ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে কেউ পার পাবে না: খুবি উপাচার্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯
রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে কেউ পার পাবে না: খুবি উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে কেউ পার পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুরে খুবির শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সিনেট কক্ষে ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ সমাবর্তন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

খুবির সাম্প্রতিক ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও উপাচার্য হিসেবে তার অবস্থান, গৃহীত পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাগুলোর কথা তুলে ধরেন।

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন সম্মানিত শিক্ষক কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলসহ বেশ কিছু অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে সম্প্রতি রেজিস্ট্রার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ দেখেছে এর মধ্যে অনেক বিষয়েই ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কিছু বিষয় প্রক্রিয়াধীন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবনের একটি ফ্লোরের কয়েকটি কক্ষে নির্মাণকাজের ত্রুটির অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনসহ টেকনিক্যাল ও দায়-দায়িত্ব নিরূপণ কমিটি গঠন করে। ইতোমধ্যে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কুয়েটের সিআরটিএস এর তত্ত্বাবধানে রেট্রোফিটিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব কাজের যাবতীয় ব্যয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য অর্থ থেকেই পরিশোধ করা হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ টিমের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ভবনটি এখন ঝুঁকিমুক্ত। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে যা এখনো ব্যবহার উপযোগী হয়নি। সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে যে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। তবে চলমান নির্মাণকাজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ব্যাপারে যদি অসঙ্গতি, ইচ্ছাকৃত ত্রুটি, অনিয়মের অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দুদক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দু’টি ভবনসহ নির্মাণকাজে অনিয়ম, ত্রুটি ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে দেখছে। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে চিঠি দিয়ে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নেওয়ায় কোনো বাধা আছে কিনা তা জানতে চেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে রয়েছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ দুদকের চিঠির জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে।  

শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, কবি জীবনানন্দ দাশ ভবনের নির্মাণ ত্রুটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট যাদের গাফিলতি রয়েছে সে ব্যাপারে একটি দায়-দায়িত্ব নিরূপণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রায় এক বছর যাবৎ তার কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ফলে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হয়েছে। এটা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।  

তিনি আরও বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, অপরাজিত হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ প্রায় সব ভবনেই বিদ্যুৎকাজে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস ছালাম দুদকে চিঠি দিয়েছেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন কাজও করছে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে যারা এর সঙ্গে যুক্ত তাদের সবাই আইনের আওতায় আসবে বলে কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে কেউ পার পাবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

উপাচার্য বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করতে সদয় সম্মতি দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী এবং ইউজিসির চেয়ারম্যান বিশেষ অতিথি থাকবেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। এবার সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্য ৩৯৭৩ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ২৪ জন গ্রাজুয়েটকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক দেওয়া হবে।  

এ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করবেন। তাই অনুষ্ঠানের মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য অক্ষুণ্ণ রেখে উপাচার্য আসন্ন সমাবর্তন সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এই সমাবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে এবং সার্বিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯
এমআরএম/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।