কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরত্বে একটি প্রান্তিক এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শহরের কাছাকাছি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি থেকে বঞ্চিত।
বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্ম ও কৈশরকাল মধুর ছিল না। সব বাধা কাটিয়ে আধুনিক সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুরুতে (১৯৭৯ সাল) দু’টি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে ইবি। ধর্মতত্ত্ব অনুষদের অধীনে আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ এবং দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ছিল। এছাড়া ব্যবসায় অনুষদভূক্ত ছিল হিসাব বিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগ। চারটি বিভাগে ৩০০ জন ছাত্র ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে সব সংখ্যায়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটে ১২ হাজার ৮১২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪০৯ জন শিক্ষক অধ্যাপনা করছেন। ৪২৫ জন কর্মকর্তা, ২০৯ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৯০ জন সাধারণ কর্মচারী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সময় এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খোলা হয়েছে নতুন নতুন বিভাগ।
আগামীতে আরো আধুনিক বিভাগ খুলে দেশের কল্যাণে মেধাবী এবং যোগ্য গ্রাজুয়েট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। গত ২১ জুন শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে পাশ হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা (অগ্রানোগ্রাম)। এতে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৫৯টি বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ২টি নতুন ইনস্টিটিউট এবং একটি সমন্বিত ল্যাবও খোলা হবে।
একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্ণার, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, একুশ কর্ণার নির্মাণ করেছে প্রশসান। বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা বাড়াতে গত ২৪২ তম সিন্ডিকেটে অধ্যাপক শামসুজ্জামনকে বঙ্গবন্ধুর চেয়ারে নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিতর্ক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিমা খাতুন সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ান হওয়া এশিয়া কাপে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে। অ্যাথলেটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টুর্নামেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিত্ব করেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল, বাস্কেটবল, টেনিসে এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
নান্দনিক দ্বীতলবিশিষ্ট উপাচার্যের বাসভবনটি নজর কারার মতই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের প্রতি সুবিচার করে ক্যাম্পাসে রয়েছে ক্যাম্পাস ভিত্তিক সর্ববৃহৎ কেন্দ্রীয় মসজিদ। মসজিদটিকে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম ইসলামী নিদর্শনে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে চলতি অর্থ বছরে কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে ৫৪০ কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে স্বপ্ন পূরণের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশাব্যক্ত করেন প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বাংলানিউজকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অর্গানোগ্রাম পাশ হয়েছে। অর্গানোগ্রামে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে চলছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ তম জন্মজয়ন্তীতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে নতুন করে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাই। ”
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮
আরএ