ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে মহাষষ্ঠী বা দেবীবোধনের মাধ্যমে এ বছরের শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক পর্ব রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) আরম্ভ হতে যাচ্ছে।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী ও মহানবমী পূজা শেষে ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) মহাদশমী পূজার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জগন্নাথ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত জুলাই বিপ্লব তথা ছাত্র-জনতার এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমরা বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধশালী এক বাংলাদেশ গড়ার মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের দুর্গাপূজা। তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে পাঁচ দিনব্যাপী এ আয়োজনের প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।
প্রাধ্যক্ষ বলেন, এর মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, রক্তদান কর্মসূচি, বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও বিশুদ্ধ খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।
দেশের বর্তমান বাস্তবতায় জগন্নাথ হল প্রশাসন এবারের দুর্গোৎসবে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়া উপলক্ষে জগন্নাথ হল প্রশাসনের আয়োজনে ও নবনির্বাচিত হল সংসদের নেতাদের পরিচালনায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ শীর্ষক এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উদযাপিত হয়েছে। এছাড়াও পূজা সংক্রান্ত সভাগুলোতে আমার সভাপতিত্বে আবাসিক শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ ও তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সুবিবেচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন অর্থাৎ উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের সার্বক্ষণিক ও কার্যকর তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জগন্নাথ হল প্রশাসন হল উপাসনালয়ে তথা পূজামণ্ডপ থেকে শুরু করে সমগ্র হল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কারিগরী সহায়তা দিয়ে আমাদের পাশে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, শাহবাগ থানা, অনসার বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও এনএসআইসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সি। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়মিতভাবে জগন্নাথ হলের পূজা সংক্রান্ত নিরাপত্তা ইস্যুতে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য আমরা জগন্নাথ হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, ‘দেবীর গজে আগমন ও দোলায় গমন’ এই উপজীব্যকে ধারণ করে এবারের শাস্ত্রীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হচ্ছে। আমাদের সনাতন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সকল রীতি, আচার, প্রথা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল হয়েই আমরা এই সর্বজনীন পূজা আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি হল প্রশাসন হলের অভ্যন্তর ও তৎসংলগ্ন পারিপার্শিক এলাকাতে পূজায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক প্রতিমা-দর্শন ও শিশু-কিশোরদের বিনোদনমূলক স্থাপনায় পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করার নিমিত্তে সবার জন্য অবশ্য অনুসরণীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসম্বলিত লিফলেট বোর্ড বড় আকারে হলের প্রত্যেক প্রবেশদ্বারে ও উপাসনালয় সংলগ্ন স্থানে সহজে দৃশ্যমান করে টানানো হয়েছে।
প্রাধ্যক্ষ বলেন, এর মধ্যে সমগ্র জগন্নাথ হল প্রায় ২৩০টি সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে; প্রবেশমুখে মেটাল ডিটেক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে। ছোট শিশুদের দুগ্ধ সেবনের জন্য বিশেষ নিরাপদ একটি কর্নার স্থাপন করা হয়েছে; কোনো ধরনের পটকা বা আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ স্টিকার সরবরাহ করা হয়েছে। পলাশীস্থ ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আমরা হলের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি অগ্নিনির্বাপল মহড়ার সফল আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হল সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই সকল ধর্ম-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে আসছে।
এফএইচ/এইচএ/