ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পরিবারের ৭ জনই করোনায় আক্রান্ত হয়েও যেভাবে সুস্থ হলেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২০
পরিবারের ৭ জনই করোনায় আক্রান্ত হয়েও যেভাবে সুস্থ হলেন করোনাজয়ী শিশির চক্রবর্তী।

ঢাকা: করোনা ভাইরাস নামটি শুনলেই এখন প্রায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। আর আক্রান্ত হলে তো কথাই নেই, এই বুঝি মারা যাচ্ছি ভেবে মানুষ অন্য অসুখ-বিসুখও ডেকে আনে। তবে নারায়ণগঞ্জের একই পরিবারে সাতজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে, ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক বাড়িতেই চিকিৎসা নিয়ে এবং কিছু নিয়ম মেনে বর্তমানে সবাই সুস্থ হয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা সুস্থ হওয়ার পর সবাই যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই আতঙ্কিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় সচেতনতার সঙ্গে রোগটি মোকাবিলা করতে পারে এ লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন এ পরিবারের সদস্য নারায়ণগঞ্জ জেলার রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের কর্মী শিশির চক্রবর্তী।

শুক্রবার (৮ মে) বাংলানিউজকে শিশির চক্রবর্তী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে ওঠার বিষয়ে বিস্তারিত বলেন।

শিশির চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের পরিবারে আটজন সদস্য, তার মধ্যে সাতজনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হই। ১৩ এপ্রিল ঢাকায় আসগর আলী হাসপাতালে করেনা পরীক্ষা করাই। ১৫ এপ্রিল আমার জেঠুর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরপর কী করবো কোথায় নেবো চিন্তায় পরে যাই। এর মধ্যে আমার বাবা অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। হাসপাতালের নেওয়ার কথা শুনে জেঠু মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েন। ’

‘এরপর আমি বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমকে ফোন করে জানতে চাই ঢাকায় কোন হাসপাতালে ভর্তি করবো। মাসুম আমাকে বলে হাসপাতালের অবস্থা ভালো না, রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে না। বাড়িতেই চিকিৎসা করাতে হবে। তারপর আমি ফোন করি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. দেবাশীষ সাহাকে। তিনি সব শুনে আমাদের আশ্বস্ত করলেন বাসায় চিকিৎসা সম্ভব। যদি দরকার হয় তাহলে তিনি খানপুর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। ’

‘জেঠুকে বাসাতেই আইসোলেশানে রেখে চিকিৎসা শুরু করলাম। গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. ফারুক আহমেদ, ডা. এস চক্রবর্তী, ডা. ফজলুর রহমান, ডা. সালাউদ্দিনসহ সবার চিকিৎসা পরামর্শে খুব দ্রুত জেঠু সুস্থ হতে থাকেন। এর মধ্যে আমি সিটি করপোরেশনের হটলাইনে ফোন করে করোনা পরীক্ষার জন্য পরিবারের সবার নাম জমা দেই। ১৭ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআর থেকে লোক আসে, সবার নমুনা নিয়ে যায়। ১৯ এপ্রিল জেঠু ও কাকলী (গৃহ পরিচারিকা) ছাড়া আমাদের ছয়জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। ততদিনে বাসার অন্যদের জ্বর কমতে শুরু করলেও আমার ও মায়ের জ্বর কমছিল না। আমার জ্বর ১০৩ ডিগ্রি, সঙ্গে বমি এবং খাওয়া প্রায় বন্ধ। নাপা খেলেও জ্বর কমছে না, পাশাপাশি একটু পরপর বমি। এক দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে সময় কাটিয়েছি। রাতে ঘুম নেই। মনে হয় এই বুঝি আমার সব শেষ। আমার স্ত্রী মনিকা ও বাবা করোনা পজিটিভ নিয়েও আমার সুস্থতার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। শুধু আমার না, পরিবারের সবার জন্যই এখনো দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। ২০ এপ্রিল থেকে আমার শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করলো। আমার আবার রক্ত পরীক্ষা করা হলো। পুরানো লিভারের সমস্যা দেখা দিলো। ডাক্তারের পরামর্শে স্যালাইন ও বমির ইনজেকশন দেওয়া হলো। তাও ঠিক হলো না। আমাদের পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর ঢাকা আইইডিসিআর থেকে টেলিমেডিসিনের ডাক্তার মেহেদী হাসান ফোন করে সবার খোঁজ খবর নিলেন। সঙ্গে কে কী ঔষধ খাবো তা বলে দিলেন। আমার শরীরের অবস্থা শুনে আইইডিসিআরের ডা. মেহেদী ও ডা. ফজলু ভাই দিনে ৩/৪ বার ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। ’

তিনি বলেন, ‘২৫ এপ্রিল থেকে আমি একটু একটু করে সুস্থ হতে থাকলাম। এখন আমাদের পরিবারের সব সদস্য সুস্থ আছেন। সবার ভালোবাসা, আশীর্বাদ, দোয়ায় সাহস পেয়ে আমরা করোনা ভাইরাসকে জয় করতে পেরেছি। একটা কথা বলতে চাই, এটি কোনো ভয়ের রোগ না, কঠিন কোনো রোগও না। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই ঘাবড়ে যাবেন না। খুব বেশি সমস্যা না হলে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে যাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাহসের সঙ্গে এ রোগ মোকাবিলা করতে হবে। গরম পানি পান এবং গরম পানি দিয়ে কয়েকবার কুলকুচি করতে হবে। পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে। অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সবাই সতর্ক, সাবধান এবং ভালো থাকুন। ’ 

করোনাজয়ী শিশির চক্রবর্তী চিকিৎসক, শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু, প্রতিবেশী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতা, দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই, যারা তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২০
আরকেআর/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।