ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গে শাসকদলের ‘ত্রাস’ শাহজাহান গ্রেপ্তার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
পশ্চিমবঙ্গে শাসকদলের ‘ত্রাস’ শাহজাহান গ্রেপ্তার

কলকাতা: দীর্ঘ ৫৬ দিন পর পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন শাসকদলের মদদপুষ্ট উত্তর চব্বিশ পরগনার ত্রাস শেখ শাহজাহান। কমপক্ষে ৪২টি জামিন অযোগ্য মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তবুও বহাল তবিয়তে সন্দেশখালিতে রাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু চিত্র পাল্টে যায়, চলতি বছরের ৫ই জানুয়ারি থেকে।

সম্প্রতি রেশন দুর্নীতির মামলার কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর হাতে গ্রেপ্তার হন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। অভিযোগ, সরকারি রেশন (চাল, গম ইত্যাদি) মানুষের মধ্যে বণ্টন না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিতেন তিনি। তাকে জেরা করে শাহজাহানের হদিস পান তদন্তকারী কর্তারা।  

৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়ি তল্লাশিতে গিয়ে অনুগামীদের হাতে রক্তাক্ত হন ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্মকর্তারা। বাধ্য হয়ে পালিয়ে আসেন তারা। সেই থেকে শাহজাহান ছিলেন ‘নিরুদ্দেশ’।  

এরপরই শাহজাহানের অনুগামীদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামেন সন্দেশখালির বাসিন্দারা। সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেন নারীরা, পাশে থাকেন পুরুষরা। এতে একের পর এক অনুগামীরা ঘর ছাড়া হতে থাকেন।  

তখনই জানা যায়, নিয়ম করে রাতের অন্ধকারে সন্দেশখালির ঘরের নারীদের তুলে নিয়ে যেতেন শাহজাহানের অনুগামীরা। এতটাই তাদের দাপট ছিল যে, গ্রামের পুরুষদের কিছু করার ক্ষমতা ছিল না। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বিরোধিতা করলেই পরের দিন লাশ পরে থাকত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির। এই নারকীয় ঘটনা এক বা দুদিনের নয়, সন্দেশখালিতে চলে আসছিল বছরের পর বছর।

জোর করে জমি দখল, চাষের জমি কেটে নোনা পানি ঢুকিয়ে দেওয়া, বেআইনিভাবে জমি দখল, নারী নির্যাতন, লুটপাট, রাহাজানির মধ্যদিয়ে ক্রমে ক্রমে এক অটোচালক হয়ে ওঠেন উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের বেতাজ বাদশা।  

এ অঞ্চলের সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহান কোনোদিন এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। স্থানীয় নারীদের অভিযোগ, এমপি, বিধায়ক, স্থানীয় নেতা, পুলিশ সবাইকেই সব জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ কোনোদিন তাদের কষ্টের কথা কানে তোলেনি।

বহু অভিযোগ জমা শাহজাহানের নামে। অথচ না দেখার ভান করেছিল পুলিশ, এমনই অভিযোগ গ্রামবাসীর। সে অঞ্চলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী কর্তাদের পদচারণায় এসব প্রকাশ্যে আসে।  

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রেপ্তার করা হয় তৃণমূল নেতা শাহজাহানকে। মিনাখা অঞ্চল থেকে গ্রেপ্তারের পর সোজা তাকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। ১৪ দিনের জেল পুলিশি হেফাজত চাইলেও আদালত শাহজাহানকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু, এদিন শাসকদলের অত্যন্ত প্রভাবশালী এ নেতাকে পুলিশি কায়দায় আদালতে আসতে দেখা যায়নি।

আদালত চত্বরে যখন তিনি প্রবেশ করেন, পরনে ছিল ধবধবে সাদা পোশাক, পায় সাদা স্নিকার্স। চেহারার জৌলুস জানান দিচ্ছিল ৫৬ দিন বেশ বহাল তবিয়তেই কোথাও গা ঢাকা দিয়েছিলেন শাহজাহান। এমনকি আদালতে তার হাঁটা পথে পুলিশের দূরত্ব ছিল কমপক্ষে এক গজ দুরে। একেবারে রাজকীয় কায়দায় আদালতে প্রবেশ করেন শেখ শাহজাহান।  

আদালতের রায়ের পর বসিরহাট কোর্ট থেকে সাংবাদিকদের চোখে ধুলো দিয়ে এক প্রকার গ্রিন করিডোর করে কলকাতার ভবানী ভবন রাজ্যের পুলিশ সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয় তাকে। পুলিশের কাছ থেকে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।