ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন

ঢাকা: বাংলাদেশের স্বার্থ বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে নন ট্যারিফ বাধা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টারা।

তারা বলছেন, আমরা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যাতে আরও বাড়ানো যায়, যাতে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারি। সেটা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।

রোববার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সরকারের আরও তিন উপদেষ্টা, বেশ কয়েকজন সচিব, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমে আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটাব। এজন্য আমেরিকা থেকে আমাদের দরকারি কোনো কিছু ইমপোর্ট করতে হয়, আমরা এলএনজি এবং জিনিস ইমপোর্ট করব। সো দ্যাট তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরেকটু দৃঢ় হয়। আর আমাদের এখান থেকে যা ইমপোর্ট হয় আমরা করব। আমরা এখানে যে অ্যাকশন নেব আমাদের নিজস্ব গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি এবং অন্যান্যরা যাতে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করে প্রতিযোগীদের তুলনায়। আমেরিকানরা মনে করে বাংলাদেশি পণ্য বেটার, অন্য দেশের তুলনায়। সেটাকে আমরা আরেকটু .... বাড়াব প্রাইভেট সেক্টরে। অন্যান্য সার্ভিস আমরা আমেরিকা থেকে আনতে পারব।

তিনি বলেন, নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার অনেক কিছু থাকে। এই যে ৫২, ৫৪ শতাংশ সংখ্যা আমরা দেখি, এর বাইরে অফিসিয়াল রেগুলেটরি অনেক রকম সুবিধা- অসুবিধা থাকে। আমেরিকার ব্যবসায়ীরা যাতে এগুলোর সম্মুখীন না হয়, এগুলো যত দ্রুত সম্ভব আমরা যুক্তিযুক্ত করব, এটাকে আরও স্মুথ করব। যাতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও প্রসার লাভ করে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমদানি করার ব্যাপারে আমেরিকা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তাতে করে অন্যান্য বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তি চীন, ইউরোপ তারাও এর বিপক্ষে কতগুলো পদক্ষেপ নেবে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা পুরো জানি না। পুরো বিশ্বের অর্থনীতি কোথায় যাবে, বড় ধরনের নাড়াচড়া খাবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আস্তে আস্তে সব কিছুই মাথায় রাখছি। আপাতত আমরা আমাদের প্রধান যে রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় বাজার সেটা রক্ষা পায়, আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যাতে আরও বাড়ানো যায়, যাতে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারি। আমরা মনে করি সেটা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, যে করটা বাড়ানো হলো, এটা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে তাদের ব্যক্তিদের ওপর পড়বে। মধ্যস্বত্বভোগী যারা বাইং হাউজ তাদের ওপর পড়বে। আমাদের ওপর কতটুকু পড়বে, তার একটা বোঝাপড়া হতে হবে। আমরা এটুকু জানি শ্রমিকের মজুরির দিক থেকে আমরা একেবারে সর্বনিম্ন জাগায় আছি, এর থেকে আর কমানো যাবে না এখানে। কাজেই করের বাড়তি বোঝা অন্য জায়গাতেই শিফট হবে। আমাদের ওপর আর বেশি বোঝা চাপানো যাবে না। এটা সবাই বুঝবেন, আমেরিকার যারা পলিসি ঠিক করেন তারাও জানেন আমাদের দিক থেকে এর থেকে বেশি শ্রমিকদের খরচ কমানো যাবে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক এবং এটাকে অ্যাপ্রোপ্রিয়েটলি যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা কীভাবে উপস্থাপন করব। সে লক্ষ্যে আজ আমাদের আলোচনা। আমাদের ট্যারিফ রিলেটেড মানে নন ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা যেগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক, আমরা সেগুলোকে রোহিত করার বা পুনর্মূল্যায়ন করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।  

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের আমদানি বেশ বাড়ানো সম্ভব। আমরা তার উপায়গুলো খুঁজছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যাতে করে বিষয়টি আমরা নিষ্পত্তি করতে পারি।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আজকে যে আলোচনাটি হয়েছে, সেখানে আমরা সকলেই এক সমতলে আছি। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজনটিভ অফিসে কথা বলেছেন। সেখান থেকেও আমরা যে সংকেত পাচ্ছি, সেটা আমাদের চিন্তাধারার সঙ্গে সাযুজ্য আছে। সুতরাং আমরা মনে করছি, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে আমাদের প্রজেকশনগুলো চূড়ান্ত করে ফেলতে পারব। এই কথাগুলো অনেক দিন ধরে আলোচনা হয়ে আসছে আমাদের ভেতরে, যা আপনারা আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর একটা প্রতিফলন দেখতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৫
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।