এদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, যতোটা বলা হচ্ছে ততোটা খারাপ কথা তিনি বলেননি।
জাতিসংঘে আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশন ট্রাম্পের বর্ণবাদী বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুর্ভাগ্যজনক বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত আফ্রিকান মিশন তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছে।
বিবৃতিতে তারা ট্রাম্পকে নিজের অন্যায় অবস্থান থেকে সরে আসার আহবান জানান এবং ক্ষমা চাইতে বলেন। তবে ক্ষমা প্রার্থনা কেবল আফ্রিকানদের কাছে নয়, সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অফ্রিকান বংশোদ্ভূত সব মানুষের কাছেই চাইতে হবে।
ট্রাম্পের এহেন বক্তব্যের কথা প্রচার হওয়ার পরপরই জাতিসংঘে নিযুক্ত আফ্রিকান দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতগণ এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়ে বলেন, আফ্রিকা ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষদের তাদের গায়ের রঙ এবং তাদের জন্মস্থানগত পরিচয়ের ভিত্তিতে হেয় ও খাটো করতে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতায় আমরা উদ্বিগ্ন।
বিশ্বব্যাপী যেসব মানুষ এবং দলমতপথ নির্বিশেষে সর্বস্তরের যেসব আমেরিকান ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন বিবৃতিতে তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার কারা ও অভিবাসন নীতিকে ঢেলে সাজানোর জন্য হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এক বৈঠক ডাকেন। তখন সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের একজন বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজি থাকলে হাইতি এল সালভাদর ও আফ্রিকান দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের সুরক্ষাদানের ব্যাপারে একটি সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব। ঠিক তখনই ট্রাম্প বলে ওঠেন: ‘এখানে আমরা কেন গুহ্যদ্বার দেশগুলো (‘শিটহোল কান্ট্রিজ’) থেকে এতোসব লোকজন নিচ্ছি?’
একথা বলেই থেমে থাকেননি ট্রাম্প। তিনি আফিকার কালো চামড়ার মানুষের চেয়ে নরওয়ের মতো উন্নত দেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে শাদা চামড়ার মানুষ আনার সুপারিশ করে বসেন।
উল্লেখ্য, আগের দিন বুধবারই নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে ট্রাম্পের এহেন অবমাননাকর উক্তি করার কথা ফাঁস করে দেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন।
ওই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ট্রাম্পের এহেন বক্তব্যে সেখানে ‘‘উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে পড়েন’’। সভাকক্ষে উপস্থিতদের মধ্যে সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও ইলিনয়ের ডেমোক্যাট সিনেটর ডিক ডারবিন উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প এসব কথা বলেছেন বলে পরে তারা দুজনই মিডিয়াকে জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী নিন্দা
ট্রাম্পের বক্তব্যকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে এর নিন্দা করে বলা হয় ট্রাম্পের এই বক্তব্য ‘চরম বর্ণবাদী’। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমেও নিন্দার ঝড় বইছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল শুক্রবার এক কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য ’বর্ণবাদ ও পরজাতিবিদ্বেষকে’ উস্কে দেবে। তার বক্তব্য ‘অতিশয় নীচ ও কদর্য’।
ট্রাম্পের মন্তব্য ঘিরে হাইতি, এল সালভাদর এবং আফ্রিকার দেশগুলোর মানুষেরা সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পের নিন্দায় মুখর। বাদ যাননি সেসব দেশের প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ নেতারাও। এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট সানচেস সেরেনও তাদের মধ্যে আছেন।
এমনকি নরওয়ের মানুষও ছেড়ে কথা বলছেন না ট্রাম্পকে। তারাও নিন্দা জানাচ্ছেন এহেন বর্ণবাদী মানসিকতার।
থর বেনসন নামের একজন টুইট করে তার প্রক্রিয়া জানিয়ে বলেন: ‘আমার পরিবার এসেছে নরওয়ে থেকে, এবং আমি আপনাদের বলছি, আমরা নরওয়েজীয়রা মনে করি ট্রাম্প হচ্ছে ‘বর্ণবাদের গুহ্যদ্বার’(‘রেসিস্ট শিটহোল’)। ’
‘গুহ্যদ্বার’ বলিনি: ট্রাম্প
হাইতি, এল সালভাদর ও আফ্রিকার দেশগুলোকে ‘গ্রহ্যদ্বার’ নাকি বলেননি, বিশ্বব্যাপী নিন্দা-সমালোচনার মুখে এখন এমনটাই দাবি করছেন ট্রাম্প।
তার দাবি, ‘শিটহোল’ বা ‘গুহ্যদ্বার’ তিনি বলেননি। তবে ‘আমি যে ভাষা ব্যবহার করেছিলাম তা খুবই রূঢ়’।
‘মিডিয়ায় যা এসেছে সবই বলেছেন ট্রাম্প’
ট্রাম্প অস্বীকার করলেও নিজ দলের সিন্টের লিন্ডসে গ্রাহাম হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে বলেছেন, মিডিয়ায় যা যা এসেছে, সব নোংরা-আবিল কথাই বৈঠকে বলেছেন ট্রাম্প। তার মতে, তিনি তখন ট্রাম্পকে মুখের ওপর উচিত জবাবও দিয়েছেন।
আর ডেমোক্রেট সিনেটর ডারবিনও একই কথা বলেন। তিনি এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে কখনোই কোনো প্রেসিডেন্ট এমন বর্ণবাদী, বিদ্বেষপূর্ণ ও কদর্য মন্তব্য করেননি। অথচ সেটাই করেছেন ট্রাম্প।
বাংলাদেশ সময়:১৪২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
জেএম