মিষ্টি খাবার আর বেশি বেশি ফলের জুস খেলে দাঁতের ক্ষয় হয় সে কথা সবাই জানে। কিন্তু কিছু কিছু কাজ আপাতত নির্দোষ মনে হলেও এগুলো দাঁতের বড় ক্ষতির কারণ।
জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষকরা এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেছেন, শরীরচর্চায় দাঁতের ক্ষয় হয়। গবেষকরা দেখেছেন, শরীরচর্চার সময় অ্যাথলেটদের মুখে লালা (স্যালাইভা) জমে কম, আর (ক্ষার) অ্যালকালাইন জমে বেশি হারে। এতে অনিবার্যভাবেই দাঁতের ক্ষয় হয়। কারণ ক্ষারে দন্তমল বা প্ল্যাক (দাঁতের ওপরে জমে ওঠা সাদা নরম পদার্থ বিশেষ) জমে যা ওই ক্ষয় ত্বরান্বিত করে। এর বাইরেও আমরা প্রতিদিন যেসব কাজে অভ্যস্ত তার অনেকগুলোই দাঁত ক্ষয়ের কারণ হিসেবে দেখেছেন গবেষকরা। যেমন ধরুন চা পান।
চায়ের কতই না রকম ফের। বেড টি, রেড টি, গ্রিন টি, র’টি কিংবা গরুর দুধের চা! শীতের সকালে, কিংবা বাইরে ঠাণ্ডা থেকে ঘরে ফিরে এক কাপ গরম চা মনকে চনমনে করে দেয়। কিন্তু মনে রাখবেন ঠাণ্ডা বা গরম কোনো কিছুই খেলেই আপনার দাঁতে ক্ষয় হবে। দাঁতের ওপরে আঁচড় পড়ে যাবে। উপরিতলের এই আঁচড় খালি চোখে হয়তো চোখেই পড়বে না। কিন্তু দাঁতে তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গবেষকরা বলেছেন, দাঁত ডেন্টাইন নামের এক ধরনের হলদেটে পদার্থ দিয়ে তৈরি, যা এনামেল দিয়ে ঢাকা। আর দাঁত যখন হঠাৎ করে পরিবর্তিত তাপমাত্রার মধ্যে পড়ে যায় তখন এই এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তৈরি হয় ফাটল। সাধারণত এই ফাটলকে কসমেটিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সে ফাটল যতই গাঢ় হবে ততই সেগুলো ডেন্টাইনকে আক্রান্ত করার সুযোগ তৈরি হবে। তখন দাঁতে গরম কিছু লাগলেই এক ধরনের সংবেদনশীলতা তৈরি হবে। আর ধীরে ধীরে তা হয়ে উঠবে দাঁত ক্ষয়ের অন্যতম কারণ।
ঠাণ্ডা পানীয় আরও ঠাণ্ডা বা চিল্ড করতে বরফ কুচি বা টুকরো ব্যবহার কে না করে! কিন্তু এর মধ্য দিয়ে নিজের দাঁতের বারোটা নিজেই বাজিয়ে দিচ্ছেন সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকরা।
ব্রিটিশ ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক ড্যামিয়েন ওয়ামসলে বলেছেন, যখনই আপনি বরফ চুষে খাচ্ছেন, তখনই আপনার দাঁত তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনের প্রভাবের মধ্যে পড়ছে। আর এতে দাঁতে ফাটল ধরে যাওয়া অনেকটাই অনিবার্য।
সাঁতার কাটতে মানা নেই। কিন্তু মুখ খুলে অবশ্যই নয়। সুইমিংপুলে যখন সাঁতার কাটবেন তখনতো নয়ই। কারণ সুইমিংপুলের পানিতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত এই ক্লোরিন দাঁতে লাগলে দাঁতের ক্ষয় হবে। কারণ ক্লোরিন পানিতে মিশলে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড সৃষ্টি হয়। এই এসিড দাঁতে লাগলে উপরিতলের শক্ত কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দাঁত তার রং হারায় আর ধীরে ধীরে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করে। শরীরে চুলকানি দেখা দিলে অ্যান্টি হিস্টামিনের ব্যবহার সাধারণ। এতে মুখ শুকিয়ে যায় আর শুকনো মুখ দীর্ঘস্থায়ীভাবে দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কেন্ট এর কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট স্টিফেন ফস্টারের মতে, শুকনো মুখ দাঁতের মাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাড়ি ক্ষয় হলে দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, নড়বড়ে হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে তা পড়েও যেতে পারে।
স্টিফেন বলেছেন, চিনিমুক্ত গাম চিবালে মুখ শুকিয়ে যাওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
মুখে সুতো ছেঁড়া কিংবা সুঁইটিকে দাঁতে চেপে ধরা বাঙালি নারীর অভ্যাস। এতে সামনের দাঁতে বড় ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছেন লন্ডনের কিংস কলেজের ওরাল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক টারা রেনটন। আর দাঁতে নখ কামড়ানো কিংবা কোনো প্যাকেট ছিঁড়তে দাঁতের ব্যবহারে নিষেধ করেছেন ম্যানচেস্টারের ডেন্টাল হেলথ কেয়ারের চিকিৎসক নিকোলা ওয়েন। তবে ছোট ছোট ফিলিংয়ের মাধ্যমে এ ধরনের ক্ষতিগুলো কাটিয়ে ওঠা যায় বলে জানিয়েছেন তারা।
খাবার খেয়ে দাঁত মাজতে হবে, কিন্তু খাওয়ার পরপরই নয়। লন্ডনের ফ্রেশ ব্রেথ সেন্টারের ডেন্টিস্ট ড. ফিল স্টেমারের মতে, খাওয়ার সময় যে এসিড ও চিনি উৎপাদন হয় তা মুখের এনামেলের সংরক্ষণ ক্ষমতা দুর্বল করে। খাবার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে এনামেল তার ক্ষমতা ফিরে পায়। কিন্তু খাবার খাওয়ার পরপরই যদি কেউ ব্রাশ করে তাহলে এনামেল শক্ত হয়ে ওঠার আগেই ধুয়ে যায়। খাবারের পরে দাঁত ব্রাশের জন্য অন্তত আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন ড. স্টেমার।
তবে সবচেয়ে উত্তম পরামর্শ হচ্ছে খাবারের আগেই দাঁত ব্রাশ করে ময়লা পরিষ্কার করে নেওয়া যাতে মুখে সেগুলো না যেতে পারে। আর খাবারের পরে মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২৩
এএটি