ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নিখোঁজ কিউজেড৮৫০১

‘মৃত্যুই’ আগের প্লেনে জায়গা দেয়নি বাবা-মেয়েকে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪
‘মৃত্যুই’ আগের প্লেনে জায়গা দেয়নি বাবা-মেয়েকে! ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: কথায় বলে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে?’। এই কথাটায় বিশ্বাস থাকলে এর বিপরীত ‘মারে আল্লাহ রাখে কে?’ কথাটায়ও বিশ্বাস রাখতে হবে।

অন্তত এয়ার এশিয়ার কিউজেড ৮৫০১ ফ্লাইটের দুর্ভাগা এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক ও তার কন্যাশিশুর করুণ গল্প শুনলে।

ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে পারিবারিক সফরে সিঙ্গাপুরে ফিরছিলেন চই চি ম্যান নামে ওই ভদ্রলোক। সঙ্গে দুই বছর বয়সী ফুটফুটে কন্যাশিশুসহ স্ত্রী ও অপর এক ছেলে সন্তান। চারজনেরই একই ফ্লাইটে উড়াল দেওয়ার কথা।

কিন্তু একই ফ্লাইটে চার সিটের ব্যবস্থা করতে না পারায় চি ম্যান স্ত্রী ও ছেলেকে আগের ফ্লাইটে পাঠিয়ে দেন। তাদের দুঃশ্চিন্তা করতে না বলে জানিয়ে দেন, তিনি আদরের কন্যাকে নিয়ে পরের ফ্লাইটেই বিমানবন্দরে তাদের সঙ্গে মিলবেন।

কিন্তু বর্হিগর্মন লাউঞ্জে ঢোকার আগে ছেলে আর স্ত্রী কি বুঝতে পারছিলেন কন্যাকোলে চি ম্যানের এই হাসিমুখ শেষবারের মতো দেখা, এই হাত নাড়ানো শেষ বারের মতো। হয়তো বুঝতে পারেননি। বুঝতে পারেননি বলেই হয়তো ‘পরের’ ফ্লাইটের জন্য চি ম্যানকে রেখে এসেছেন।

চি ম্যান কোলজুড়ে থাকা আদরের কন্যাকে নিয়ে এয়ার এশিয়ার কিউজেড ৮৫০১ ফ্লাইটে চেপে বসেন। ততক্ষণে সিঙ্গাপুর গিয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে কী আনন্দ করবেন, কোথায় কোথায় ঘুরবেন তাই ভাবছিলেন। তারপর?

তারপর রোববার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড়াল দেওয়া এয়ার এশিয়ার সেই ফ্লাইটটির সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে গেলেন তিনিও। হয়তো একেবারের না ফেরার দেশে। প্রিয় কলিজার টুকরো মেয়েকে বুকে নিয়েই।

রোববার ভোরে উড়াল দেওয়ার পর ফ্লাইটটি সকাল ৭টা ২৪ মিনিটের পর থেকে সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিলো ফ্লাইটটির। মঙ্গলবার সকাল (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্তও উড়োজাহাজটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

হংকং বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের ইয়র্কশায়ারের হালের নাগরিক চি ম্যান পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছিলেন। কাজ করছিলেন ইন্দোনেশিয়ার একটি ইলেক্ট্রনিক ম্যানুফেকচারিং ফার্মে।

স্টিভ হ্যায়লার নামে চি ম্যানের এক সহকর্মী সাংবাদিকদের বলেন, আমি জেনেছি ও (চি ম্যান) পরিবারকে নিয়ে একসঙ্গে সিঙ্গাপুরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু একই ফ্লাইটে চারটি টিকিটের ব্যবস্থা করতে না পেরে ছেলে ও স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছে।

স্টিভ বলেন, এটা খুবই মর্মান্তিক। তার কন্যাসহ সে কোথায় আছে আমরা জানি না। তবে অনেক ভালো থাকুক সে ও তার কন্যা।

ইয়র্কশায়ার থেকে চি ম্যানের এক প্রতিবেশী সাংবাদিকদের জানান, চি ম্যানের বাবা-মা ব্রিটেনে বসবাসরত আরেক সন্তানের সঙ্গে কথা বলে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন। সেখানে তারা পুত্রবধূ ও নাতির সঙ্গে মিলিত হবেন।

সুরাবায়ায় বসবাসরত দোনি নামে চি ম্যানের এক ভাগনে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সবসময় মানুষকে সাহায্য করতেন, কারণ তিনি খুবই যত্নশীল মানুষ ছিলেন। কেউ যদি অসুস্থ হতো, কারও যদি কিছু দরকার পড়তো, এমনকি অর্থসংকটে পড়লে আমার মামাকে সেখানে দেখা যেতো।

মামা যেন প্রিয় মেয়েকে নিয়ে ভালো থাকেন সেজন্য সবার কাছে প্রার্থনা চান ভাগনে দোনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।