জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের চার দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
১২ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকাল দশটায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম জাতীয় পতাকা এবং প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন। উপাচার্য বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী ভাষণে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষ সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় এখন ৪৫ বছরে পর্দাপণ করে পরিণত হয়েছে। জ্ঞান, বুদ্ধিকে শানিত করে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর তিনটায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে পুতুল নাচ এবং বিকেল পাঁচটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা তিনটায় পিঠামেলা এবং বিকেল পাঁচটায় নাটক মঞ্চায়ন করা হবে।
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) অ্যালামনাই ডে মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। দিনব্যাপী এ মিলনমেলায় সকাল নয়টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বর থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। এরপর সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে স্মৃতিচারণ, প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, ফানুস উড়ানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৭১ সালে মাত্র ৪টি বিভাগ, ১৫০ জন ছাত্র ও ২৩ জন শিক্ষক নিয়ে শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ এবং দু’টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।
১৯৬৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ঢাকার আদি নাম জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’।
১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক মফিজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন।
১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হলেও ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এটি একটি প্রকল্প আকারে পরিচালিত হয়।
১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট পাস করা হয়। এ অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয়’।
বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর দিকে জমির পরিমান ছিল ৭৪৮.১৪ একর। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ৫০ একর জমি দিয়ে দেওয়ায় বর্তমানে এর আয়তন ৬৯৭.৫৬ একর।
দীর্ঘ ৪৪ বছরের পথপরিক্রমায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণাসহ অন্যান্য শিক্ষা কর্মকাণ্ডে গৌরব রচনা করেছে। একটি উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রার প্রাক্কালে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষকদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
২০০১ সালে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল বায়েস প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এএসআর