বানরের চুরি করে খাবার খাওয়ানোর প্রথা নতুন নয়। অনাদিকাল ধরেই তাদের চুরি বিদ্যার পারদর্শিতা চলে আসছে।
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া উদ্যানে শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে তেমন এক ঘটনার নীরব সাক্ষী হলো প্রকৃতি। পুরুষ সিংহ বানর এক ব্যবসায়ীর রেখে যাওয়া আনারসের স্তূপে হামলা চালিয়ে সেগুলোর কয়েকটা সাবাড় করতে দেখা গেছে। পর মুহূর্তেই সেই আনাসর ব্যবসায়ী চলে আসায় প্রাণে বানরটি পালিয়ে যায়।
অরণ্যঘেরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। তার ভেতর দিয়ে আঁকা-বাঁকা মাটির পথ চলে গেছে অরণ্যের দিকে। এই বর্ষায় সেই পথগুলো কিছুটা কর্দমাক্ত। এদিকে আবার বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব!
লাউয়াছড়া পথের একপাশে আগত পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য এক ব্যবসায়ী কিছু আনারস নিয়ে এসে বসার স্থানে ঢেকে রাখলেন। এ সময় তিনি অন্য একটি কাজ করতে গিয়েছেন একটু সামনে। এর মধ্যে হঠাৎ পুরুষ ‘সিংহ বানর’ এসে অতর্কিত হামলা চালায় তার ওই পসরায়।
ঢেকে রাখা আনারসগুলো থেকে টেনে একেকটা আনারস বের করে দিব্যি সাবাড় করে দিতে থাকে। একেবারের মানুষের মত করেই বানরটি হাতে ধরে আনারস খাচ্ছে। আর দাঁত দিয়ে তার চিবানোর শব্দ অন্যরকম এক ভালোলাগা তৈরি করে। সেই বিরামহীন চিবুনিতে আছে অদ্ভুত রকমের বিস্ময়! বানরটির আশেপাশে পড়েছিল আসারসে টুকরো টুকরো অংশ।
তার রেখে যাওয়া পরসার দিকে একসময় আনারস ব্যবসায়ী চলে আসেন। আসতে আসতে দেখেন এক বানর তার আনারস সাবাড় করছে। ‘হেই’ ‘হেই’ শব্দে তিনি দ্রুত বানরটিকে তেড়ে আসতে থাকেন। তারপর আত্মরক্ষার্থে বানরটি যায় পালিয়ে। কিন্তু ততক্ষণে বেশ কয়েকটা আনারস চলে গেছে সেই বানরটির পেটে।
‘সিংহ বানর’ অপেক্ষাকৃত একটু বড় আকৃতির হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের গলার ওপরের দিকের মুখমণ্ডলের অংশে রয়েছে কেশরের শোভা। এই কেশরের উপস্থিতির জন্য এ প্রজাতির বানরের নামকরণ সিংহ বানর। সিংহ বানরের লেজের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের লেজ দেখতে শুকরের মতো। অন্য বানরের লেজ নিচের দিকে নোয়ানো থাকলেও এদের লেজ পিঠের দিকে উল্টিয়ে খাড়া করে রাখে।
এ প্রজাতির বানরগুলো দিবাচর এবং বৃক্ষবাসী। তবে এদের মাঝে মাঝে সমতল ভূমিতে বিচরণ করতে দেখা যায়। এদের খাদ্যতালিকায় ফল, মূল, কচি পাতা, কুঁড়ি, কীটপতঙ্গ, কাঁকড়া, পাখির বাচ্চা ইত্যাদি খায়। খাদ্যাভাবে কখনো কখনো শস্য খেতেও হানা দেয়। এদের ইংরেজি নাম Northern Pig-tailed Macaque। এদের গড় আয়ু ১০ থেকে ১২ বছর। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের লাল তালিকায় এ প্রজাতিটি সংকটাপন্ন।
বিবিবি/এএটি