গত কদিন ধরে এত গরম পড়েছে যে, মাঝেমধ্যে ঠান্ডা কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস না খেলে শরীর যেন আর চলতেই চায় না। বিয়ে-শাদি বা যে কোনো অনুষ্ঠানে ঠান্ডা পানীয় থাকবে না এ কথা এখন কল্পনাই করা যায় না।
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই পশ্চিমা বিশ্বকে আমাদের অগ্রপথিক মনে করি কিন্তু আমরা সবাই কি জানি, আমেরিকা ও কানাডার অধিকাংশ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে কামল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস বিক্রয়ের মেশিন বাধ্যতামূলক ভাবে অপসারণ করা হয়েছে? অনেক ক্যাম্পাসে কামল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস বিক্রিও নিষিদ্ধ।
পাশের দেশ ভারতে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় কয়েকটি বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানির কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসে অত্যধিক মাত্রায় কীটনাশক পাওয়ায় মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও কেরালায় এসব পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধও করা হয়। ভারতে কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসের ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এসব পানীয় যে তিকর নয়, তা ওইসব কোম্পানিকে প্রমাণ করতে বলা হয়েছে।
এসব কোমল পানীয়তে কী থাকে? কোক মিক্সার বা পাউডার (কোকা পাওডার, সোডা, ফেভার, ইত্যাদির মিশ্রণ) ও আনুপাতিক পরিমাণ স্যাকারিন, কীটনাশক, ক্যাফেইন, রঙ, পানি।
এক গ্লাস কোমল পানীয়র মধ্যে মানুষের একটি দাঁত ডুবিয়ে রেখে দেখা গেছে , ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে দাঁতটি পানীয়র মধ্যে সম্পূর্ণ গলে মিশে গিয়েছে।
এসব কোমল পানীয়তে কীটনাশক মেশানো হয় এ কারণে, যাতে দীর্ঘ দিন বোতলে থাকলেও পানিতে কোনও ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, কীট বা পোকা না জন্মাতে পারে। তাছাড়া পানিতে থাকা জু-প্লাঙ্কটন ও ফাইটা প্লাঙ্কটন যেন বংশবিস্তার করতে না পারে।
এসব পানীয় খেলে কী হয়? নাড়ির ভেতরের শ্লেষ্মাঝিল্লি বা মিউকাস মেমব্রেন পচে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। নাড়ির সংকোচন-সম্প্রসারণ মতা কমে যায় এবং খাদ্য থেকে পুষ্টি শুষে নেওয়ার মতা কমে যায়, হজমমতা কমে যায়; বদহজম, ফুড পয়জনিং, গ্যাস্ট্রিক, ক্ষুধামান্দ্যসহ নানা অসুখ-বিসুখ হয়। স্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। অনেকের শরীরের ওজন বেড়ে ওবেসিটি হয়ে যায়। শরীরে চর্বি বা কোলেস্টরেলের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীরের ক্যালসিয়াম মলিউকুল গঠন প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। হাড় দুর্বল ও নরম হয়ে যায়। নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় নতুন শিশুর হাড় গঠনে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়, নতুন শিশু প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পায় না। এসব উপসর্গ থেকে কঠিন কঠিন সব অসুখ হয়।
এসব কারণে ডাক্তারের কাছে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, ফলে বিভিন্ন ডাক্তারি টেস্ট ও চিকিৎসায় প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। এতে কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস কোম্পানিগুলির সিস্টার কনসার্ন ঔষধ কোম্পানিগুলির প্রচুর লাভ হয়। কারণ যে সমস্যা তৈরি করে, সে-ই জানে তার ভালো সমাধান কী !
বিশ্বের বৃহৎ কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো এসব বিষয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির বহু চেষ্টা করেছে, কিন্তু বারবার বিভিন্ন দেশের সরকার ও আদালতের আদেশ তাদের বিপে গিয়েছে। লণীয় যে, তারা বার বার আদালতে গিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশে। আমারিকা, কানাডা এবং ইউরোপে তারা আদালতে যায়নি, কেননা সেখানে ধূম্রজাল সৃষ্টির কোনও সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি।
এই পানীয় কোম্পানিগুলো যেমন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, তেমনি তাদের প্রচারকৌশলও খুব সূক্ষ্ম। ফলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিকের প্রচারটি খুব সহজেই ঢাকা পড়ে যায়।
তথ্যসূত্র : বিবিসি নিউজ ইউকে ও সাউথ এশিয়া, ফ্রি লাইব্রেরি, হেলথ অ্যাফেয়ার্স, অ্যাসেস লাইব্রেরি, গ্লোবাল এক্সচেঞ্জ এবং অল বিজনেস ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০২১, অক্টোবর ০৫, ২০১০