ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

খবরের উৎস সোশ্যাল মিডিয়া!... হুমকিতে, আস্থাসংকটে মূলধারা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
খবরের উৎস সোশ্যাল মিডিয়া!... হুমকিতে, আস্থাসংকটে মূলধারা ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট-২০১৬

বিশ্বের ৫১ শতাংশ অনলাইন পাঠক এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে খবরের উৎস হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। প্রতি ১০ জনে এক জন (১২%) তো এই মাধ্যমটিকেই খবরের মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে।

বিশ্বের ৫১ শতাংশ অনলাইন পাঠক এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে খবরের উৎস হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। প্রতি ১০ জনে এক জন (১২%) তো এই মাধ্যমটিকেই খবরের মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে।

আর খবর খুঁজে পাওয়া, পড়া কিংবা দেখা আর খবর শেয়ার করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ক হয়ে উঠেছে ফেসবুক।

রয়টার্সের ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট-২০১৬ এসব তথ্য দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ২৬টি দেশের ৫০ হাজার অনলাইন গ্রাহকের ওপর জরিপ চালিয়ে এসব তথ্য বের করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমটি। যা ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট- ২০১৬ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।

তাতে দেখা গেছে সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোর উত্তরণে সারা বিশ্বেই প্রকাশকরা ব্যবসার দিকে এক বড় ধরনের ঝামেলায় পড়ে গেছেন। মোবাইল ফোনকে খবর পাওয়া বা পাঠের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণে অনলাইন বিজ্ঞাপনকেও পাঠক প্রত্যাখ্যান করছে।     

ফলে অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো সার্বিকভাবে বিপদগ্রস্ত। আর তার পেছনে সামাজিক মাধ্যমের বেড়ে ওঠাই দায়ী।

রয়টার্স তার জরিপে দেখিয়েছে সামাজিক মাধ্যম নারীদের জন্য আর তরুণদের উল্লেখযোগ্য হারে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের এক চতূর্থাংশের বেশি (২৮%) বলেছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই তারা খবর প্রথম জানে কিংবা শোনে। সেখানে টেলিভিশনকে উৎস হিসেবে বলেছে ২৪ শতাংশ।

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে খবরে ঢোকা কিংবা পাঠের হার বেড়ে যাওয়ার মানেই হচ্ছে ঠিক যেখান থেকে খবরটি উৎসারিত কিংবা যে মাধ্যম খবরটি সংগ্রহ, তৈরি ও প্রকাশ করেছে সেখানে পাঠক কমছে। যুক্তরাজ্য ও কানাডায় নিউজ ব্র্যান্ডের কাছে এখন পাঠক পৌঁছাচ্ছে অর্ধেকেরও কম। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে অন্যের তৈরি খবর বিপণন যারা করছে (এগ্রিগেটেড ও ডিস্ট্রিবিউটেড) তারাই হয়ে উঠছে বেশি জনপ্রিয়। ব্র্যান্ড কেবল তখনই চোখে পড়ে যখন কেউ নিউজ পোর্টালে সরাসরি ঢোকে। যার সংখ্যা এখন মোট পাঠকের মোটে এক চতূর্থাংশ।

বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে টেলিভিশন এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে আছে ঠিকই কিন্তু মোটের ওপর টেলিভিশনের দর্শক কমেই চলেছে। বিশেষ করে যুবক শ্রেণি সময় করে নিউজ বুলেটিন শুনবে, তেমনটা আর ঘটছেই না। ডিভাইসের দিক থেকে খবর পাঠের কিংবা দেখার জন্য স্মার্টফোনের ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। রয়টার্স দেখিয়েছে তাদের জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের অর্ধেকের বেশি (৫৩%) মোবাইল ফোনে খবর দেখা, পড়া বা শোনায় অভ্যস্ত। এই সেদিনও যে কম্পিউটার, ট্যাবলেটের কথা বলা হচ্ছিলো তাও এখন পড়ন্ত। কম্পিউটারে ব্রাউজিং কমেছে অনেক আগেই, ট্যাবলেটেও কমছে।

অনলাইনে পাঠক পয়সা দিয়ে খবর পড়বে তেমনটা এখনো ভাবা যাচ্ছে না। রয়টার্সের জরিপ দেখাচ্ছে ইংরেজি ভাষাভাষির বিশ্বে মোটে ৯ শতাংশ পাঠক পয়সা দিয়ে খবর পাঠে আগ্রহী।

অ্যাড ব্লকিং (বিজ্ঞাপণ আটকে দেওয়া) অ্যাপের কারণে অনেক পাবলিশার্সের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। জরিপের আওতাধীন দেশগুলোর মধ্যে এই অ্যাপসের ব্যবহার ১০ শতাংশ (জাপান) থেকে ৩৮ শতাংশ (পোল্যান্ড) পর্যন্ত রয়েছে। এদের অধিকাংশই একবার অ্যাপসটি ডাউনলোড করে নিলেই পাচ্ছে তার সুবিধা। আর এটাতো বলাই হয়, একবার ডাউনলোড করে নিলে তার ব্যবহার চলতেই থাকে। অনলাইনের মানুষগুলো তখন আর আগের অবস্থায় ফিরে যেতেই চায় না।

স্মার্টফোনে যারা খবর দেখছেন তাদের মধ্যে এই মূহূর্তে ৮ শতাংশ অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করলেও জরিপে অংশগ্রহণকারী এক তৃতীয়াংশই বলেছেন, তারা শিগগিরই নিজেদের ফোনে এই অ্যাপস ডাউনলোড করে নেবেন।

প্রকাশক ও প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলো অনলাইন নিউজে এখন ভিডিওর ওপর জোর দিচ্ছে, তা এই ব্যবসায়িক কারণেই। তবে পাঠকদের বক্তব্যে কিছু ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। তিন-চতূর্থাংশ (৭৮%) পাঠকই বলেছেন এখনও তারা টেক্সটের ওপর নির্ভর করতে চায়। ৪১ শতাংশ বলেছে তারা খবর পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আর ভিডিওতে প্রথমেই যে বিজ্ঞাপন এসে পড়ে তাতে বিরক্তির কথা জানিয়েছেন ৩৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

জরিপে অনলাইনে খবরের ওপর আস্থা অনাস্থার বিষয়টিও এসেছে। আর তাতে দেখা গেছে ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের তাদের মাধ্যমগুলোর খবরে সবচেয়ে বেশি (৬৫%) আস্থা। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে গ্রিস (২০%)। আর প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সংবাদ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যতটা আস্থা তার চেয়ে সংবাদকর্মীদের ওপর আস্থা কম বলেই জানিয়েছেন পাঠকরা।

জরিপ দেখেছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক খবর আর খবরের সংখ্যা বাড়ানোর একটি চেষ্টা রয়েছে যা সার্বিকভাবে খবরের মান ক্ষুণ্ন করছে, খবর থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে মূল তথ্য, চ্যালেঞ্জিং দিকগুলো। খবর উপরিতল দিয়ে চলে যাচ্ছে। ঘটনার গভীরে যাওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন সংবাদ-কর্মীরা।

মিডিয়া কম্পানিগুলো এ অবস্থায় কিছু চটকদার, সুড়সুড়ির কনটেন্টে পাঠক বাড়ানোর চেষ্টায় রত। কিন্তু এতে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের দীর্ঘ ঐতিহ্য ও নিজেদের তৈরি সুনামই হারিয়ে ফেলছে।

জরিপের আওতায় যেসব দেশ আনা হয় সেগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক, পোল্যান্ড, গ্রিস, তুরস্ক, কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ব্রাজিল।

বাংলাদেশ সময় ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।