু হবে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান এটাই’।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির সরকার আসবে। তারপর বাকি সব কাজগুলো বা সংস্কার করতে পারবো। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু না করে তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো করে লাভ হবে না। স্থানীয় নির্বাচন তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করার যে মাধ্যম, সেটি না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করার মাধ্যম জাতীয় নির্বাচন, সেটার মাধ্যমে যখন আমরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার পাবো, সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অনান্য দিকগুলোকে আরও অনেক শক্তিশালী করার জন্য এগিয়ে যাবো।
ইসরাফিল খসরু বলেন, বাংলাদেশের বিশাল অংশ তরুণ সমাজ। তাদের বাইরে রেখে দেশ গঠন সম্ভব নয়। বিএনপির ৩১ দফায় যুব উন্নয়ন নীতিমালার কথা বলেছি, যুবকদের সম্পৃক্ত করা, তাদের সাথে একটা ওপেন ডায়ালগ থাকা। বিএনপি এটাও বলছে, যুব উন্নয়ন নীতিমালা করবে যুব সমাজের মতামতের ভিত্তিতে। আমরা যুব সমাজকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্র গঠন তাদের ছাড়া সম্ভব না, তাদের সম্পৃক্ততা রেখে রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। তাদের যে চাহিদা এটা বুঝার একটা বিষয় আছে। আমরা যে শিক্ষা ব্যবস্থা কথা বলছি, একটা জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা- এটা কিন্তু তাদের চাহিদার ভিত্তিতে করতে চাচ্ছি। রাষ্ট্র গঠনে তরুণদের যে ভূমিকা থাকবে, এটা বিএনপি ভালোভাবেই অনুভব করে। যার কারণে তরুণরা আমাদের দলে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আমি নিজেও দলের পক্ষে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। ভবিষ্যতে তরুণরা এ সুযোগ আরও বেশি পাবে। একসময় রাজনীতি বিমুখ ছিল তরুণরা, বিএনপি চায়, তরুণরা রাজনীতিতে আসুক। এ ক্ষেত্রে তরুণদের অগ্রাধিকার দিবে বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির মূল কাজটা হচ্ছে ৩১ দফা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া। আমরা রাষ্ট্র মেরামত নিয়ে কি চিন্তা করছি, বিএনপির চিন্তা কি, রাষ্ট্র গঠনে এটা কিন্তু ৩১ দফার মধ্যে বিবরণ দেওয়া আছে। আমরা এটা এখন জনগণের সামনে উন্মুক্ত করেছি, ডিসকাশনের জন্য। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের মূল কাজ হচ্ছে এটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, ৩১ দফা আরও কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায় এটা হচ্ছে মূল কাজ। দলকে গুছিয়ে রেখে সংঘবদ্ধ রাখা, সাংগঠনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করাটা মূল লক্ষ্য।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের ক্ষেত্র দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলনের ফসল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি ১৫ বছর সংগ্রাম করেছে, নির্যাতন, নিপীড়নের স্বীকার হয়েছে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। এটা তো একটা প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে। জনমনে যে হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা একদিনের না। ধীরে ধীরে এ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং বিএনপিসহ বিরোধী মতের ওপর দমন নিপীড়ন দেখে ক্ষোভটা মূলত সৃষ্টি হয়েছে। এর বিরূপ একটা প্রভাব জনমনে আসছে এবং ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি বিএনপিসহ ১৫ বছরে যারা আন্দোলন করেছে সব দলের আন্দোলনের ফসল ৫ আগস্টের এই প্রেক্ষাপট। গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি জনগণের ভোট, ভাতের অধিকারের জন্য মাঠে থেকেছে। বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে শরীক দলগুলোকে নিয়ে এই আন্দোলন এগিয়ে নিয়েছে। ১৭ বছরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আগস্ট মাসে হয়েছে, যে ক্ষোভের সৃষ্টি ১৫-১৭ বছরের। পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আমরা আগস্ট মাসে দেখেছি।
জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাকারীরা এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র জনতা হত্যার সাথে জড়িতদের এখনও গ্রেপ্তার করতে না পারাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। গত ১৭ বছর ধরে গুম, খুনের সাথে যারা জড়িত এবং গত জুলাই আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত সময়ে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যদি বর্তমান সরকার এদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারে, তাহলে সরকারের প্রতি মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হবে। এই অনাস্থা যদি দূর করতে হয়, তাহলে দ্রুত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতেও তাদের বিচার কার্যকর করতে হবে। এটা না হলে কিন্তু আমাদের ইতিহাসে এটি একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হবে। বিচার হওয়া মানে আমরা একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলাম। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়।
তারেক রহমানের বিচক্ষণ নেতৃত্বে বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের দল। বিএনপির সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য গত ১৫ বছর যে আন্দোলন করেছে, এটা রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা জনগণের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। একটা রাজনৈতিক দল বিরোধী দলে থাকার সময়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে জনগণের ভাতের অধিকার আদায়ে। বিএনপি শতভাগ সেই দায়িত্ব পালন করেছে। ১৭ বছর আওয়ামী লীগের গুম, খুন, মামলা ও হামলার পরও বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। এটার মূল কৃতিত্ব দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সিনিয়র নেতাদের দৃঢ়তা, বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীনতা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিচক্ষণ নেতৃত্ব।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নীরবে অনেক কাজ করছেন, মানবিক কাজ। দুস্থ নেতাকর্মী, আহত নেতাকর্মী বা সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করছেন মানবিক দিক থেকে। ইদানিং মিডিয়ার কল্যাণে কিছুটা জনসম্মুখে আসছে। তিনি এসব কাজ বছরের পর বছর করে যাচ্ছেন। এটা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।
নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলেই আমরা দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ইতিমধ্যে অনেক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যেখানে অভিযোগ আসছে, অভিযোগের ভিত্তিতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি গণমুখী দল। আমাদের নেতাকর্মী দ্বারা জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাই না। এক্ষেত্রে আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি এবং নিয়ে যাবো- এটা উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্ষচক্ষু উপেক্ষা করে টিকে থাকার মূল শক্তি ছিল-ঐক্য। বিএনপি একতাবদ্ধ ছিল এবং বর্তমানেও একতাবদ্ধ আছে। একতাবদ্ধ না থাকলে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়ে। ঐক্যের কারণেই বিএনপি এত বেশি শক্তিশালী।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৫
এমআই/টিসি