ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্বে থাকার পরও সাদা দলের প্যাডে নির্বাচনে ‘অনিয়ম ও জালিয়াতির’ উল্লেখ দ্বিচারিতা ও দ্বিমুখী আচরণের পর্যায়ে পড়ে বলে দাবি করেছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিঙ্ক (ইউটিএল) নামে শিক্ষকদের একটি সংগঠন।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস এ কথা বলেন।
সংগঠনটি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সাদা দলের বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার এক বিবৃতিতে ডাকসু নির্বাচনে নজিরবিহীন জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।
বিপরীতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিঙ্ক বলছে, নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্ব পালন করার পর 'জালিয়াতি ও অনিয়ম' প্রসঙ্গটি দ্বিচারিতা ও দ্বিমুখী আচরণের পর্যায়ে পড়েছে।
তারা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং ১৮টি হলের মধ্যে ১৬টি হলের প্রভোস্ট সরাসরি সাদা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জনই সাদা দল ও ২ জন পিংক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের অধিকাংশই সাদা দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত। নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্ব যখন সাদা দলের শিক্ষকদের হাতে ছিলো; তখন নিজেদের বিবৃতিতে দাবি করা নির্বাচনে 'জালিয়াতি ও অনিয়ম' প্রসঙ্গটি এটি দ্বিচারিতা ও দ্বিমুখী আচরণের পর্যায়ে পড়েছে। এতে করে বিবৃতি দানকারী শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আতাউর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ছোটখাট কিছু ত্রুটি ছাড়া, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে কিংবা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে পুরো নির্বাচনে এমন কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ইউটিএলের নজরে আসেনি।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার দুই সপ্তাহ পর কিছু ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষকদের সংগঠন নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা শুরু করেছেন। কিছু বক্তব্য ও বিবৃতি ইউটিএলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে; এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাধীন রায়কে অসম্মান এবং গণতান্ত্রিক অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস ব্যতীত আর কিছুই নয়। শিক্ষার্থীদের রায় স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, তারা ভীতিকর রাজনৈতিক সংস্কৃতি, প্রোপাগান্ডা এবং একদলীয় মানসিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সক্ষম।
তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পর কিছু সংগঠনের উত্থাপিত বায়বীয় অভিযোগমালা শিক্ষার্থীদের স্বাধীন রায়কে অস্বীকার করার নামান্তর। এটি শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তা, স্বতন্ত্র নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক অর্জনের প্রতি এক স্পষ্ট আঘাত।
এমন পরিস্থিতিতে তিনটি দাবি জানিয়েছে ইউটিএল। দাবিগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উত্থাপিত অযৌক্তিক প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পর কোনো ধরনের হ্যারেসমেন্ট কিংবা তাদের ম্যান্ডেট কেড়ে নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২. ঢাবি সাদা দলের শিক্ষকগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে পরিচালিত নির্বাচনকে সাদা দলের প্যাডে বিবৃতি দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। এ ধরনের বিবৃতি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাই।
৩. ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এরই মধ্যে দেশ বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এমন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যেসব তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, এই বছরের ২৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিঙ্ক শিক্ষকদের সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে ৫৩ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। সদস্যসচিব হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন দায়িত্ব পান। কমিটিতে সাতজন যুগ্ম আহ্বায়ক, পাঁচজন যুগ্ম সদস্যসচিব এবং ৩৮ জন সদস্য রয়েছেন।
এফএইচ/জেএইচ