ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

নরসিংদীর অসহায় মানুষের পাশে ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
নরসিংদীর অসহায় মানুষের পাশে ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব 

ঢাকা: করোনা মহামারির মধ্যে মোটরসাইকেল ট্যুর করার সুযোগ খুব একটা না হলেও থেমে থাকেনি ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব নরসিংদী (ইয়রাআরসি) কার্যক্রম।  

প্রতিষ্ঠার এক বছরে সংগঠনটি সাংগঠনিক, সামাজিক, মানবিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও সুখ-দুখের মধ্যে দিয়ে নরসিংদীর মানুষের পাশে এগিয়ে এসেছে।

নিজস্ব উদ্যোগ এবং ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব উদ্যোগের সারা বছর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করেছে সংগঠনটি।  বুধবার (২০ অক্টোবর)সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।  

জানা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যে ক্লাবের সদস্যরা নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিদিন অন্তত পক্ষে প্রতিটি সদস্য একটি করে মাস্ক বিতরণ করেছে টানা আট মাস এই কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। নিজস্ব উদ্যোগে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ, মাদ্রাসার ছাত্রদের চুল কাটার জন্য ইলেকট্রিক ট্রিমার, ছিন্নমূল এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে খাতা কলম, বই পুস্তক বিতরণ করেছে। শুধু তাই নয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে এক বছর আগে ক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। দেশে করোনা বেড়ে গেলে ক্লাবের উদ্যোগে করোনা মহামারি প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়।

সংগঠনটির এক বছরের পথ চলায় এখানেই থেমে থাকেনি অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে ক্লাবের উদ্যোগে গরিব এবং ভিটেমাটি হারা মানুষের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। করোনা যখন দিশেহারা দেশ ঠিক সেই সময়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে সংগঠনটি। রমজান মাসে নিজস্ব উদ্যোগে রোজাদারদের এবং মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের ইফতার বিতরণ এবং ক্লাবের উদ্যোগে করোনা মহামারিতে সম্মুখযুদ্ধ চিকিৎসক এবং পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ইফতার বিতরণও ছিল উল্লেখযোগ্য।

সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নরসিংদী শহরের প্রবেশ মুখ এবং বাসাইল, ভাগদী চৌয়ালা,শাপলা চত্বরের বিভিন্ন স্পিড ব্রেকার মারকিং করে সংগঠনটি। এর সুফল নরসিংদীবাসী জনগণ যারা এই পথে যাতায়াত করে তারাই ভোগ করছেন। এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যদি দুর্ঘটনার হাত থেকে কোনো মানুষ বেঁচে যায় তাহলে নিজেদেরকে সার্থক মনে করবে সংগঠনটির নেতারা।

ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব নরসিংদীর ওয়ারিয়র আহমেদ নাফিজ ইফতেখার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সংগঠনটির পক্ষ থেকে সারাবছরই সামাজিক কাজ অব্যাহত রেখেছি। সমাজের সবচেয়ে অবহেলিতদের পাশে আমরা আছি। আমরা চাই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ এগিয়ে আসুক। তিনি আরো বলেন, ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব নরসিংদী নিজস্ব উদ্যোগে পলাশ উপজেলার পারুলিয়ায় গ্রামে মারকাজুল উলুম দেওয়ান শাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিম শিশুদের চুল কাটার জন্য আমরা একটি ইলেকট্রিক ট্রিমার উপহার দেই। চুল কাটার পিছনে প্রতিমাসে মাদ্রাসার ১৫০ জন এর ৫ হাজার টাকার মতো খরচ আছে যা এই ট্রিমার ব্যবহার করার কারণে মাদ্রাসার সাশ্রয় হয় এবং মাদ্রাসা এই টাকায় মাদ্রাসার বিভিন্ন কাজে বর্তমানে ব্যয় করতে পারছে, হয়তোবা এই টাকায় ২ বস্তা চাল তারা অতিরিক্ত কিনতে পারছে প্রতি মাসে এতে তাদের সাশ্রয় হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আনন্দের মধ্য দিয়ে একটি বছর পার করেছি আমরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমাদের চায়ের রাজধানী সিলেট ট্যুর, মাওয়া ফেরিঘাটে ইলিশ টুর, গাজীপুরে ডে লং ট্যুর এবং পার্বত্য জেলা এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, সাজেক রাঙামাটি, বান্দরবান, সিন্দুকছড়ি ট্যুর। ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব নরসিংদী প্রথমবারের মতো এক বছরপূর্তি উপলক্ষে ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন এবং শীতকালে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। নাফিজ বলেন, নরসিংদী জেলায় প্রথম বাইকার হিসেবে আমাদের দুই জন সদস্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া টিটি টুর সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বাইকের হিসেবে টিটি সম্পন্ন করে। নরসিংদী জেলার প্রথম বাইকার হিসেবে আমাদের দুইজন সদস্য ৬৪ জেলা ১৩ দিনে ভ্রমণ করেছে যা আমাদের জন্য গর্বের। শুধু তাই নয় করোনা মহামারি এই সময়ে আমাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ নরসিংদী প্লাটিনাম অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়। এই একটি বছরের পরিশ্রম সার্থকতা পেল ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব কর্তৃক সম্মাননা প্রাপ্তির মাধ্যমে।  

ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব নরসিংদী প্রথমবারের মতো ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের প্রতিবছরের কার্যক্রমের ওপর সম্মাননার মাধ্যমে আমাদেরকে সম্মানিত করায় আমরা চির কৃতজ্ঞ বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই অর্জনের পেছনে যাদের অবদান সবচাইতে বেশি তাদের কথা না বললেই নয়, আসলে আমরা সব সময় তাদেরকে শ্রদ্ধা এবং সম্মানের কথাটুকু সর্বশেষ এই উল্লেখ করি কিন্তু আজকের আমাদের এই প্রাপ্তির পেছনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেকেই কাজ করে গেছেন তাদের জন্য রইল অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা। নরসিংদী ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের অথরাইজ ডিলার জমজম মটরসকে আমরা জানাই বিশেষ ধন্যবাদ সর্বদা আমাদের পাশে থাকার জন্য। বিশেষ করে বিশেষ কথা আসলে বিশেষ মানুষকেই বলতে হয়, আমাদের সবার প্রিয় কাজী সাঈফ আল খালেদ জোনাল ইনচার্জ এসিআই মটরস। যার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা মাধ্যমে আমাদের ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব নরসিংদীর আজকে সারা বাংলাদেশে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় এবং ভালোবাসার মানুষ এসিআই মটরসের জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেনকে। যিনি সার্বক্ষণিক আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন এবং আমাদের সব কর্মকাণ্ডে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব নরসিংদী বিশেষভাবে একজন মানুষের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে যে আমাদের সবার মধ্যমণি একজন সাদা মনের মানুষ বাইকারদের প্রতি সর্বদা আন্তরিক, আমাদের সব কর্মকাণ্ডে আমাদেরকে সর্বদা উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়ে এসেছে, আমাদের সব কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় সুব্রত রঞ্জন দাস।  

আমি বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি, ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাংলাদেশ এবং এসিআই মটরস লিমিটেডকে আমাদের সব বাইকারদের জন্য এত সুন্দর একটি প্লাটফ্রম তৈরি করে দেওয়ার জন্য যেখানে আমরা সবার ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
এসএমএকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।