ঢাকা, রবিবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিক্ষা

বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলে আমরণ অনশনের হুমকি খুবি শিক্ষার্থী নোমানের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০৮, অক্টোবর ১৮, ২০২৫
বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলে আমরণ অনশনের হুমকি খুবি শিক্ষার্থী নোমানের

খুলনা: বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আমরণ অনশন করার হুমকি দিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম.এ. শিক্ষার্থী মোঃ মোবারক হোসেন নোমান। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে মোঃ মোবারক হোসেন নোমান বলেন, গত ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে “আম পাড়ার” অজুহাতে ডিএসএ অফিসে ডেকে মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয়। তাদের আম চোর, পারিবারিক শিক্ষা-দীক্ষা নাই, সন্ত্রাসী, মব ইত্যাদি বলে অপমানিত করেন। এই অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে আমরা প্রশাসনিক ভবনের পাশে প্রতীকীভাবে আম পাড়তে যাই। সেখানে কিছু শিক্ষক আমাদের গালিগালাজ ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে আমাকে ধাক্কা মারতে মারতে একজন শিক্ষক পড়ে যান। এই ক্ষুদ্র ঘটনাকেই বিকৃতভাবে প্রচার করে আমার বিরুদ্ধে ৩২৩/৫০৬/৪৪৭/৩২৫/৩০৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি বলেন, এ মামলায় গত ১৩ মে ২০২৫ তারিখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় ২০-২২ জন পুলিশ সদস্য তিনটি গাড়ি নিয়ে এসে আমাকে আটক করে নিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশেই আমাকে জেলে পাঠানো হয় এবং রিমান্ড আবেদন করা হয়। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে এটি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পড়ার টেবিল থেকে কারাগারে, কলমের জায়গায় হাতে হ্যান্ডকাফ।

মোবারক হোসেন নোমান আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে- “সাক্ষ্যপ্রমাণ ও ভিকটিমের চিকিৎসা সনদ পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি অনধিকার প্রবেশসহ হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আঘাত করেনি। ” সে কারণে ৪৪৭/৩২৫/৩০৭ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়নি এবং পুলিশ বিজ্ঞ আদালতে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। মামলার তদন্তে আমার বিরুদ্ধে গুরুতর কোন অভিযোগ পাওয়া না গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমার স্নাতক সনদ বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ, এবং মাস্টার্সের শেষ টার্মে অংশগ্রহণে বাতিল করে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হতো তাহলে পুলিশ অবশ্যই চাজর্শিট দিত এবং আদালতে আমার বিচার হতো। কিন্তু পুলিশ আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পেয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। পুলিশের রিপোর্টই বলে দিচ্ছে যে আমি নির্দোশ। তাহলে আমি কেন শাস্তি ভোগ করবো? এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার কোন বক্তব্য গ্রহণ না করেই আমার বিরুদ্ধে সম্পুর্ণ অন্যায়ভাবে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তের কারণে আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। আমার শিক্ষাজীবন ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই মায়ের গহনা বেচা টাকা দিয়ে মিথ্যা, অসত্য, হয়রানিমূলক মামলা চালাতে হচ্ছে। মাষ্টার্স শেষ করতে না পারায় আমার শিক্ষাজীবন ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে অন্যায় না করেও আমি সংশ্লিষ্ট শিক্ষককের সামনে সশরীরে নতমস্তকে ক্ষমা চেয়েছি। তিনি আমাকে ক্ষমাও করেছেন। এছাড়াও লিখিতভাবেও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আবেদনে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

নোমান বলেন, আন্তরিকভাবে দুঃখ এবং ক্ষমা চাওয়ার পরও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার উপর সদয় হনননি। বরং গত ১৫ অক্টোবর ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে শর্ত সাপেক্ষে আমার সনদ বাতিল স্থগিত করা হয়। শর্তগুলো হলো- ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কখনো প্রবেশ করতে পারবো না এবং কোন পেশাদার বা সামাজিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবো না’। এছাড়া ‘সনদ উত্তোলনের পূর্বে নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পের উপর মুচলেকা প্রদান পূর্বক সনদপত্র উত্তোলন করতে হবে’। উক্ত শর্ত লঙ্ঘন করলে আমার স্নাতকের সনদপত্র পুনরায় বাতিল কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এই চিঠি হাতে পাওয়ার পর আমি এবং আমার পরিবার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। শিক্ষাজীবন শেষ করতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। চোখ বুজলেই দেখি হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আমাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আমাকে খুনী, ডাকাত, চোরদের সাথে একই কক্ষে রাখা হয়েছে। এধরণের স্বপ্ন আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। আমি মনে করি অতীতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৫ দফা ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিলাম। যার মধ্যে ছিল বেতন-ভাতা হ্রাস, আবাসিক সংকট নিরসন, চিকিৎসা সেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি। এই আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণেই ২০২১ সালে দুইজন ছাত্র ও তিনজন শিক্ষককে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়। আমি ও ইমামুল ইসলাম সোহান ভাই এই অন্যায়ের প্রতিবাদে টানা ৮ দিন অনশন করি। অবশেষে তৎকালীন প্রশাসন বাধ্য হয় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে। কিন্তু সেই সময়ের কিছু প্রশাসনের অনুসারী আজও প্রতিহিংসার আগুন বয়ে বেড়াচ্ছে। তারা নেপথ্যে থেকে আমার সুনাম নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয় ও নীরবতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। যাতে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়।

আমি প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টার নিকট দাবি জানাতে চাই যে- আমার বহিস্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার, মাষ্টার্সের শেষ টার্মের পরীক্ষা সমাপ্ত করতে দিতে হবে এবং আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। যদি আমার ন্যায্য দাবি না মানা হয় তাহলে আমি ক্যাম্পাসের প্রধান গেট শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণের সামনে আমরণ অনশন করবো। কারণ এছাড়া আমার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। আর আমরণ অনশনের কারণে আমার যদি মৃত্যু হয় তার সকল দায় খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, রেজিষ্টার মহোদয় এবং ছাত্র বিষয়ক পরিচালককেই নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২ মে ক্যাম্পাসে সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক মোঃ হাসান মাহমুদকে মাথায় আঘাত করার অভিযোগে শৃঙ্খলা বোর্ডের ২৭ তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম.এ. শিক্ষার্থী মোঃ মোবারক হোসেন নোমানকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়। একই সাথে তার স্নাককের সনদ বাতিল এবং ক্যাম্পাসে আজীবন প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান। সে অন্যায় করেছে বলেই শৃঙ্খলা বোর্ডের ২৭ তম সভায় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

 

 

এমআরএম

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।