ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

‘সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানো সন্ত্রাসের চেয়েও বিপজ্জনক’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
‘সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানো সন্ত্রাসের চেয়েও বিপজ্জনক’

কলকাতা: ‘সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম হয় না। সন্ত্রাসে অর্থ জোগানো প্রকৃত সন্ত্রাসের চেয়েও বিপজ্জনক।

’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এমন বক্তব্য দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) নয়া দিল্লিতে ‘নো মানি ফর টেরর’ শিরোনামে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদীরা বারংবার নতুন নতুন পথ খুঁজে চলেছে, হিংসা ছড়ানোর জন্য। যুবসমাজের মগজধোলাই করে মৌলবাদের পথে ঠেলে দিচ্ছে এবং অর্থ সংগ্রহের মাধ্যম হিসাবে ডার্কওয়েব ব্যবহার করছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন সন্ত্রাসবিরোধী বৈঠকে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ এই মুহূর্তে বিশ্বশান্তি এবং সুরক্ষার জন্য বিপজ্জনক। কিন্তু আমি মনে করি, সন্ত্রাসের তুলনায় সন্ত্রাসের জন্য অর্থ জোগানো আরও ভয়ঙ্কর বিষয়। কারণ, সন্ত্রাসের জন্ম এবং লালন হয় এই অর্থ জোগানোর মাধ্যমে। এছাড়াও সন্ত্রাসের জন্য অর্থ জোগানোর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনও দেশ, ধর্ম বা গোষ্ঠীকে যুক্ত করা উচিৎ নয়। সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম বা দেশ হয় না। সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করতে ভারত সুরক্ষা পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজিয়েছি। অনেক উন্নত হয়েছে। ’

অমিত শাহ এরপরই প্রতিবেশি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে সন্ত্রাসের সঙ্গে লড়াইয়ের। তবে কিছু দেশ আছে যারা সন্ত্রাসকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এমন কিছু দেশকে জানি, যারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়, তাদের সুরক্ষা দেয়। সন্ত্রাসে অর্থ জোগায়। আমাদের সমবেত প্রচেষ্টা হলো- এই ধরনের শক্তি যাতে নিজেদের লক্ষ্যে কখনও সফল না হয়।

সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন অমিত শাহ। সেখানে দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়-সহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন তারা।  

ভারত ও বাংলাদেশ গত ৫০ বছর ধরে পারস্পরিক স্বার্থের জন্য ক্রমবর্ধমান নানা ইস্যুতে কাজ করে চলেছে। সেই প্রসঙ্গেও মতবিনিময় হয়েছে বলে জানা গেছে।

পরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে একটি টুইটে বলা হয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘নো মানি ফর টেরর’ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। উভয়ের মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সাধারণ নিরাপত্তা সম্পর্কিত ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসবাদী, দুটো আলাদা বিষয়। এই দুইয়ের বিরুদ্ধে লড়াইটাও আলাদা। একজন সন্ত্রাসবাদীকে অস্ত্র দ্বারা নিরস্ত্র করা যেতে পারে, কিন্তু সন্ত্রাসবাদ হলো ব্যক্তিবর্গ এবং সংগঠনের নেটওয়ার্ক। তাই সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার জন্য একটি বৃহত্তর, অতিসক্রিয়, পদ্ধতিগত জবাব প্রয়োজন। আমরা যদি আমাদের নাগরিকদের নিরাপদে রাখতে চাই, তবে সন্ত্রাস আমাদের দুয়ারে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হবে না। অবশ্যই সন্ত্রাসের পিছু নিতে হবে।  

এসময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা বিশ্বকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত দুই দিনব্যাপী (১৮-১৯ নভেম্বর) এই সম্মেলন চলতি বছর তৃতীয় বর্ষে পা দিলো। দুই দিনব্যপী এই সম্মেলনে বাংলাদেশ-সহ ৭৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ৪৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।  

তবে এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে। অন্যদিকে, আমন্ত্রণ জানানো হলেও চীন এই সম্মেলনে যোগ দেয়নি বলে জানা গেছে।  

এর আগে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দু’টি হয়েছিল প্যারিস এবং মেলবোর্নে। এবার সেই সম্মেলন হচ্ছে দিল্লিতে। যেসব দেশ থেকে সরকারি কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থা জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা করে, তাদের একঘরে করাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। সেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতেই আগ্রহী ভারত।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
ভিএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।