চীনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে বরাবরই সতর্ক ছিল ভারত। গত বছর গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার প্রাণহানির পর থেকেই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করে।
গ্যালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের আগে ভারতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য অংশীদার ছিল চীন। চীনের টেলিযোগযোগ সংস্থাগুলি ভারতে ৩জি এবং ৪জি সিস্টেম স্থাপন করেছিল। এদের মধ্যে হুয়াওয়ে ৫জি সিস্টেম ইনস্টল করার পদক্ষেপ নিচ্ছিল।
চীন কর্তৃক ভারতীয় সেনাদের উপর হামলার পর চীনা টেলিযোগযোগ সংস্থাগুলির ভবিষ্যত পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এ সময় সুরক্ষা উদ্বেগের কথা বলে ভারত টিকটকসহ কয়েক ডজন চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে।
দিল্লির টেলিযোগযোগ পরামর্শক ভি কে চেরিয়ান বলেন, আশঙ্কা হলো এ সব কোম্পানির কাছে এই প্রযুক্তির উৎস কোড রয়ে গেছে এবং তারা এটি যেকোনো জটিল পরিস্থিতিতে তাদের সুবিধার জন্য কাজে লাগাতে পারে বা আক্ষরিক অর্থে কিছু নেটওয়ার্কসহ গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক রেডিও নিউজ ম্যাগাজিন দ্য ওয়ার্ল্ডের মতে, সীমান্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই, ভারতীয় কৌশলবিদরা চীনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন। বর্তমানে চীনের উপস্থিতি পূর্বে মিয়ানমারের গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে শুরু করে দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিস্তৃত। এর পশ্চিমে রয়েছে পাকিস্তান।
আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক চুক্তি এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর মতো চীনা আধিপত্য বিস্তারকারী গ্রুপগুলিতে ভারত যোগ দেয়নি। ভারতের বিআরআইতে যোগ না দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই প্রকল্পটির লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও শক্তির নতুন নেটওয়ার্কে চীনের শক্তি আরো দৃঢ় করা। অন্য কারণটি হলো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) যেটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) দিয়ে চলে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ধ্রুভ কাতোচ বলেন, যেহেতু কাশ্মীর ভারতবর্ষের অংশ তাই আমরা কখনো সিপিসিকে সমর্থন করতে পারি না। এটি আমাদের সার্বভৌম অঞ্চল দিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, ভারতকে অবশ্যই পাকিস্তানের কৌশলগতভাবে অবস্থিত বন্দরে যাওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের বাঁধ, একটি রেলপথ এবং একটি রাস্তা নির্মাণসহ পাকিস্তানের চীনের বিআরআই কার্যক্রম সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।
চীন থেকে পিওকে দিয়ে গওয়াদারের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি চিন্তার বিষয় উল্লেখ করে ধ্রুভ কাতোচ বলেন, এই রাস্তাটি রক্ষার জন্য খুব বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সামরিক সেনা নিযুক্ত করা হয়েছে। তবে যা কেউ জানে না তা হলো খুব বড় সংখ্যক চীনা সেনারাও সেখানে নিযুক্ত রয়েছে। এই সৈন্যরা ইউনিফর্মে থাকে না তবে তারা চীনা রাষ্ট্রের সুরক্ষা ব্যবস্থার অংশ। আমি মনে করি যে, ভারতকে চাপে রাখতে চীন ও পাকিস্তান এই বিশেষ অঞ্চলে জোটবদ্ধ হয়েছে।
সূত্র: এএনআই
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২১
এমজেএফ