চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে রাজ্যটির রাজনৈতিক মহলেও এখন চর্চার বিষয় বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ বিষয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব সময় চাইবো বাংলাদেশে একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার থাকুক।
‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন একমাত্র শেখ হাসিনা। শেষবার তিনি যখন এখানে এসেছিলেন তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমিও ছিলাম। উনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল এবং আমি যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলাম তার আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। পার্সোনাল রিলেশন থেকেই আমি ওনাকেই বলবো, অল দ্য বেস্ট। ’
কলকাতার মেয়র আরো বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে। আমরা সব সময় চাই ভারত-বাংলাদেশ, দুই রাষ্ট্রেই ধর্মনিরপেক্ষতা ও বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। এটাতেই আমরা বিশ্বাসী। দুটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মধ্যেই বন্ধুত হয়। সন্ত্রাসবাদী হলে তার সাথে বন্ধুত্ব হতে পারে না। যেমনটা পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কোনো বন্ধুত্ব নেই।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার মতে, নিশ্চয়ই চাইবো বাংলাদেশের মানুষ তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিজেদের পছন্দের সরকারকে নির্বাচিত করুক। গণতন্ত্র বজায় থাকুক এবং সবাই গণতান্ত্রিক প্রয়োগ করুক। সেখানকার মানুষ যেরকম সরকার চাইবে সেই সরকার আসুক। যে দলই ক্ষমতায় আসুক বা যারাই সরকার গঠন করুক, বাংলাদেশের শান্তিটা ধরে রাখবে এবং ভারতের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্কটা বজায় রাখবে। এমন সরকার হোক।
এ বিষয়ে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রধান দুই দল তাদের নিজস্ব জোট নিয়ে নির্বাচনে নেমেছে। নির্বাচন সামনে তাই এই সময় প্রকাশ্যে কারুর পক্ষে বা বিপক্ষে বলা উচিত নয়। তবে আমি বঙ্গবন্ধুকে পছন্দ করি। এটাই আমার চাওয়া। চাওয়াটা আসে একটা প্রোগ্রেসিভ চিন্তাভাবনা থেকে। বঙ্গবন্ধু মানেই প্রোগ্রেসিভ ভাবনা আর শিল্পমানেই প্রোগ্রেসিভ চিন্তা। তবে আমি সব সময় মনে করি মানুষের একটাই ধর্ম
মনুষ্যত্ব। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আমি কোনো দিন পছন্দ করি না সে ভারতেই হোক বা বাংলাদেশে হোক।
৯০ দশকের বাংলা সিনেমার অভিনেতা জয় ব্যানার্জী। তিনি বলেন, আমার পূর্বপুরুষেরা বাংলাদেশি। কথায় আছে, যার আইতে সাল যাইতে সাল, সেই বরিশালের মানুষ আমরা। কলকাতায় যে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের খেলা হয়, সেখানে আমি কট্টোর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। পর্দার বাইরে, যখন যাত্রা করতে কাঁটাতারের লাগোয়া গ্রামগুলোয় যাই, বাবাকে ফোন করলে বাবা বলে দেশের মাটিটা একটু ছুঁয়ে আয়।
‘তাই আমি চাইবো, এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশে এমন সরকার আসুক যে বাংলাদেশ- ভারতের মৈত্রীটা সুদৃঢ় করবে। কারণ আমরা টাকার এপিঠ ওপিঠ। ’
জয় ব্যানার্জী বলেন, বাংলাদেশকে আমি আরও একটা কারণে ভালোবাসি যখন আমি বিদেশে যাই, এয়ারপোর্টে, বিভিন্ন দেশের মাটিতে যখন বাংলাতে অ্যানাউন্স হয়, তখন আমার নিজের মধ্যে একটা অনুভতি অনুভব করি। একটা গর্ব ফিল হয়। কারণ বাংলার ধারক-বাহক সেই বাংলাদেশ। তাই আমি চাইবো এই ধারাটা অক্ষুণ্ন থাকুক তাতে আমাদের গর্বটা বজায় থাকবে এবং যে উর্দুর বিপক্ষে বাংলাকে বাঁচাতে যুদ্ধ হয়েছিলো সেই দেশ যেন কোনোভাবেই উর্দু সমর্থনকারীর হাতে না যায়।
‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ্য মুজিবর...’ এই কালজয়ী গানের শিল্পী অংশুমান রায়ের ছেলে গায়ক ভাস্কর রায় বলেন, আমি একজন বাঙালি এবং অংশুমান রায়ের সন্তান হিসেবে সবার আগে চাইবো, বাংলাদেশে যে নির্বাচন আগামী ৩০ তারিখে (ডিসেম্বর) হতে চলেছে, সে নির্বাচন স্বাধীনভাবে হোক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে হোক। ’
‘পাশাপাশি আমি এও বলতে চাই, পশ্চিমবাংলার বাঙালিরা কিন্তু চিরকালই বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা আরও উজ্বল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। ’
দীর্ঘদিন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন বিদ্যুৎ দেবনাথ। তার মতে, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রে নির্বাচন। সেখানে গণতান্ত্রিক এবং জাতীয়তা রক্ষা করার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে শাসক হবে তাকেই চাই। কারণ মৌলবাদের জন্য কোনো রাষ্ট্র বা ভূগোল থাকে না। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকবো
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
ভিএস/এমএ