গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান ইসরায়েলি অবরোধ, লাগাতার বিমান হামলা ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে গাজার হাসপাতালগুলো কার্যত অকেজো হয়ে পড়ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জানায়, উপত্যকার হাসপাতালগুলোয় ওষুধের ঘাটতি এখন ‘ভয়ানক ও নজিরবিহীন পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ ও সহিংসতার কারণে চিকিৎসা সেবা কার্যত থমকে গেছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবিক সংস্থা ও দাতা রাষ্ট্রগুলোর প্রতি জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।
আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না, মুক্তিপ্রাপ্তরাও সংকটে
ইসরায়েল সম্প্রতি গাজা থেকে আটক করা ৮০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় তাদের চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা প্রতিদিন মৃত্যু গণনা করছি, কিন্তু জীবন বাঁচাতে আমাদের হাতে কিছুই নেই। এমনকি ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা সার্জারির জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক উপকরণও শেষ হয়ে গেছে।
নতুন করে প্রাণহানি, ধ্বংসস্তূপের নিচে অসংখ্য মানুষ
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলায় অন্তত ১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর আগের দিন, গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকায় চালানো ধারাবাহিক বিমান হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ৩৫ জন, আহত হন আরও ৫৫ জন। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ৮০ জন মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাণহানি ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে, আহত ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলের টানা হামলায় এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে ৫০ হাজার ৮৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭২৯ জন। তবে গাজা সরকারের মিডিয়া উইং এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা বহু মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আর কোনো আশা নেই বলেই তারা ধারণা করছে।
মানবিক করিডোর খোলার দাবি
এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও গাজায় এখনও মানবিক করিডোর পুরোপুরি চালু হয়নি। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানির প্রবেশ অত্যন্ত সীমিত, যা স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেঁচে থাকার লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণ মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা জরুরি
গাজার স্বাস্থ্যখাতকে ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে এখনই জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে বলে দাবি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের। অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি, মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১:১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৫
এমজে