ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

বালিকা বিদ্যালয়ের এ কী হাল!

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৪
বালিকা বিদ্যালয়ের এ কী হাল! সংস্কারের অভাবে এমইউ বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে

বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলার ৫৮ বছরের পুরোনো আমতলী এমইউ (মফিজ উদ্দিন) বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। ছাদ এবং দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

 

দীর্ঘদিন ধরে একটি নতুন ভবনের দাবি তুললেও তা এখনও নির্মাণ হয়নি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে। এদিকে বালিকা বিদ্যালয় হলেও নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর। এতে মাদকাসক্তরাসহ যে কেউ ঢুকে পড়ছে বিদ্যালয় সীমানায়। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলীর শিক্ষানুরাগী সাবেক এমএলএ মরহুম মফিজ উদ্দিন তালুকদার ১৯৬৫ সালে আমতলী শহরের প্রাণকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে আমতলী এমইউ (মফিজ উদ্দিন) বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ৬টি ভবনের মধ্যে সবগুলোই ব্যবহারের অযোগ্য এখন।  

জানা গেছে, ১৯৬৬ সালে ৪ কক্ষের একতলা মূল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে রয়েছে একটি হলরুম, প্রধান শিক্ষকের বসার কক্ষ, অফিস, শিক্ষক মিলনায়তন ও শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব। ভবনটি নির্মাণের পর কোনো ধরনের সংস্কার না করায় বর্তমানে ভবনের ছাদে ফাটল ধরে অনেক জায়গা দিয়ে ধসে পড়েছে।  

বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ায় মূল ভবনের ভেতরে কেউ বসতে পারে না। এই ভবনের একটি কক্ষে রয়েছে শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব।  

পানি পড়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে তা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। প্রধান শিক্ষক, অফিসকক্ষসহ সকল রুমের একই অবস্থা। ভবনের অধিকাংশা দরজা জানালা খুলে পড়েছে।  

মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে ১৯৭২ সালে ২ কক্ষের একটি টিনশেডের ক্লাশ রুম নির্মাণ করা হয়। সংস্কারের অভাবে ৫ বছর পূর্বে সেটি তালাবদ্ধ করে রাখ হয়েছে।  

এর পাশেই রয়েছে দোতালা টিনশেডের ১টি  বিজ্ঞানাগার ভবন। সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় এটিও বর্তমানে তালাবদ্ধ। ছাউনির টিন দিয়ে পানি পড়ায় বিজ্ঞানাগারের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।  

মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের জন্য রয়েছে দুটি ভবন। একটি তিন কক্ষের আরেকটি দুই কক্ষের। পূর্ব পাশে রয়েছে দোতালা পাঁচ কক্ষের একটি ভবন।  
তিন কক্ষের ভবনটি ১৯৮৭ সালে নির্মাণ করা হয়। দুই কক্ষের ভবনটি নির্মাণ করা হয় ২০০৪ সালে। পূর্ব পাশের দোতলা পাঁচ কক্ষের ভবনটি নির্মাণ করা ২০০২ সালে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবন তিনটির দেয়াল এবং ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দরজা জানালা খুলে গেছে। মেঝে গর্ত হয়ে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে।  

শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাদে ফাটল ধরায় বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুয়ে পানি পরে ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বসে ক্লাস করতে পারে না।  

এছাড়া পূর্ব পাশের দোতালা ৫ কক্ষের ভবনটিতে নির্মাণের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অতি অল্প সময়ে ভবনটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনটি অধিক নাজুক হওয়ায় ভয়ে কোনো শিক্ষার্থীরা দোতালায় উঠতে চান না।

বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রয়েছে প্রধান শিক্ষক এবং নৈশপ্রহরীর জন্য দুটি টিন সেডের ঘর। এগুলোও সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বসবাসকারীরা নিজেদের টাকায় কোনোরকম ঠিক করে বসবাস করলেও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।  

বিদ্যালয়টি নারী শিক্ষার হলেও স্থাপনের পর থেকে নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর।  
শহরের প্রধান সড়কের পাশে নির্মিত হওয়ায় এবং সড়ক থেকে দেখা যাওয়ার কারণে নারী শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় সংকোচ বোধ করে।  

এছাড়া সীমানাপ্রাচীর না থাকায় অবাধে গরু-ছাগল প্রবেশ করে মাঠ নষ্ট করছে। রাতে বিদ্যালয়ের মাঠে ঢুকে পড়েন মাদকসেবীরা, তারা আড্ডাও দেন নিয়মিত।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নওশীন আক্তার ও ঝিনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয় ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদ, দেয়াল ও পিলারের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বর্ষ মৌসুমে ছাদ চুয়ে পানি ঝরে।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবরার বলেন, আমরা ভয়ের মধ্যে দিয়ে ক্লাস করি। বর্ষা কালে ছাদ চু্ইঁয়ে পানি পড়ার কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম কবীর বলেন, বিদ্যালয়ের ৬টি ভবনের মধ্যে সবগুলো এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। এবিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সেলিম মাহমুদ বলেন, আমতলী এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ভবন সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।